ঢাকা (সকাল ৯:৫৫) রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ ইং
শিরোনাম
Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দা কেড়ে নিলো ৪ জনের প্রাণ Meghna News শিয়া (ইয়েমেন) ও সুন্নির (হামাস) মধ্যে কার্যকর ঐক্য মুসলিম ঐক্যের প্রতীক Meghna News প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে রাফাহসহ সমগ্র গাজায় Meghna News হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারনেট ছাড়াই পাঠানো যাবে ছবি-ভিডিও-ডকুমেন্ট Meghna News সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, দায় কার? Meghna News প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে দাউদকান্দিতে আলোচনা সভা ও র‍্যালী Meghna News পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি : ডাকাত দলের সর্দার অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার Meghna News সাঘাটায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা Meghna News ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ গেল শ্রমিকের Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জ : তিন লক্ষ টাকা ইজ্জতের মূল্যে প্রবাসীর মুক্তি

বিবেক বোধ



সামনে কোরবানির ঈদ দোকানে কাপড় শেষ হয়ে গেছে। বাবা বলল তুমি বাজারে গিয়ে কিছু কাপড় নিয়ে আসো।আমিও ভাবলাম কাপড় এখন না দিলে বিক্রি করব কখন।বাবার কথামতো কেশ থেকে টাকা বাহির করে গুছিয়ে রাখলাম।পরের দিন সকালে বাজারের সব দোকানদার মিলে গঞ্জের হাটে যাবো।

পরের দিন সকালে বাজারের সকল দোকানদার মিলে গঞ্জের হাটের দিকে রওনা দিলাম। আমার সহপাঠী দোকানদার রফিক ভাই। খুব রসিক মানুষ সবসময় কথার মাঝে হাসি লেগেই থাকে।যেন কথা বললে মধু জরছে এত কথা বলার পরও লোকটি কোন রাগ করেনা। শুধু ভেসে যায় আর মানুষকে ভালোবাসেন, কখনো কাউকে সন্দেহ চোখে দেখে না। তার কথাগুলো শুনতে শুনতে গঞ্জের দিকে যাচ্ছি। সবাই কথা বলতে বলতে একসময় গঞ্জের হাটে পৌঁছে যাই।

গাড়ি থেকে নেমে একটি সিগারেট ধরে টানতে ছিলাম এমন সময় পিছন থেকে কেউ গেঞ্জি ধরে টানলো। ঘুড়ে দেখলাম ছয় বছরের একটা মেয়ে।বললো দশ টাকা দেন না ভাই। আমি বললাম দশ টাকায় কি হবে ? -ভাত খাবো।দশ টাকায় শুধু ভাত হয়? ভাত তো এমনি খেতে পারবে না -অল্প করে খাবো।কত টাকা হলে বেশি করে খাওয়া হবে? পঞ্চাশ টাকা।ভাত দশ আর তরকারি চল্লিশ টাকা।আমাকে পঞ্চাশ টাকা দিবেন ? -হুম দিতে পারবো।-এত টাকা দিবেন !! (চোখে মুখে বিস্ময়)তয় ভাত কিনা দেওয়া লাগবোনা,একটা উপকার করেন।-কি উপকার ? -ঐ টাকার চাউল কিনে দেন।বাসায় নিয়ে যাবো।মা ও বোন সবাই মিলে খাবো।-তোমার বাসায় কে কে আছে ? -মা বোন আর একটা ভাই। মা হাটবার পারেনা।বোন সংসারে কাজ করে।বড় ভাই চা এর দোকানে থাকে।আমি ভিক্ষা করি।- তোমার বাবা ?বাবার কথা মনে নাই।আমি যখন ছোট তখন চলে গেছে।পড়াশোনা কর না ? -পড়লে ভিক্ষা করতাম কখন ? ঠিকমতো দুবেলা-দুমুঠো খেতে পারিনা। এক কেজি চাউল আর কিছু ডিম কিনে দিয়ে বিদায় নিলাম। চার জনের সংসারে একদিন চলে যাবে। খুব অদ্ভুত ভাবে বেড়ে উঠে ওরা।খুব অল্প বয়সেই জীবনকে বুঝে নিতে শেখে। ছয় বছরে যথসম্ভব আমি কেজিতে পড়ি। এই বিকাল টাইমে Drawing করতাম। অবসরে ওটাই শখ ছিল। নিশ্চিন্তে Drawing করতাম। খাওন জুটবে কই থেকে এই চিন্তা অন্তঃত ছিলনা।“পড়লে খাওয়োন জুটবো কই থেকে” এই ধরণের প্রশ্নও মাথায় আসেনাই আমার।

দশ টাকায় আমিতো ছোটবেলায় কলম খাতা কিনেছি। আমার শিক্ষার উপকরণ। সে দশ টাকায় ভাত খুজে।তার বেচে থাকার উপকরণ। বর্তমানে আমাকে অফিস থেকে কলম দেওয়া হয়, যার দাম একশত নব্বই টাকা। আর যে সিগারেটটা খাচ্ছিলাম তার দাম দশ টাকা। পথের ধুলোয় অদ্ভুত ভাবে বেড়ে উঠার মাঝেও তাদের মধ্যে বিবেকবোধ তৈরী হয়েছে।পঞ্চাশ টাকায় হোটেল থেকে ভাত-তরকারি কিনে খাওয়ার থেকে বাসায় পঙ্গু মা আর ভাই বোনকে নিয়ে খাওয়া বেশি তৃপ্তিজনক সেই বোধও এই ছয়  বছরের অশিক্ষিত মেয়ের মাঝে তৈরী হয়েছে।শিক্ষায় শুধুমাত্র বিবেক বোধ শেখায়না। এর বয়সে রোজ সকালে আমি ভাবতাম আজ স্কুলে যেয়ে টিফিনে কি খাবো, কার পাশে বসবো, স্যারের কোন হোমওয়ার্ক আছে কিনা। আর এই মেয়েটা ভাবে রোজ সকালে “কোন রাস্তায় ভিক্ষা করলে বেশি টাকা পাবে”।

আর পঞ্চাশ টাকা আমাদের একদিন মোবাইলে খরচ হয়ে যায়। আর ওদের সবাই মিলে এক বেলা খাওয়া হয়ে যায়। একই স্রষ্টার স্রিষ্টি আমরা দুইজনই। দুইজন দুইজনের বাবা-মা এর সন্তান। স্রষ্টা চাইলে আমার আর এ মেয়ের স্থান টাও উল্টো হতে পারতো। আমরা ভুলে যাই সব।অনেক অহংকার আমাদের গরীব দের মানুষ ভাবিনা। কখনও তাদের গায়ে হাত তুলি।কাছে আসলে রুমাল নাকে চাপি।আমাদের ভাব ভঙ্গি এমন যে আজ আমাদের যা ভালো পজিশন এর ক্রেডিট আমাদের।অথচ স্রষ্টা চাইলে আজ সে চা খাইতো আর আমি গেঞ্জি টেনে দশ টাকা চাইতাম। অল্প করে ভাত খাওয়ার জন্য। ভালো রেখেছেন স্রষ্টা সত্যিই অনেক।নিম্নবিত্ত এই মানুষ গুলোর জীবন বৈচিত্রের সাথে তুলনা না দেওয়া পর্যন্ত সত্যিই বুঝিনা আমি কতটা সুখে আছি, কতটা ভাল আছি। তাই কখোনো এই সব ছোট পথ শিশুদের গায়ে হাত তুলবেন না, নাকে রুমাল দিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দিবেন না, তাদেরই সমবয়সী আমাদের ও আছে ভাই বোন, আজকে এই পথ শিশুর জায়গায় আপনার ছোট ভাই বা বোন থাকলে আপনি কি করতেন?

এদিকে আমার সহকর্মী দোকানদার আমার পিছন থেকে ডাক দিলেন।বললেন কি ভাই কাপড় নিতে হবে না বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম হ্যাঁ অবশ্যই নিতে হবে। এরপর ওই জায়গা থেকে আমি চলে আসলাম। কিছু ভালো জামা কাপড় কেনা শেষ হলে আবার আমরা গঞ্জের হাট থেকে সবাই মিলে গ্রামের দিকে রওনা দিলাম।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT