ঢাকা (রাত ৯:১৭) শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
শিরোনাম

বাপ-ছেলে মিলে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্নের ইতি টেনে দিল ঘাতক ট্রাক



ঘরের খাবার আর দেনার টাকা যোগাতে কদিন আগে নির্মাণ কাজে গিয়েছিলেন সিলেটে। কিন্তু আর ফেরা হলো না সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়ার গ্রামের হতদরিদ্র রশিদ মিয়ার। রোজদিনের মত আজ ভোরে ভবনের নির্মাণ কাজে বেরিয়েছিলেন অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কিন্তু মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন রশিদ মিয়া।
বুধবার (৭ জুন) ভোরে সিলেটের নাজিরবাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রাক ও পিকআপের সংঘর্ষে নিহত হন ১৪ জন। ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ১২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ৯ জনই সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের। আর ৩ জনের বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। এক দুর্ঘটনায় গ্রামে এতো মানুষের মৃত্যুতে পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ।
নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁও গ্রামের মৃত ওয়াহাব মিয়ার ছেলে শাহিন মিয়া (৫০), একই উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬), তলেরবন্দ গ্রামের মৃত আমান উল্লাহর ছেলে আউলাদ তালুকদার (৫০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৫০), একই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৬), একই গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া (১৯), মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নুর (৬০), সাগর আহমদ (১৮), উপজেলার মধুপুর গ্রামের মৃত সোনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া (৪০), গছিয়া গ্রামের মৃত বারিক উল্লাহর ছেলে সিজিল মিয়া (৩৫) ও কাইমা গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫)।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় দিরাই উপজেলার সবার মরদেহ নিয়ে আসা হয় দিরাই উপজেলা ভাটিপাড়া গ্রামে। একে একে মরদেহগুলো আসতেই স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পুরো এলাকা। দিরাই উপজেলা ভাটিপাড়া গ্রামের নিহত রশিদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, রশিদ বৈশাখের ধান তুলেও পরিশোধ হয়নি তার ঋণের টাকা। ঋণের চাপে বৈশাখী শেষে সিলেটে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন।
ঘরে এক স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তার পরিবার। বড় মেয়ে শাহিমাকে  মাত্র ৬ মাস আগে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট দুই ছেলে বাপ্পী ও রিহান। অর্থাভাবে ৮ম শ্রেণির পরীক্ষা দিতে পারেনি বাপ্পী। সর্বশেষ নিহত রশিদের সাথে গতকাল রাতে কথা হয় তার পরিবারের। ফোনে জানিয়েছিলেন ছেলে বাপ্পীকে সিলেটে নিয়ে যাবেন। সেখানে যে কোনো দোকানে একটা চাকরি পাইয়ে দিবেন। তারপর বাপ-ছেলে মিলে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু বাপ্পী আর তার বাবা রশিদের সেই স্বপ্ন পূরণ হল না। ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিল রশিদ সহ আরও অনেকের প্রাণ।
রশিদের স্ত্রী রাসিবা বেগমের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ঘরের আশপাশ। শান্তনা দিতে আত্মীয় স্বজন, এলাকাবাসী এসে ভিড় করছেন তার ঘরে। ছোট একটি ঘরে বিলাপ করছেন রাসিবা বেগম।
তার ছেলে বাপ্পী বলেন ‘বাবা গতকাল রাইতে ফোন দিসল আজকে সকালে ফোন দিয়ে আমারে সিলেট নেয়ার কথা আমারে একটা দোকানে বসাইতা। কিন্তু সকালে ফোনে বাবার মৃত্যুর খবর পাইছি’।
দুর্ঘটনায় রশিদের মতো এ গ্রামের আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবাই হতদরিদ্র, কাজের জন্য গিয়েছিলেন সিলেট। একদিনে গ্রামে এতজনের মৃত্যুতে শোকে বাকরুদ্ধ পুরো গ্রাম।
দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন জানান, দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ গ্রামে এসে পৌছেছে। প্রশাসন থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা করা হবে।
শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT