মাদকাসক্ত মুক্ত জাতি চায় একুশে পদকপ্রাপ্ত জিয়াউল হক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ “সমাজ সেবায় একুশে পদক পেলেও মাদকের থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত জাতির মুক্তি চায়” -জিয়াউল হক
এস এম সাখাওয়াত রবিবার রাত ০৮:০৬, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
চলতি বছর সমাজ সেবায় একুশে পদক পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার সাদা মনের মানুষ দই বিক্রেতা জিয়াউল হক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই পদক পেয়ে শান্তি পাননি তিনি। কেননা শুধু সমাজ সেবা করে হাজার
জনকে বই দিয়ে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা, গৃহহীনদের গৃহ করে দেয়া, অভূক্তদের মুখে খাবার তুলে দেয়াতেই শান্তি পাননি। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে একুশে পদক পেয়েছি। এর আগে ২০০৬ সালে আমি সাদা মনের মানুষ
হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। তবুও আমি পুরোপুরি শান্তি পায়নি। যেদিন ভোলাহাট তথা সমগ্র বাংলাদেশ মাদকের কড়াল গ্রাস বা থাবা থেকে মুক্ত হবে সেদিন ধন্য হবো, গর্বিত হব, শান্তি পাবো।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার নিজ গ্রামে মুশরীভূজা ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের প্রতি মাদককে বিদায় করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ‘বেচি দই, কিনি বই’ শ্লোগানের রূপকার সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত জিয়াউল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আমাকে পদক তুলে দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে দুটি দাবীর কথা জানিয়েছিলাম। একটি মুশরীভূজা ইউসুফ আলী স্কুল এন্ড কলেজ জাতীয়করণ, অপরটি আমার জিয়াউল হক পাঠাগার সম্প্রসারণ করে নতুন ভবন তৈরি। তিনি দুটোই সাথে সাথে অনুমোদন করেছেন। এছাড়াও ভোলাহাট হতে রহনপুর রাস্তা নির্মাণ এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল বিলভাতিয়াকে কৃষি ইপিজেড করার দাবি জানানোর
প্রস্তুতি রয়েছে আমার। কেননা, ২২ কিলোমিটার রাস্তা যেতে যেখানে আধা ঘন্টা লাগার কথা সেখানে লাগে ২ ঘন্টা যা বহুদিনের জনদুর্ভোগ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুশরীভূজা ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটু মিয়া। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক চুটু, কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসগর আলী, মুশরীভূজা ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আফসার হোসেন, সাবেক শিক্ষক মো. শাহাজাহান আলী প্রমুখ।
জানা যায়, দই বিক্রির জমানো টাকা থেকে পাঠাগার, স্কুল-মাদরাসা নির্মাণ, অসহায় দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করেন জিয়াউল হক। আর এ সমস্ত কাজে তাকে সহযোগীতা করেন স্ত্রী ও সন্তানেরা। আর এই বিশেষ কাজের জন্য চলতি মাসের ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় জিয়াউল হককে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক মর্যাদাপূর্ণ সম্মান একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিকট পাঠাগার সম্প্রসারণ ও মুশরীভূজা ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকে জাতীয়করনের দাবি জানান জিয়াউল হক। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
অর্থাভাবে পঞ্চম শ্রেণীর পর পড়াশোনা করতে না পারা জিয়াউল হক দই বিক্রি করে জমানো টাকা থেকে পাঠাগার, স্কুল মাদরাসা এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাগারের পাশাপাশি এতিমদের পোশাক, শীতবস্ত্র, দুঃস্থ্যদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করছেন। এছাড়া গ্রামের বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষকে ১৪টি টিনের ঘর ও ১৪টি টিউবওয়েল স্থাপন করে দেন তিনি। এছাড়া ১৯৬৯ সাল হতে তিল তিল করে গড়ে তোলা জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগারে ২০ হাজারের উপরে বই রয়েছে। এসব বইয়ের অধিকাংশই তার দই বিক্রির টাকায় কেনা হলেও অনেকেই তার পাঠাগারে বই দিয়েছেন উপহার স্বরুপ। এখন ৯৫ বছর বয়সী জিয়াউল হকের ইচ্ছা ভোলাহাট উপজেলাকে
মাদকমুক্ত দেখা।