উলিপুরে কাপড়ের দোকান কর্মীদের বেতন অভাবে খাদ্যসংকট, নেই কোন সহযোগীতা
মোঃ কামরুজ্জামান বৃহস্পতিবার রাত ০৮:০৪, ১৬ এপ্রিল, ২০২০
সাজাদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন।
করোনা কেবল মানুষের জীবনকেই সংকটে ফেলে দিচ্ছে না, হতাশাগ্রস্থ করেছে অসংখ্য শ্রমজীবী, নিম্ন আয়ের ও হত দরিদ্র পরিবারের জীবন চলা।
সেই সাথে বেড়ে চলেছে পারিবারিক অশান্তি ও কলহ। সরকারি নির্দেশনা মত গত ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামের উলিপুরে ঔষধ, মুদি ও কাঁচামালের দোকান ব্যতীত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আজও বন্ধ রয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পরেছে শত শত শ্রমিক কর্মচারী।
খাদ্য সংকটসহ নানান সমস্যায় মানবেতর জীবন যাপন করছে ওই সমস্ত পরিবার। তাদের পাশে নেই কোন সহায়তার হাত।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কাপড়ের দোকানের কর্মচারী চোখে মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে জানান, আমি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা ১০ টা পর্যন্ত দোকানদারি করে প্রতিদিন ৩’শ টাকা হাজিরা পাই তাই দিয়ে কোন ভাবেই চলে সংসার।
প্রায় ২০ দিন হয়ে গেল বাড়ীতে বসে, নেই অন্যকোন আয়ের উৎস হাতে যা ছিল সব শেষ বাকি দিন চলার কোন হেতু নেই।
তিনি আরো জানান, সকাল হলেই চোখের জলে বালিশ ভিজে যায় ছোট তিন বছরের বাচ্চার আকুতি মেটাতে না পেরে। আগে প্রতিরাতে বাড়ীতে ফেরার সময় সাধ্যমত কিছু ফলমুল বা বিস্কুট নিয়ে আসতাম।
তার পরিবর্তে দিয়েছি এখন প্রতিদিন ৩ টাকা মূল্যের শাহীন চানাচুর গতদুই দিন থেকে অর্থাভাবে তাউ দিতে পারছি না।
উলিপুর শ্রমিক সংঘের সভাপতি মো. ওসমান গণি বলেন, উলিপুর সদরে প্রায় ৯’শ৭০ জন দোকান কর্মচারী রয়েছে তার মধ্যে কাপড় দোকানের কর্মচারী ৩’শ২৭জন। বাকী ৬’শ৪৩জন ঔষধ ও মুদি দোকানের কর্মচারী।
যেহেতু ঔষধ ও মুদি দোকান খোলা থাকে তাদের বেতনের সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে কাপড়ের দোকানের কর্মচারীদের বেতন নিয়ে।দুই চার জন কাপড় ব্যবসায়ী কর্মচারীদের বেতনের অল্প পরিসরে টাকা যদিও দিচ্ছে তা দিয়ে সংসার চলার মত নয়। আর কিছু মহাজন বেতনের টাকা দিতে নারাজ। এই বিষয়ে আমাদের সংগঠনের শ্রমিক নেতাসহ বণিক সমিতি ও কাপড় মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দেরর সাথে কথা বলবো সব কাপড় ব্যবসায়ী যেন এই পরিস্থিতিতে অসহায় শ্রমিকদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।
এব্যাপারে উলিপুর কাপড় মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী ভোষন পাল সরকারি নির্দেশনা রয়েছে সকল বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সরকারি বিশেষ প্রনোদনা দেয়না। আর এসময় আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আর্থিক অবস্থাও বেশি ভালো না তবে আমি একাই কি ভাবে সিদ্ধান্ত নেই সব ব্যবসায়ী এখন বাসায় অবস্থান করছে।
তাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই বিষয়ে কি করা যায়।তবে তিনি আরো জানান কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে শূন্য হাতে ফেরত পাঠানো হয়েছে এমন অভিযোগ কেউ করেনি।
উলিপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.মাঈনুল ইসলাম(দুলু) মন্ডল বলেন, কর্মচারীরা আমাদের স্টাফ অবশ্যই তাদের এই সময় চলতি মাসের বেতন পরিশোধ করতে হবে। অন্তত যার বেতন ৮ হাজার তাকে যেন ৫হাজার টাকা প্রাদান করা হয় আমি বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ কাপড় ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দদের জানিয়ে দিব।সকল মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের অসহায় শ্রমজীবী কর্মচারীদের পাশে দাড়াতে হবে বলেও তিনি জানান।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের জানান, করোনা মোকাবেলায় সকলকেই মিটিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এমন পরিস্থিতিতে সকলে যেন সাধ্যমত সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
কাপড়ের দোকানের কর্মচারীদের চলতি মাসের বেতন পরিশোধের বিষয়ে উলিপুর বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলতে চেয়েছেন তিনি।