ঢাকা (রাত ২:১২) রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News লোহাগড়ায় ন্যাশনালিষ্ট ব্লাড ব্যাংকের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান Meghna News ট্রমালিংক ১০ বছর পূর্তিতে মতিন সৈকত এআইপিকে সন্মাননা Meghna News সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ একগুচ্ছ সুপারিশ সংস্কার কমিশনের Meghna News গণহত্যায় অভিযুক্ত আ.লীগের কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না Meghna News বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন Meghna News সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! Meghna News আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার Meghna News ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার করবো: ভিসি আমানুল্লাহ Meghna News গৌরীপুরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বর্ণিল বিদায় সংবর্ধনা Meghna News স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার

ঘুরে আসতে পারেন বৃক্ষমেলা

লাইফস্টাইল ২১৮১ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৭:৪১, ২৩ জুন, ২০২২

গাছে ঝুলছে টকটকে লাল ‘আমেরিকান রেড পালমার’। আমেরিকান আমের এই গাছের মতোই দেশি-বিদেশি রং–বেরঙের বিচিত্র সব ফুল, ফল, ঔষধি আর শোভাবর্ধক গাছ নিয়ে আগারগাঁওয়ের বাণিজ্যমেলার মাঠে চলছে বৃক্ষমেলা। বাণিজ্য মেলা ঠিকানা পাল্টালেও গাছের মেলা আগের ঠিকানাতেই আছে। গানের সুরে বৃক্ষমেলাও বুঝি ডাকছে কাছে, ‘আমি আগের ঠিকানায় আছি, সময় করে এসো এক দিন।’ আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই কি না কে জানে, প্রতিদিন মেলায় জমছে বৃক্ষপ্রেমীর ভিড়। আর এমনিতেই সময়টা গাছ লাগানোর উপযোগী।

৫ জুন শুরু হওয়া মেলা চলবে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত। খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলার মোট স্টল সংখ্যা ১১০টি।

ডালভর্তি ফলসহ রঙিন আমগাছগুলো প্রথমেই নজর কাড়ে। ভিনদেশি আমের তালিকায় আছে ব্রুনাই কিং, চিয়াংমাই, চাকাপাত, আমেরিকান রেড পালমার, কিউজাই, থ্রি টেস্ট, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, ফোর কেজি, থাই ফজলি, নাম ডকমাই, বোম্বাই গ্রিন, পুনাই, মাহাচানক, মিয়াজাকি, কেন্ট ম্যাংগো, ব্ল্যাক স্টোন, কাটিমন, তোতাপুরী, অ্যালফোনসোসহ আরও অনেক জাত।

তবে আম দেখে মুগ্ধ হলেও দাম শুনে দুই পা পিছিয়ে যেতে পারেন! ফলসহ গাছের দাম ১০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতা। মানিকগঞ্জ থেকে মেলায় এসেছেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী আবদুস সালাম। নিজের গড়া ‘দোয়েল অ্যাগ্রো’ খামারের জন্য গাছ নেবেন। কিন্তু দাম শুনে দমে গেছেন, ‘গাছ কিনে কেউ ফকির হতে চাইলে বৃক্ষমেলাই যথেষ্ট! ইচ্ছা ছিল পিকআপ ভর্তি করে গাছ নিয়ে ফিরব। কিন্তু যখন শুনি ফল ধরা কাঁঠালগাছ ৬০ হাজার টাকা, রাম্বুটান ২৫ হাজার টাকা, লটকন ১৫ হাজার টাকা, তখন সেই ইচ্ছা আর বাস্তব রূপ পায় না। তাই তো ট্যাং ফল আর অল্প কিছু ফুলগাছ নিয়েই ফিরতে হচ্ছে।’ তবে উপায়?

উপায় হলো এই—ফলসহ গাছ না কিনে বরং একই জাতের ছোট কলম চারা কিনুন, ৪০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যেই মিলবে। আরও ভালো হয় শুরুতেই যদি মেলায় থাকা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) স্টলে গিয়ে খোঁজ নিন। এখানে সরকারি রেটে পছন্দসই যেকোনো ফলের চারা ৩০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই পাবেন।

বিদেশি অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে রসাল র‌্যাসবেরি (কালো ও লাল), কালো ব্ল্যাকবেরি, কিউই, ব্রেড ফ্রুট বা রুটি ফল, কালো আঙুর, সবুজ আঙুর, গ্রীষ্মকালীন আপেল, ব্রাজিলিয়ান ব্লাক সুগারকেন, সৌদি খেজুর, ভিয়েতনামি নারকেল, পার্সিমন, অ্যাপ্রিকট, ম্যাঙ্গোস্টিন, মিরাকল ফল, ড্রাগন ফল, মিসরীয় ডুমুর, চায়না কমলা, নাগপুর কমলা, মাল্টা, থাই লম্বাটে সফেদা, থাই লাল শরিফা, থাই ডুমুর, থাই ড্রাগন, থাই করমচা, থাই ৭ পেয়ারা, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো, লোকাট, অ্যাবিউ ফ্রুট, এগ ফ্রুটসহ আরও অনেক জাত। থাই লাল কাঁঠাল, এমন কি বীজহীন থাই কাঁঠালের চারাও এসেছে এবারের মেলায়।

প্রচলিত আমের মধ্যে আম্রপালি, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাড়িভাঙা, ফজলি ইত্যাদি। আছে জাম, লিচু, কাঠলিচু, ডেউয়া, লটকন, বিলাতি গাব, আমলকী, আমড়া, বেল, সফেদা, স্ট্রবেরি পেয়ারা, কুল, ডালিম, আনার, জামরুল, বাতাবি লেবু, চালতা, করমচাসহ রয়েছে শতাধিক জাতের চারা। বারোমাসি ফলের মধ্যে আম, আতা, আনার, পেঁপে, কলা থেকে শুরু করে কলমের বারোমাসি থাই কাঁঠালের চারাও মিলছে।

আছে কাগজি লেবু, কলম্বো লেবু, হাজারি লেবু, জারা লেবু, কাঁটাহীন সিলেটি মোম লেবু ও বীজহীন লেবু, হাতের আঙুলের মতো দেখতে ফিঙ্গার লেবু। ‘সাত ভাই চম্পা’ নামের থোকা থোকা লেবুর দেখাও পাবেন মেলায়।

প্রায় প্রতিটি স্টলে এবার ফলের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ফুলের গাছ। নানা রঙে রঙিন গোলাপ, মরুর গোলাপ নামে পরিচিত অ্যাডেনিয়াম, নানারকম বাহারি হাইব্রিড জবা, নয়নতারা, চন্দ্রপ্রভা, অপরাজিতা, কুঞ্জলতা, হংসলতা, বাসরলতা, হলুদ, সাদা ও খয়েরি রঙের অলকানন্দা, ব্লিডিং হার্ট, জারবেরা, রঙ্গন, হাসনাহেনা, মুসেন্ডা, হরেক রঙের ল্যান্টেনা, বাগানবিলাস, দাঁতরাঙা, কাঁটামুকুট, অ্যারোমেটিক জুঁই, লাল-গোলাপি ও সাদা রঙের ফুরুস ফুল, মর্নিং গ্লোরি, পিস লিলি, রেইন লিলি, এমারিলিস লিলি, লিলিয়াম, কাঁঠালচাপাসহ আরও অনেক প্রজাতি।

কিছু স্টলে নন্দিনী ফুলের দেখা পাবেন, তাও অনেক কম দামে, মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। অথচ আগের বছরগুলোতে নন্দিনী ফুলের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। দাম এবার মাটিতে নেমেছে! চেনা ফুল শাপলা, পদ্ম থেকে শুরু করে ভিনদেশি অচেনা প্রায় শতাধিক জলজ ফুলের সংগ্রহও রয়েছে।

গাছে হয় না ফল, না ফুটে ফুল, তবুও পাতার সৌন্দর্যেই দিল খোশ বিলকুল! আর তাই তো ঘরের অন্দরে কিংবা বাইরে শোভা বাড়াতে চাহিদার কমতি নাই পাতাবাহার আর শোভাবর্ধক গাছের। মানিপ্ল্যান্ট থেকে শুরু করে লাকি ব্যাম্বু, স্নেক প্ল্যান্ট, ক্রোটন, ক্যালাডিয়াম, আরিকা পাম, সাইকাস, কয়েন প্ল্যান্ট, চায়না বটসহ আরও অনেক আছে পাতাবাহারের তালিকায়। আবার মন যদি চায়-বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠুক, নিতে পারেন টবে বসানো বাঁশঝাড়ও। পেয়ে যাবেন ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।

বরাবরের মতো এবারও আছে অর্কিডের জমকালো উপস্থিতি। গাছের নিচে নাই মাটি কিন্তু মাথায় ফুল ধরেছে খাঁটি। প্রথম দেখায় যে কেউ একে প্লাস্টিকের ফুল ভেবে ভুল করতে পারে! ঝুলন্ত শিকড়সহ দৃষ্টিনন্দন সব দেশি-বিদেশি অর্কিড। ডেনড্রোবিয়াম, অনসিডিয়াম, সিম্বিডিয়াম অর্কিড, মোকারা, ক্যাটলিয়া, ভেন্ডাসহ আরও অনেক জাতের অর্কিডের সংগ্রহ। দেশেই চাষ হওয়ায় বিদেশ থেকে আর আমদানি করতে হচ্ছে না। ফুলেল অর্কিডের পাশাপাশি ফুলহীন ছোট চারা, বোতলবন্দী টিস্যু কালচারের চারাও বিক্রি হচ্ছে। মিলবে অর্কিড গাছে দেওয়ার জন্য প্যাকেটজাত সার যা পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হয়।

মাথায় লাল–হলুদ গ্রাফটিংসহ মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাস। আকারভেদে ১৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। একই টবে অনেক প্রজাতির ছোট ছোট ক্যাকটাসের সমন্বয় নিতে পারবেন ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।

দেশি বট, চীনা বট, চন্দন বট, জিনসেং, কামিনী, অশ্বথ, পাকুড়, কতবেল, দেবদারু, পলাশ, বাবলা, আফ্রিকান বাওবাব, শেওড়া, নিম, অর্জুন, পাইফোড়, ফাইকাস, তেঁতুলসহ অনেক গাছেরই বনসাই মিলবে। প্রকারভেদে এসবের দাম ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা।

মেলায় প্রবেশ করতেই হাতের বাঁয়ে প্রথমে পড়বে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের স্টল। বিক্রি নয়, প্রদর্শনীই এই স্টলের প্রধান উদ্দেশ্য। এখানে রয়েছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দুর্লভ সব ফুল, ফল, ঔষধি বৃক্ষ, ক্যাকটাস, অর্কিড আর বনসাইয়ের সমাহার। সবার আগে নজর কাড়ে জলে ভাসা পদ্ম, লাল সাদা শাপলা আর আমাজন লিলি। লিলি যত না সুন্দর, তার চেয়ে পাতার সৌন্দর্যই যেন ঢের বেশি।

আছে ডুগডুগি ফল, পানাম ফল, রাবার, করবী, কুচিলা, ম্যাগনোলিয়া, বাওবাব, জারুল, সাইকাস, দেশি গাব, কেয়া, চাল মুগরা, নাগেশ্বর। আরও আছে চালতা, কফি, তমাল, পাইনাল, কাঁঠালচাঁপা, বহেরা, গোসৌভিয়া, ডুমুর, দেবদারু, কলকি, ঘোড়ানিম, অশোক, ডেফল, নাগলিঙ্গম, পান্থপাদপ (ট্রাভেলার্স পাম) ইত্যাদি। আরও আছে ভুঁইকদম, ছাতিম, আগর, শ্বেতচন্দন, বার্মা শিমুল, ঢোলসমুদ্র, রামধাম চাঁপা, উলট কম্বল, বার্ড নেস্ট, জারুল, পানবিলাস, নীল চিতা, হলুদ চিতা, লাল চিতা ফুলসহ বিচিত্র ও দুর্লভ সব গাছ।

মসলাজাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে পাবেন আদা, আম আদা, লেমন গ্রাস, হলুদ, দারুচিনি, ছোট ও বড় এলাচ, তেজপাতা, লবঙ্গ, কারি পাতা, পোলাও পাতা, পুদিনা ইত্যাদি। ঔষধি বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, কালো ধুতুরা, হরীতকী, নিম, নিশিন্দা, পানবাহার, থানকুনি, শালপানি, শতমুলী, লজ্জাবতী, তুলসী, রামতুলসী, সোনালু, কাজুবাদাম, দণ্ডকলস, মটকিলা, হাড়জোড়া বা হাড়ভাঙ্গা, অপরাজিতা, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা), নীল, শিবজটা, বড় কলকাসুন্দা বা কালকেসুন্দি, সূর্যকন্যা, নাগমণি, চন্দন, অর্জুন, বাসকসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারা। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে আছে বাঁশ, রাবার গাছ ও সিমেন্টের আস্তর দেওয়া অনুষঙ্গের প্রদর্শনীও। জানতে পারবেন কঞ্চিকলম পদ্ধতিতে বাঁশের চাষ, কাটিং পদ্ধতিতে হাইব্রিড একাশিয়ার বংশবিস্তার ও তালের চারার উত্তোলন ও রোপণ পদ্ধতি। আরও আছে কাচের বয়ামে সংরক্ষিত বিলুপ্ত উদ্ভিদের সংগ্রহ।

শুধু চারা কিনলেই তো আর হবে না, চাই চারা লাগানোর টব, মাটি, সার। মেলায় এগুলোরও ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন আকারের বাঁশ-বেত, মাটি ও প্লাস্টিক টব থেকে শুরু করে গাছের জন্য উপযুক্ত প্যাকেটজাত মাটি, মাটির বিকল্প কোকোপিট, বিভিন্ন ধরনের জৈব ও রাসায়নিক সারসহ ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার, এমনকি বালাইনাশকও মিলবে। পাবেন উন্নত জাতের ফল ও সবজির প্যাকেটজাত বীজও। বাগান পরিচর্যার দরকারি সব সরঞ্জামাদি ও কৃষিবিষয়ক বই ও দিকনির্দেশনাও মিলবে।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT