আসাদ খন্দকার
মঙ্গলবার সকাল ০৮:৫৭, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
গাইবান্ধায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) নলকুপের সেচ পাম্পে বিদুৎ সংযোগ না দেয়া ও বিকল সেচযন্ত্র পুনরায় মেরামত না করার অভিযোগ উঠেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) গভীর নলকুপ ও নদীতে স্থাপিত এলএলপি নলকুপের অপারেটার ও ম্যানেজারদের অভিযোগ বিএমডিএ গাইবান্ধা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আর্থিক লেনদেন ছাড়া সেবা দেন না। চলতি বোরো মৌসুমে সব দিকে ধান লাগানো প্রায় শেষ হলেও সাঘাটা উপজেলার রামনগন গ্রামের বিএমডিএ’র দুটি নলকুপে গত ৫ মাসেও সেচ সংযোগ দেয়া হয়নি। ফলে গত আমন মৌসুমে ২শ ৫০ বিঘা জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো সংযোগ না দেয়ায় ব্যহত হচ্ছে ২শ ৫০ বিঘা জমির বোরো ধান চাষ। ফলে ক্ষতিতে পরেছে কৃষকরা। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী সচেতন মহলের। তবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএমডিএ কর্মকর্তা বলেন আমার সাথে তাদের কোন কাজ নেই। বিষয়টি সাঘাটা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমানের দায়িত্বে আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক আনছার আলী। বাঙ্গালী নদী বেষ্টিত চরে ১৫ বিঘা জমিতেগত আমন ধান চাষ করে পানির অভাবে ফলন পানিনি। যেখানে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা সেখানে ধান পেয়েছেন ১ থেকে ২ মণ।
কৃষক আনছার আলী জানান,“ আমি বরেন্দ্র এলএলপি অপারেটর। আমি গত তিন মাস যাবৎ টেন্সফরমান বৈদুতিক খুটিতে তোলার বিষয়ে বরেন্দ্র অফিসে যোগাযোগ করি। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম কোন কর্নপাত করেন নি। ফলে আমার এই বরেন্দ্র সেচ পাম্পটি বন্ধ থাকায় আমার লাখ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও আমার আশে পাশে দুটি সেচ পাম্পের আওয়ায় দুই শতাধিক কৃষক ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে।”
রামনগর গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান জানান, “সেচ সংযোগ না থাকায় আমি আমন মৌসুমে জমিতে পানি দিতে পারিনি। ফলে আমার ১০ বিঘা জমির আমর ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায় এবং আমি বার বার যোগাযোগ করেও বরেন্দ্র কতৃপক্ষ আমার ক্ষেতে পানি দেন নি।”
একই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জনান, “আমার দেড় বিঘা জমির মিষ্টি আলু ক্ষেত পানির অভাবে নষ্ট হয়েছে। যেখানে বিঘায় ৬০ মণ মিষ্টি আলুর ফলন পাওয়ার কথা, সেখানে বিঘায় ১০ মণ মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়নি । সময় মতো সেচ না দেয়ার কারনে আমার এমন ক্ষতি হয়েছে।”
একই গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, “গত আমন মৌসুমে আমর লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম চারদিকে ধান লাগানো প্রায় শেষ। কিন্তু এখনো আমাদের এখানে বিএমেিড সেচ পাম্পের সংযোগ দেয়া হয়নি। ফলে বোরো মৌসুমেও আমাদের জমি পরিত্যক্ত আছে।”
রামনগর বরেন্দ্র সেচ পাম্প ম্যানেজার সাহাদত হোসেন জানান,“ আমি বরেন্দ্র সেচ পাম্পের ম্যানেজার। আমার ১০ বিঘা জমির জন্য বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করি। শুধু পানি দিতে না পাড়ায় আমার এই বীজতলার ধানের চাড়া গুলো শুকে নষ্ট হচ্ছে। আমার সেচ সংযোগটি না দেয়ার ফলে আমার স্কীমের প্রায় ১০০ বিঘা জতিতে গত আমন মৌসুমে ১৫ লাখ টাকার ফসলী ক্ষতি হয়ছে। চলতি বোরো মৌসুমে যখন সব দিকে ধান রোপন প্রায় শেষ তখনো সেচ সংযোগ দেননি বরেন্দ্র কতৃপক্ষ।”
রামনগর বরেন্দ্র সেচ পাম্পের মাঠ পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, “অফিসে মালামালের চাহিদা দিয়ে কয়েক সপ্তাহ হয়রানির পরে কৃষকের সেচ অব্যহত রাখতে নিজ খরচে ১০ হাজার ৮শ টাকার মালামাল ও ১০ হাজার টাকা শ্রমিক খরচ করে সেচ চালু করি। কিন্তু এখনো সেচ কার্যপরিচালনায় বিভিন্ন যন্ত্রের প্রয়োজন। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) গাইবান্ধা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অর্থিক লেনদেন ছাড়া সরকারি সেবা আমরা পাই না। ফলে কৃষকদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।”
বরেন্দ্র অপারেটর মোজাম্মেল হক জানান,“বিএমডিএ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না। টেন্সফরমার নামাতেও টাকা তুলতেও টাকা। সরকারি সব সেবাই টাকার বিনিময়ে করেন। যারা টাকা দেন তারা সেবা পান যারা দেন না তারা সেবা পান না।”
“বিএমডিএ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, রামনগরের নলকুপের বিষয়টি সাঘাটা উপজেলার দায়িত্বে থাকা মোখলেছুর রহমান দেখেন। আমার সাথে লেনদেনের কোন সম্পর্ক নেই। মূলত টেন্সমিটার চুরি হওয়ার ফলে মৌসুম শেষে খুলে রাখা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেচপাম্প স্বচল করা হবে।”
পরে সাঘাটা উপজেলার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমানের সাথে ফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান “আমি রামনগর গ্রাম পরিদর্শন করেছি। দ্রæত সময়ে বিদুৎসংযোগ দেয়া হবে।”
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: খোরশেদ আলম জানান,“ চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৮১ হাজার ১শ ১৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে । যা জেলার লক্ষমাত্রার ৬৩ ভাগ বোরো ধান রোপন হয়েছে । কৃষকরা পানির অভাবে ধান রোপন করতে পারছেনা। দ্রুত সময়ে বিদুৎ সংযোগ দেয়াসহ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজণীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) গাইবান্ধা অঞ্চলে কৃষকদের চাহিদা অনুয়ায়ী গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৪৬০ টি গভীর নলকুপ ও নদীতে অবস্থিত ৮৫ টি লো লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন করা হয়েছে।