যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা ১৫ দিন আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ
মোরশেদ আলম,যশোর মঙ্গলবার দুপুর ০২:২৬, ৩ নভেম্বর, ২০২০
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আল্ট্রাসনো বিভাগের ডাক্তার প্রথমে অসুস্থ এবং পরে মারা যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার রাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট সৈয়দ সাজ্জাদ কামাল (৫৪) এর মৃত্যু হয়।
তিনিই একমাত্র এই বিভাগের ডাক্তার ছিলেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে পুনরায় আল্ট্রাসনো বিভাগ কবে চালু হবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে করে প্রতিদিন হাসপাতালে আগত রোগীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অবশ্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার রায়ের তত্ত্বাবধানে ইসিজি ও এক্স-রে বিভাগ চালু রয়েছে।সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড়। দরজায় তালা ঝুলছে। লেখা রয়েছে ‘ডাক্তার সাহেব ছুটিতে আছেন’। এ কারণে বাধ্য হয়ে রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিকে ছুটতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের খরচ একশ’ ১০ থেকে দুশ’ ২০ টাকা। একই আল্ট্রাসনো ক্লিনিকে করতে গেলে খরচ হচ্ছে সাড়ে সাতশ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
সদর উপজেলার দেয়াড়া গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ আবেদা সুলতানা জানান, হাসপাতালে নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে আসেন তিনি। বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। সোমবার হাসপাতালের গাইনি বিভাগে আসেন ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার তাকে একটি আল্ট্রাসনো করাতে বলেছেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আল্ট্রাসনো কক্ষের সামনে গিয়ে দেখেন তালা ঝুলছে। কেউ বলতে পারেনি কবে বা কখন এ বিভাগ খোলা হবে। কোনো উপায় না দেখে সাতশ’ টাকায় বাইরে থেকে আল্ট্রাসনো করাতে বাধ্য হন। তার মতো একাধিক রোগী অতি দ্রুত হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীক কুমার রায় জানান, ১৯ অক্টোবর থেকে আল্ট্রাসনো বিভাগ বন্ধ রয়েছে। তবে, চালু আছে ইসিজি ও এক্স-রে বিভাগ।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আটটি ইসিজি ও ৮৫টি এক্স-রে করা হয়েছে। অতিদ্রুত এ বিভাগ থেকে রোগীরা সেবা পাবেন।উল্লেখ্য, করোনা মহামারির মধ্যেও হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগ সচল রাখা ডাক্তার সৈয়দ সাজ্জাদ কামাল গত ১৮ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনা উপসর্গ থাকায় তিনি ১৯ অক্টোবর থেকে ছুটিতে যান। ২১ অক্টোবর করোনা পরীক্ষার জন্যে তিনি নমুনা দেন। নমুনা পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে।
২২ অক্টোবর তিনি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রংপুরে নিজ বাড়িতে চলে যান। এরই মধ্যে ২৩ অক্টোবর খুলনা থেকে তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ দেয়া হয়।বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৪ অক্টোবর রংপুর থেকে তাকে ঢাকার কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাসহ দু’দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু ক্রমাগত তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ২৭ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ অক্টোবর রাত দুটোর দিকে তার মৃত্যু হয়।