ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:১৪) শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

সরকারি ম্যানগ্রোভ বন জ্বালিয়ে চিংড়ি ঘের!

প্রশাসনের অভিযানের পরও দখলবাজদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড

শফিউল আলম শফিউল আলম Clock সোমবার বিকেল ০৪:৪১, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

মহেশখালী (কক্সবাজার) উপকূলে সরকারি বনায়ন ও প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন উজাড়—এমনকি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে—অবৈধভাবে চিংড়ি ঘের স্থাপনের অভিযোগ দিনদিন আরও বাড়ছে।
বিশেষ করে সোনাদিয়া দ্বীপের বিভিন্ন স্পটে চলছে বন দখল, বাঁশের বেড়া ঘেড় , এবং প্রজেক্টে জলাশয় খননের কাজ। এভাবে প্রকৃতির ফুসফুস হিসেবে পরিচিত ম্যানগ্রোভ ঝাউবনকে নিঃসঙ্কোচে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে, শক্তিশালী প্রভাবশালী মহল। তারা সরকারি বনভূমি কেটে ও জ্বালিয়ে জমি পরিষ্কার করছে। আর সেই জমি “প্রজেক্ট” দাবি করে নিজেদের নামে দখলকৃত এলাকা চিংড়ি চাষের জন্য প্রস্তুত করছে।
এই বিষয়ে কয়েক দফায় উপজেলা প্রশাসন অভিযানও চালিয়েছিল। কিন্তু অভিযান শেষে কিছুদিন শান্ত থাকার পর আবারও একই অবৈধ কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যায়—যেন কেউই থামাতে পারছে না।
সাংবাদিক তারেক আজিজ বলেন, গত দুই দিনে সোনাদিয়া ঘুরে দেখা যায়। যেখানে একসময় ঘন সবুজ ম্যানগ্রোভ বন ছিল, সেখানে এখন চলছে ঘেরে পানির লাইন টানার কাজ এবং বাঁশের ঘেরা বসানো। দখলের প্রতিযোগিতা যেন নিয়মিত রুটিনের মতো হয়ে যাচ্ছেন। এভাবে যদি নিয়মিত রুটিন মতো করতে থাকেন তাহলে উপকূলীয় নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়বে ।
পরিবেশ ও মানবতা কর্মী রুহুল আমিন, সোনাদিয়ায় ইতোমধ্যে ৪ হাজার একর প্যারাবন নিধন করা হয়েছে। এমনকি সরকার পরিবর্তনের পরও ১ হাজার একর নতুন করে প্যারাবন নিধন করা হয়েছে। প্যারাবন নিধনের পেছনে সবসময় একই চক্র কাজ করে। সব দলের নেতারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে এই কাজে লিপ্ত। প্রশাসনেরও দেখে না দেখার ভান করে থাকে কারণ প্রশাসন এখানে সুবিধাভোগী। জনগণ বেশি আওয়াজ তুললে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে যা খুবই নগণ্য। এভাবে চলতে থাকলে, অপরাধীরা অধরা থাকলে ভবিষ্যতে মহেশখালীর চারপাশের প্যারাবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মহেশখালীকে রক্ষা যাবে না।
এ বিষয়ে সমাজকর্মী মোহাম্মদ নুরুল কামাল আকাশ বলেন, আমরা যারা উপকূলের সন্তান, তাদের জন্য এই বন শুধু গাছ নয় এটাই আমাদের জীবনরক্ষার ঢাল। প্রশাসন ও স্থানীয়দের এখনই একসাথে দাঁড়াতে হবে, নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর কিছু দেওয়ার থাকবে না।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ বলেছেন, “সোনাদিয়ায় অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদে সরকার প্রায় ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে বন বিভাগের একটি স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে এবং সেখানে বনরক্ষী নিয়োজিত থাকবেন।”
তিনি আরও বলেন, “ধাপে ধাপে অবৈধ ঘের উচ্ছেদ করা হবে এবং যে সকল এলাকায় প্যারাবন ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে পুনঃনবায়ন করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, নৌবাহিনী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল বাহিনী নিয়মিতভাবে সোনাদিয়া এলাকায় তদারকি করছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি নতুন করে কেউ প্যারাবন কাটে বা অবৈধভাবে দখল করার চেষ্টা করে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ইতিমধ্যে দুটি মামলায় দখলদারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন বলে জানান ইউএনও হেদায়েত উল্লাহ।



শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShasTech-IT