মেঘনায় র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হলো বস্তাভর্তি ফেনসিডিল, ফেক পেজেই মানহানী
মোঃ কামরুজ্জামান রবিবার রাত ০৮:২১, ২৬ এপ্রিল, ২০২০
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় গত ২২শে এপ্রিল মধ্য রাতে র্যাব-৪ অভিযান চালিয়ে মানিকারচর বাজারে সবজির পিকআপ থেকে উদ্ধার করে বস্তাভর্তি ফেনসিডিল, জব্দ করা হয় পিকআপ তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে উদাও ড্রাইভার।
অতিরঞ্জিত ফেসবুক স্ট্যাটাসে তোলপাড় শুরু হয় মেঘনা উপজেলায়। কথিত এক সাংবাদিক পরিচয়ধারী দৈনিক নওরোজ পত্রিকার নামে ভূয়া ফেসবুক পেজে উপজেলার উজানচর নয়াগাও গ্রামের মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে অভিযুক্ত দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়।
যেখানে বলা হয় সি.এন.জি চালক হতে রেন্ট-এ কারের ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন জাকির।
আটক হওয়া ওই ফেনসিডিল চালানের মূল হোতা বলেও উল্লেখ করা হয় ওই স্ট্যাটাসে। মেঘনা থানা সূত্র দিয়ে আরও লিখে যে, আটক হওয়া পিকআপের ড্রাইভার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জব্দকৃত মাদকের মালিক হিসেবে জাকিরের নাম বলেছেন।
এবিষয়ে ওই অভিযানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে মেঘনা নিউজ অনুসন্ধানী টীম। বেড়িয়ে আসতে থাকে চান্ঞ্চল্যকর সব তথ্য।
মেঘনা নিউজ-এর সাথে ফোনে কথা হয় নওরোজ পত্রিকার কর্তৃপক্ষের সাথে। জানা গেলো অফিসিয়াল পেজ ছাড়া আর কোন পেজ তাদের নেই এবং এরকম কোন সংবাদও প্রকাশ করেনি তারা। পত্রিকার নামে অন্যকেউ ফেসবুকে পেজ তৈরি করেছে এমন কোন তথ্য নেই নওরোজ কর্তৃপক্ষের তবে অন্যকেউ পত্রিকার নাম ব্যবহার করে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়। মেঘনা উপজেলায় কোন প্রতিনিধি নেই বলেও মেঘনা নিউজকে নিশ্চিত করে নওরোজ কর্তৃপক্ষ।
এবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় মেঘনা থানায়। কথা হয় অফিসার ইনচার্জ আঃ মজিদ সাহেবের সাথে, দিলেন সোজাসাপ্টা উত্তর।
এই পিকআপ যাচ্ছিলো চট্রগ্রাম, দাউদকান্দিতে র্যাবের চেকপোস্ট আছে জানতে পেরে মেঘনা হয়ে হোমনা দিয়ে যাওয়ার জন্য মেঘনায় প্রবেশ করে পিকআপটি।
মেঘনা থানা পুলিশের নিকট কোন পূর্বাবাস না থাকায় সবজিবাহী পিকআপ হিসেবে প্রাথমিক পুলিশি চেকপোস্ট পাড় হয়েও শেষ রক্ষা হয়নি এই মাদক চোরাচালান কারবারিদের।
র্যাব-৪ এর চৌকস টিম তাদের গতিপথ পরিবর্তনের খোঁজ পেয়ে মেঘনা উপজেলার মানিকারচর বাজার হতে পিকআপটি আটক করে বস্তাভর্তি ফেনসিডিল উদ্ধার করে। তবে, র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় ড্রাইভার এবং হেল্পার। তবে, এতে মেঘনা উপজেলার কেউ সম্পৃক্ত নয় বলেও জানান তিনি।
উজানচর নয়াগাও গ্রামের মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে এই মামলায় অভিযুক্ত উল্লেখ করে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ন ভুয়া এবং বানোয়াট।
তবে, এরকম কোন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলে কোন তথ্যনেই মেঘনা থানা পুলিশের নিকট। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও মেঘনা নিউজকে জানান তিনি।
এবিষয়ে মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনিও সাদামাটা জবাব দেন। তিনি বলেন, এসব সমাজের খারাপ মানুষের কাজ। তারা আমাকে হেয় পতিপন্ন করার জন্য এসব মিথ্যা নিউজ করে যাচ্ছে যার সাথে আমার কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
এবিষয়ে ওনার পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে মীমাংসা করে দেয়ার ব্যাপারে ঐ কথিত সাংবাদিক আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
এবিষয়ে নামধারী ঐ সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কথা বলেননি তিনি।
মোহাম্মদ জাকির হোসেনের মহল্লার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে মেঘনা নিউজ। সহজ-সরল আর উদার মনের মানুষ হিসেবেই জানে গ্রামের মানুষজন।
উল্লেখ্য যে, তিনি দীর্ঘদিন যাবত জাহিদ রেন্ট এ কার, জেট.এম এগ্রো ফার্ম, ভাই ভাই মৎস্য খামার, পাকিজা অটোস, আর.কে মটরস এর স্বত্বাধিকারী হিসেবে ব্যবসা করে আসছেন।
সম্প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় নিজ গ্রামে বিনামূল্যের বাজার এবং মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন জাহিদ রেন্ট এ কারের মালিক জাকির হোসেন।