মেঘনা নিউজ ডেস্ক বুধবার দুপুর ০৩:০২, ৩১ জুলাই, ২০২৪
শাসকগোষ্ঠীর পায়ের তলার মাটি সরে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাংলাদেশকে যখন আমার কাছে এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রতিচ্ছবি মনে হয় তখন মনের ভিতরে যখন এক অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল, কোথাও শান্তির বাতাস বইছে কী না তা খোঁজ করছিলাম। এমন সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো শান্তির বয়ান। এই কথায় শান্তির গন্ধ পাচ্ছি আমি। কিন্তু এই শান্তির পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারব কী?
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুলেটে আঘাতে গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে যান। এসময় আহত শিক্ষার্থীদের তিনি শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ প্রধান করেন।
সবশেষে যে বিষয়টা আমাকে অবাক করেছে সেটা হলো— তিনি তার বয়ানে বলেছেন ” দলমত নির্বিশেষে সকলকে চিকিৎসা ও আয়-রোজগারের” ব্যবস্থা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই কথার মর্ম কী আওয়ামী লীগ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিকগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা বুঝতে পারছেন? বা বুঝলেও আদৌ আমলে নিবেন কী?
কঠিন ইস্পাতসম মানুষটি হঠাৎ করে সুর এতো নরম করার কারণ হয়তো না জানলেও বুঝতে সমস্যা নেই।
শেখ হাসিনা যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক সেটা তার বিষয়, সে বিষয়ে আমি বলছি না। তবে তিনি অন্যান্য শাসকদের তুলনায় সামান্য বেশি মানবিক। বিগত দিনের তার শাসনকার্যে তাই আমি দেখেছি। তবে তার লেফটরাইটের কিছু অসাধু ও গিরিঙ্গিবাজ আছে। এরা কেউ তোষামোদী করে, কেউ কানপড়া দেয়।
প্রধামন্ত্রীর কথা থেকে অনুধাবন করছি:
আর যার ভিতরের সামান্য মানবিকতা আছে,হৃদয় জাগ্রত আছে। যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি কখনও মানুষ হত্যার মত জঘন্য কাজের বৈধতা দিতে পারেন না। শুনেছি তিনি আল্লাহ ভীরু, গভীর রাতে তাহাজ্জুদ পড়েন।
আর যদি দেশের ও মানুষের স্বার্থে, শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো অপ্রত্যাশিত নির্দেশ
দিয়েও থাকেন তাহলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নির্বিচারে সরাসরি গুলি করে হতা-হতের বিষয়টি তিনি মন থেকে মানতে পারছেন না। তাকে এক ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছেন তার নিজস্ব বিবেক এ আমার অনুভূতি। যেহেতু তিনি দেশের প্রধান নির্বাহী। তাই তার সেই আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার আছে। নির্বাহী আদেশের ক্ষমতাবলে তিনি যা ইচ্ছে করতে পারেন।
তিনি হয়তো এখন এজন্য ঠিক মতো ঘুমোতেও পারছেন না তাই তিনি বুলেটে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে স্বশরীরে ছুটে গেলেন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে। শুনলেন বুলেট যন্ত্রণায় কাতরানো আহতদের আর্তনাদ। এরপর গণভবনে ডেকে আনলনে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়( বেরোবিতে) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাইদের পরিবারসহ নিহত প্রায় ৩৪ জনের পরিবারকে।
নিলে বুকে টেনে, দিলেন আর্থিক সহায়তাসহ সান্ত্বনা।
অনেকে এটা নিয়ে বিরুপ ভাবছেন, এটা স্বাভাবিক। কারণ তার এই ঘোষণার পরেও সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিকদের গণগ্রেফতার অভিযান চলমান।
জেলাগুলোতে তিল ধারনের ঠাঁই নেই, গ্রেফতার এড়াতে অনেকে গা ঢাকা দিয়েও পার পাচ্ছেন না।
আমার কথা হলো তিনি দলমত নির্বিশেষে আহতদের চিকিৎসা ও আয়-রোজগারে যে ঘোষণা দিলেন। এটা শান্তির প্রেসক্রিপশন। সে অনুযায়ী এপ্লাই করলে দেশে শান্তি আসবে। মানুষ শান্তিতে থাকবে।
এক কথায় তিনি বলেছেন, “আর কারো মায়ের বুক খালি না হোক তা আমি চাই, স্বজন হারানোর বেদনা আমি জানি কতটা বেদনাদায়ক। ”
কিন্তু এরপরও সারাদেশজুড়ে গ্রেফতার ও নির্যাতন চলমান। তাহলে কী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার(প্রধানমন্ত্রীর) কথা কর্নপাত করছেন না।
এখন এমনটা হলে কী দেশে শান্তি ফিরবে?
চারদিকে থমথমে পরিবেশ, ঘর থেকে বের হলেও মানুষ নিরাপদ নয়,ঘরে থাকলেও নিরাপদ নয়। মনে হচ্ছে নতুন এক অধিকৃত ফিলিস্তিনির প্রতিচ্ছবি।
দেশের সর্বস্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,আওয়ামী লীগসহ সকল বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার এই কথার মর্ম বুঝে রাজনীতি করলে অন্তত আর কেউ জুলুম নির্যাতনের শিকার হবে না। রাজপথে লাশের মিছিল থাকত না।
এই দেশের বেশির ভাগ মানুষ রাজনীতি বুঝে না। না বুঝলেও কেউ নীরবে কোনো কোনো দলের প্রতি সফট কর্ণারে থাকেন। এটা দোষের নয়,কিন্তু দেশের যেকোনো সংকটকালে সাধারণ মানুষেরই প্রাণহানি হয়েছে । এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। এবারও ছাত্র আন্দোলন ইস্যুতে প্রায় আড়াই শতাধিক সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আছে নিস্পাপ পবিত্র শিশুও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি আহ্বান :
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার,
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার, হয়রানি,
দমন- পীড়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন বন্ধ করেন। অন্তত আপনি শেষটা ভালো করুন। মানুষ মনে রাখবে। মানুষের মনমনিকোঠায় কিছুটা হলেও ঠাঁই পাবেন।
অহিংস রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করুন। সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করে গণতন্ত্র সবল করুন।
আটক সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভিন্ন মতাদর্শের নেতাকর্মীরা যেন দ্রুত মুক্তি পায় সেই পরিবেশ তৈরি করে দিন। ছাত্র হত্যার বিচার করুন। সঠিক হিসেবে নিহত ছাত্র সংখ্যার তালিকা জাতিকে দিন। প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেন তাতে আপত্তি নেই।
বুড়ো মন্ত্রীদের ছেটে ফেলুন।আপনার গোয়েন্দা সংস্থাদের বলে দিন যেন প্রতিটি টিভি চ্যানেলের সংবাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করতে। এবং তাও বলে দিন সঠিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বর্তমানে আপনার বা আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের পারদ কতো।
মানুষের পালস পিটিশন বুঝতে চেষ্টা করুন। আর কারো মায়ের বুক যেন খালি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। মনে রাখবেন রবের পক্ষ থেকে প্রতিটি উত্তম কাজের জন্য উত্তম উপহার পাবেন,আর প্রতিটি মন্দ কাজের জন্য মন্দ উপহার পাবেন।
জাতির স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দল, সাধারণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কসহ সকলে একটেবিলে বসুন। সংলাপের বিকল্প নেই। এভাবে চললে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে,মানুষ আরও চরম সংকট ও দুর্ভোগে পতিত হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ১৪ দলীয় সভায় রাশেদ খান মেনন বলেন, ” রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা উচিত ”
এ কথার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। এই মুহূর্তে দেশের ক্রাইসিস মোমেন্টে সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমন্বয়কদের নিয়ে টেবিলে বসে এই সমস্যা সমাধান করার অনুরোধ করছি।
এতে শান্তির পথ খোঁজে পেতে সহজ হবে। আর না হয় দেশ এক কঠিন সংকটের মধ্যে চলে যাবে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়দের দেখতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে একটি কথা বলেছেন।সেই কথাটি এই মুহূর্তে খুব অর্থবহ। তিনি বলেছেন, ”
ক্ষয়ক্ষতি কিছুই না, আমরাই আবার গড়ে নিবো কিন্তু একটি প্রাণও কী ফিরে পাব?”
তার এই কথা নিরীহ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রাণশক্তি আরও বাড়তে সহায়তা করবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি:
এই পবিত্র ফুলগুলো ও দেশের সোনালী মেধাগুলোকে আমরা রক্ষা করি। ওদেরকে রক্ষা করুন প্লিজ। এভাবে গুলি করে একটা জীবন একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েন না। আপনারা বলে থাকেন, ” পুলিশই জনতা,জনতাই পুলিশ “।
ছাত্রদের প্রতি নির্মম আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন আপনাদের প্রতি দেশ ও জনগণের দায়িত্ব আছে।
দেশের জনগন আপনাদের কাছে আমানত। চিন্তা করে দেখুন—
এভাবে চলতে থাকলে জাতি মেধাশক্তি হারিয়ে মেধাশূন্য হয়ে যাবে।
বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রতি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি।
এই শিক্ষার্থীরা অন্যদেশ থেকে ভেসে আসেনি, তারা এই দেশের। হতে পারে আপনারই কাছের। কেউ হতে পারে আপনার ভাই, আপনার বোন, আপনার প্রতিবেশী। গুলি করার আগে ভাবুন আপনি কাকে গুলি করছেন! গুলি করার আগে প্রথমে নিবৃত্ত করার কৌশল অবলম্বন করুন। বা হলে পরবর্তী পক্রিয়া চালান আপত্তি নেই।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার বিনীত আহ্বান :
আমাদের সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দেশ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রক্ষায় এই বাহিনী জীবনবাজি রেখে ও জীবন উৎসর্গ করতে তৈয়ার থাকে। সেনাবাহিনী
জাতিসংঘের অধীনে দুঃসাহসিক পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে শান্তি রক্ষা করে আমাদের জন্য রেমিট্যান্স ও সুনাম বয়ে আনছে।
এই বাহিনীর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও ঐতিহাসিক ও উজ্জ্বল অবদান আছে।
ওনাদের নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রপাগাণ্ডা না করে ওনাদের মতো ওনাদের কাজটুকু করতে দিন। এরপর পরিস্থিতি দেখুন। ওনাদের ভালোবাসা দিন, কাজের সুযোগ দিন।
কারণ আপনারা বা সাধারণ মানুষের সহযোগীতা ছাড়া এই বাহিনী মাঠে কাজ করতে পারবে না।
অতীতে দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে এই বাহিনী আমাদের পাশে ছিল , আগামীতেও থাকবে। সর্বোপরি এই দেশের মানুষ শান্তি চায়,নিরাপদ জীবন চায়।
দাঙ্গা হাঙ্গামার পথ পরিহার করুন, উত্তেজিত মনোভাব ছেটে ফেলুন।
সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পালস পিটিশন বুঝে, কখন কোথায় কী করবে তা ওনাদের আগাম জানা।
সবাইকে প্রতিপক্ষ বানালে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হবেন, কস্মিনকালেও পারবেন না। আপনারা নিজেদের প্রতি অতিরিক্ত বোঝা চাপাবেন না, তা থেকে বিরত থাকুন।
আপনাদের প্রতি দ্বিতীয় পরামর্শ :
আপনারা আপনাদের অধিকারের জন্য মাথা ঠান্ডা রেখে আপনাদের নিজস্ব রুপরেখার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করুন।
পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পরিহার করুন। পুলিশকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকুন। আমি বিশ্বাস করি আপনারা যদি ওনাদের সঙ্গে ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূণ আচরণ করেন তাহলে ভালো সাপোর্ট পাবেন।
সর্বশেষ কাজী নজরুল ইসলামের কথায় যদি বলি:”করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা”।আপনারা সহিংস আন্দোলনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে অহিংসতার পথে থাকুন।
শেষের আগে বলছি,” তোমাদেরই হবে জয়, মনে রাখো বল, শক্তি করো সঞ্চয়”।
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার
কবি ও সাংবাদিক