ঢাকা (রাত ৪:০৭) রবিবার, ৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুকুর করতে বাগান সাফ, অনুমতি দিয়েছেন ইউএনও

এস এম সাখাওয়াত এস এম সাখাওয়াত Clock বৃহস্পতিবার দুপুর ০২:৫৬, ২ জানুয়ারী, ২০২৫

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে একটি আম বাগানকে উজার করে পুকুর খননেন অনুমতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও নিশাত আনজুম অন্যন্যার বিরুদ্ধে। লিখিত কোন অনুমোদন না থাকলেও ইউএনও ফসলী জমিতে পুকুর খনন করতে মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন বলে জানান পুকুর খননকারী মো. চুটু ও তার ছেলে মো. ডালিম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় এক মাস খানেক আগে জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের নুনছামাটি এলাকায় প্রায় ৫ বিঘা একটি আম বাগানে পুকুর খননের কাজ চলছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের বাধায় বন্ধ হয়ে যায় আম বাগান সাফ করে অবৈধভাবে পুকুর খননের সেই কাজ। কিন্তু গত ৭ দিন থেকে পুনরায় শুরু হয় সেই খনন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় নিহত চাঁপাইনবাবগঞ্জের তারেক হোসেনের পরিবারের জন্য দেয়া ৪ শতক সরকারী জায়গা ভরাট করতে প্রয়োজনীয় মাটি দেয়ার শর্তে অবৈধ পুকুর খননকারী চুটুকে ডেকে পুনরায় তা খননের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত আনজুম অন্যন্যা অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা যায়। তবে কিছু মাটি দিয়ে ভরাট করলেও বাগানের সব ফলদ আম গাছ কেটে অতিরিক্ত মাটি বাইরে বিক্রির কথা জানান নিহত শহীদ তারেক হোসেনের বাবা, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুকুর খননের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা।

 

স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, মাঝারি সাইজের আম বাগান ছিল জমিটিতে। কিছুদিন আগে থেকে হঠাৎ করে আম গাছ কেটে সেখানে পুকুর খননের কাজ শুরু হয়। এরপর কি কারনে আবার হঠাৎ পুকুর খনন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর সপ্তাহ খানেক ধরে আবারো পুকুর খনন শুরু হয়েছে। শুনেছি ইউএনও নাকি পুকুর খননের অনুমতি দিয়েছেন তাদেরকে।

 

স্থানীয় কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, জীবন্ত আম গাছ সাবাড় করে অবৈধভাবে পুকুর খনন করছিল চুটু। পরবর্তীতে কেন জানিনা বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু গত সাত দিন থেকে চুটু ও তার ছেলে ডালিম প্রচার করে বেড়াচ্ছে ইউএনও নাকি তাদেরকে পুকুর খনন করতে বলেছে। আর এসব বলে আম বাগানের মাটি কেটে শহীদ পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া জায়গায় দু-এক গাড়ি দিয়ে বাকি মাটি আশেপাশের ইটভাটা ও বিভিন্ন জায়গায় ভরাট হিসেবে দেদারসে বিক্রি করছে তারা।

 

আরিফুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, শহীদ পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া জায়গায় হয়ত সর্বোচ্চ ২০ গাড়ি মাটি লাগবে। কিন্তু এই সুযোগে ইউএনও’র অনুমতি পেয়ে পুকুর খনন করে প্রতিদিন শত শত ট্রাক্টর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি নিয়ে গিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে তারা। এমনকি প্রায় ২০ ফিট গর্ত করে পুকুর খনন করে হাজার হাজার ট্রাক্টর মাটি কেটে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।

 

এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ তারেক হোসেনের বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা ভূমিহীন হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজার এলাকায় ৪ শতক জমি দিয়েছে। কিন্তু জায়গাটি কিছুটা গর্ত হওয়ায় সেখানে ভরাট দেয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদেরকে মাটি দিলে যেহেতু তারা (পুকুর খননকারী) কোন টাকা-পয়সা পাচ্ছে না তাই বাইরেও মাটি বিক্রি করছে।

 

তবে অবৈধ পুকুর খননকারী মো. চুটু বলেন, প্রশাসনের কথায় আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ইউএনও স্যার নিজে আমাদেরকে ডেকে পুকুর খনন করে শহীদ পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া জায়গায় ভরাট দিতে বলেছেন। এরপরই বন্ধ হওয়া পুকুরের বাকি খননের কাজ করছি। প্রয়োজনে ইউএনও বা ডিসিকে ফোন দিয়ে জানতে পারেন। আর যেহেতু ২/৪ গাড়ি মাটি উঠিয়ে আমাদের কোন লাভ হবেনা শুধু শুধু খরচ বাড়বে তাই মাটি উঠিয়ে আশেপাশে দিতেই পারি।

 

এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও নিশাত আনজুম অন্যন্যা বলেন, কে কি বক্তব্য দিয়েছে তা আমার দেখার বিষয় না। ডিসি স্যারের অনুমতি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ তারেকের পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া একটি জায়গায় বসবাসের উপযোগী করার নিমিত্তে ভরাটের কাজে ব্যবহার করতে মাটি দেয়া হচ্ছে। এর অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে পুকুর খননের মাটি অন্য কোন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যদি বাইরে মাটি বিক্রির কোন তথ্য পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT