উলিপুরে ইউনিয়ন পর্যায়ে আগ্রহ বাড়ছে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের
সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম রবিবার রাত ১১:৩৩, ৮ আগস্ট, ২০২১
পচাত্তরউর্ধ্ব মমতাজ বেগম (৭৬) বয়সের ভারে নুয়ে গেছে।কারো সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। কুড়িগ্রামের উলিপুরে বজরা ইউনিয়নে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে বজরা এল কে আমিন ডিগ্রি কলেজ মাঠে ইউনিয়ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ টিকাকার্যের দ্বিতীয় দিনে প্রতিবেশীর সহায়তায় টিকাদান কার্ড হাতে নিয়ে লাঠিতে ভর করে কেন্দ্রে এসেছেন করোনা ভ্যাক্সিনের টিকা নিতে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা নাকি খুব খারাপ ওগ (রোগ) যাক ধরে তার বগলোত (নিকট) নাকি ক্যায়ো (কেউ) আইসে না। মল্লেও নাকি ছাওয়া-পোওয়া মাটি দিবের পায় না।বয়সে শ্যাষ (শেষ) কয়দিন আর বাঁচমো (বাঁচবো)। দুই-তিন ধরি ঘুরি ঘুরি নাগারে মাইকিং করবার নাগছে চেয়ারম্যান তাহে শুনি আইলোং (আসলাম) টিকা নিবার (নিতে)।
তিনি আরো জানান, আগোত শুনছি কিসের বলে কম্পুটার (কম্পিউটার) করা নাগে তারপরে উলিপুর হাসপাতালোত যায়া টিকা নেয়া নাগে।উলিপুর যাওয়া নাগলে টিকা নিবার গেইলংও (যাইতাম) না হয়,নিনো (নিতাম) না হয়।আইজকা গার বকলোত টিকা দিবার নাকছে শুনিয়া আসছি টিকা নিবার এভাবে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলেন তিনি।
এভাবে শুধু মমতাজ বেগম (৭৬) নয় তার কথার সাথে সুর মিলিয়ে ছালেহা বেগম (৭৪),খাদিজা বেগম (৬৫) ও মেরেকজান বেগম (৬৭) এর মতো অনেকেই বলেন,বয়সে শ্যাষ(শেষ), কয়দিন আর বাঁচমো (বাঁচবো)। আল্লাহ্ যেন হামাক এই অসুখ থাকি অক্ষে (রক্ষা) করে। মরি গেইলেও ছাওয়া-পেওয়া যেন মাটি দিবের পায়। টিকা নেয়ার পর অনুভূতি জানতে চাইলে তারা আরো বলেন, প্রথমে খুব ভয় নাগছিল, সেইজন্যে হামরা সবাই মিলি আসছি, তবে হামার ভয় কাটি গেইছে। আল্লাহ্ বাঁচি থুইলে পরের বারো হামরা টিকা নেমো।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্বিতীয় দিনের মত কোভিড-১৯ এর গণ টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার (৭আগষ্ট) সারাদেশের মত এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে ২১ টি বুথে গণ টিকা প্রদানের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনেও (রবিবার) ২১টি বুথের মাধ্যমে ৭টি ইউনিয়নে গণ টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ৬০০ এর অধিক ব্যক্তিকে টিকা প্রদান করা হবে।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বলেন, তিস্তা বেষ্টিত আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ করোনা সম্পর্কে অসচেতন। সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মেম্বার ও মহল্লাদার-দফাদারদের মাধ্যমে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে। তবে টিকা অপ্রতুল হওয়ায় সকলকে টিকা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সূভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে লোকজনের মাঝে টিকা গ্রহণের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। টিকা স্বল্পতার কারণে সকলকে টিকা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকা প্রদান করা হবে।