গৌরীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শুভ্র হত্যাকান্ডের ঘটনায় পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতিকে বহিষ্কার
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ মঙ্গলবার রাত ১১:৩৯, ২০ অক্টোবর, ২০২০
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান পৌরসভার আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তৃতীয় দিনেও উত্তাল ছিল গৌরীপুর। গৌরীপুরের কলতাপড়া বাজারে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা ও ডৌহাখলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। অপরদিকে পৌর মেয়রের বাসা-বাড়ি ও দোকানপটে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছে গৌরীপুর পৌরসভার কর্মচারীরা। শুভ্র হত্যাকান্ডের সঙ্গে গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক জরুরী সভা বঙ্গবন্ধু চত্বরস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহাম্মেদ। সভায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যাকান্ডের সঙ্গে গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জড়িত থাকার অভিযোগে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান ও দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহাম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক বিধু ভূষণ স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশ পত্র জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে পাঠানো হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদিন আহমেদ।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন জানান, সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যাকাÐের ঘটনায় ছোট ভাই আবিদুর রহমান প্রান্ত বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির (একাংশের) যুগ্ম-আহবায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদকে। মামলায় ১৪জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনকে আসামী করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ, মইলাকান্দা ইউনিয়নের পশ্চিম কাউরাট গ্রামের চান মিয়ার পুত্র রাসেল মিয়া (৩২), ইউনুছ আলীর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (৩২) ও আব্দুল খালেকের পুত্র মজিবুর রহমান (৩০) কে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে হত্যাকান্ডের ৪র্থ দিন মঙ্গলবার দুপুরে পুরাতন সোনালী ব্যাংক কৃষ্ণচূড়া চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
বিকালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কলতাপাড়ায় উপজেলা ও ডৌহাখলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে মাসুদুর রহমান শুভ্র’র হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হত্যাকাÐের বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন ১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদিন আহমেদ। তিনি বলেন, শুভ্র ছিলো আদরের নাতি। আমরা নানা-নাতি বলেই ডাকতাম। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, শুভ্র’র দাদা ডাঃ এম.এ সোবহান তিনিও মুক্তিযোদ্ধা। আমরা জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ। তার নাতি-আমার নাতির এমন মৃত্যু কখনও মেনে নেয়া যায় না। আমরা স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছি আর শুভ্র স্বাধীনতা রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শুভ্র হত্যাকান্ডের ঘটনায় অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবে। এ হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশকে সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি। দ্রুত চার্জশীট দিন, প্রকৃত আসামীদের খোঁজে বের করুন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা, ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল হক সরকার, রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি, গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি, গৌরীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল কাদির, বাজার কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান কাজল, সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুল লতিফ, আহŸায়ক শাহজাহান, যুগ্ম আহŸায়ক মানিক মিয়া প্রমুখ।
নিহতের মা খালেদা আক্তার অভিযোগ করেন, পৌরসভা নির্বাচনে তার পুত্র প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকে শুভ্র’র জনপ্রিয়তাকে প্রতিপক্ষ মেনে নিতে পারেনি। নির্বাচনে আসাই আমার পুত্রের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। সে ছিলো প্রতিবাদী, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। সে কারণে বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিলো। তিনি আরো বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও পুত্রের সঙ্গে শেষ কথা হয়, নতুন বাজারে আছে বলতেই আঁতকে উঠি, ছেলেকে বারবার বলেছি, সেখানে এখনো কেন; সে জানায়, আমরা অনেকেই আছি, ভালো আছি, সমস্যা নেই! এটাই ছিলো শেষ কথা বলা।
অপরদিকে তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার চুমকী জানান, মাস খানেক ধরেই তিনি (শুভ্র) বলছিলেন সবাই নীরব, আমার বিরুদ্ধে বড় ধরণের ষড়যন্ত্র হচ্ছে! আমাকে ওরা মেরে ফেললে, তুমি তো বিধবা হয়ে যাবে; আমি ওকে বারবার বলতাম এসব অলক্ষুণে কথা কেন বলো; তুমি তো কারও ক্ষতি করছো না। আজ সেই কথাই সত্য হয়ে গেলো!
এ দিকে গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, মাসুদুর রহমান শুভ্র আমার ছেলে বয়েসী, আমার পুত্রতুল্য। নির্বাচনে সে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন, আমি এ পৌরসভায় কাউন্সিলার আর মেয়র দু’পদে ১৭বছরের জনপ্রতিনিধিত্ব করছি।
জনমানুষের কল্যাণে কাজ করছি। এ জনপ্রিয়তার উপর আমার আস্থা আছে, মানুষের জন্য ভালো কাজ করলে মানুষ ভোট দিবেই। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দিতা হতে পারে, প্রতিহিংসা নয়।
উল্লেখ্য যে, গৌরীপুর পৌরসভার পানমহালে পৌর মেয়র প্রার্থী হিসাবে গত শনিবার (১৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে গণসংযোগ শেষে আব্দুর রহিমের দোকানে নির্বাচনী আলাপচারিতার সময় অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে মাসুদুর রহমান শুভ্রকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তার দুই কর্মী আহত হয়।