ঢাকা (দুপুর ২:০৭) সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিয়তি

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock মঙ্গলবার রাত ০২:০৭, ২৫ মে, ২০২১

এতিম ছেলে

মোঃ বুলবুল হোসেন

 

অভাবের সংসার থাকার সত্বেও আরিফের জীবন ভালোই চলছিল। বাবা মা বোন দাদা দাদী কে নিয়ে ভালোই আছে। আরিফ তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে। হঠাৎ একদিন রাতে শুনতে পেল বাবা তার মাকে বলতেছে এভাবে আর কতদিন চলবে আমাদের সংসার । আমি বিদেশ যাবো হয়তো সংসারের সুখ ফিরে আসবে। আমাদের ছেলে মেয়ে বড় হইতেছে তাদেরতো ভবিষ্যৎ আছে। মা বাবাকে বলল আমাদের তো অভিভাবক আছে। আরিফের দাদা-দাদী বেঁচে আছে। উনাদের সাথে আমাদের আলোচনা করা উচিত। উনারা কি বলে মুরুব্বিরা যা বলে সন্তানের ভালোর জন্যই বলে। তাই চলো উনাদের সাথে আমরা কথা বলি।এই বলে আরিফের দাদা-দাদী রুমে আরিফকে সাথে নিয়ে গেল।আরিফের বাবা তার দাদাকে বিদেশ যাওয়ার জন্য সবকিছু খুলে বলল। দাদা বললো দেখো তোমাদের সংসার তোমরা যেটা ভালো মনে করো তাই করো।এমন কিছু করো না যাতে ভবিষ্যতে খারাপ হয়। আমি আর কদিন বা বাঁচবো। আরিফের বাবা কথা শুনে খুশি হয়ে গেল। আরিফের বাবা বলল ঠিক আছে বাবা আমি ভেবে চিনতেই বলেছি। আমি বিদেশে যাবো এবং বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করল।

অনেক কষ্ট করে টাকা সংগ্রহ করে।দালালকে টাকা জমা দিল আরিফের বাবা। সবকিছু ঠিকঠাক মত হয়ে যায়। কিছুদিন পরে ফ্লাইটে ডেট হল। বিদেশে যাওয়ার জন্য আরিফের বাবা সবার কাছে দোয়া নিয়ে বিদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আরিফের দাদা বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল যে ছেলেটা আমাকে ছেড়ে বিদেশ চলে যাচ্ছে। গ্রামের সবাই বুজিয়ে আরিফের দাদাকে শান্ত করল। আরিফের বাবা বিদেশ যাওয়ার পর সবাইকে ফোন করে বলে দিলো আমি সঠিক সময়ের মধ্যে বিদেশে এসেছি । আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন আমি কাজ পেয়েছি। আরিফের দাদা শুনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল। আরিফ ও তার বোন নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত শুরু করলো। দাদা সংসারের কাজ করে। আরিফ মাঝে মাঝে দাদাকে তার কাজে সাহায্য করে। সবার কপালে হয়তো সুখ বেশিদিন সয়না আরিফের কপালটা হয়তো তাই। দুই তিন বছর সংসার ভালোই চলছিল হাসি খুশি। হঠাৎ একদিন ফোনে খবর আসলো যে আরিফের বাবা মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে কাজ করতে গিয়ে। এদিকে আরিফের দাদা শুনে ছেলের জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিল।

আরিফের বাবার বন্ধুদের ধরে অনেক কষ্ট করে। দেশে আনা হলো আরিফের বাবাকে চিকিৎসা করার জন্য। এদিকে ছেলেকে  একনজর দেখার জন্য আরিফের দাদা বারবার ঘর থেকে বাহির বাহির থেকে ঘরে যাচ্ছিল। আরিফের বাবাকে দেশে এনে ভালো একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হল। অনেক টাকা-পয়সা খরচ হলো তাতেও লাভ হলো না। আরিফের বাবা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন। আরিফের বাবা চলে যাওয়ার পর এদিকে সংসারের শোকের ছায়া নেমে আসে। আরিফের মা আরিফ ও তার বোনকে ধরে অনেক কান্নাকাটি করে। আরিফের দাদা ও একই অবস্থা আর দাদা বৃদ্ধ মানুষ বারবার বলছে এদের নিয়ে আমি কি করব কোথায় যাবো এদের ভবিষ্যৎ কি হবে। এদিকে সংসারের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আরিফের দাদা ছেলের শোকে পাগলের মতো হয়ে যায়। রাস্তা রাস্তায় ঘুরতে থাকে।কিছুদিন যাওয়ার পরে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আরিফের দাদা মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে যায়। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়। গ্রামের লোকজন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আরিফ খবর শুনে তার মা ও দাদীকে নিয়ে কান্নাকাটি করতে করতে হাসপাতালে চলে যায়। হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মেডিসিন খাওয়ানোর পরে কোনরকম সুস্থ হয়। এরপর ছেলের শোকে আরিফের দাদাও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আবারো  শোকের ছায়া নেমে আসে আরিফের সংসারে।

দাদা ও বাবাকে হারিয়ে আরিফ এতিম হয়ে যায় এবং সংসারের হাল ধরার মতো আরিফ ছাড়া আর কেউ নাই। আরিফ লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসার কাজে মনোযোগ দেয়। এছাড়া আরিফের দ্বিতীয় কোন পথ ছিল না। কারণ বেঁচে থাকতে হলে খেতে হবে। আর খেতে হলে টাকা প্রয়োজন আছে। তাই সবার মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য। আরিফ দিনরাত পরিশ্রম করে যায় চোখের জল ফেলে। যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে আমাকে কাজ করতে হইতেছে হায়রে নিয়তি। আরিফ যখন খেতে কাজ করে তখন মা ও দাদী আরিফের পাশে গিয়ে দেখাশোনা করে। আরিফের কাজে সাহায্য করে। আরিফ খুব শান্তশিষ্ট ছেলে ছিল এবং ছোট ছেলে বাবা দাদা চলে যাওয়া এতিম হয়ে যায়। এতিম ছেলে হিসাবে সবাই খুব ভালবাসে এবং সবাই তার কাজে সাহায্য করে। আরিফের খোঁজ খবর নিতো। এভাবেই চলতে থাকে এতিম আরিফের সংসার জীবন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT