নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ট্রলারডুবিতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন,সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ) বৃহস্পতিবার রাত ০৮:১০, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামলাগোয়া গুমাইনদে বালুবাহী নৌকার সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনাটি তদন্ত করতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সোহেল রানা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন, ওসি মো.মাজহারুল করিম, কলমাকান্দা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম।
গতকাল বুধবার রাতে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন, কলমাকান্দা থানা পুুলিশ, এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর বাজার ট্রলার ঘাট থেকে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ৩০/৩৫জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।সকাল পৌনে দশটার দিকে ট্রলারটি কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের রাজনগর গ্রাম লাগোয়া গুমাই নদে যাত্রীবাহী ট্রলারটির যাওয়ার পর আরও যাত্রী ওঠাতে বালুবাহী বালাকহেডটিকে অতিক্রম করে ডান দিকে একটি ঘাটে বেড়ানোর চেষ্ঠা করে।আর ঠিক তখনি বাল্ক হেডটির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে যাত্রী বাহী ট্রলারডুবি ডুবে গিয়ে শিশুসহ ১০জন নিহত হন।
এ ছাড়া এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজন নিখোঁজ রয়েছে।নিখোঁজদের উদ্ধার করার জন্য স্থানীয় লোকজন উদ্ধার তৎপরতা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। ট্রলারডুবিতে নিহত ১০ জনের মধ্যে নয়জনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়।অপরজনের বাড়ি নেত্রকোনার সদর উপজেলার মেদনী গ্রামে।
ট্রলারডুবির ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নেত্রবোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো.আবদুর রহমান,সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ,নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী,বারহাট্টা উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান মঈনুল হক,কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল খালেক তালুকদার, সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার জনপ্রতিনিধি ইউএনও এবং তিন থানার ওসি সহ অনেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
পরে নেক্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মো.আবদুর রহমান ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ সরোজমিনে উপস্থিত হয়ে নিহতদের পরিবারে স্বজনদের মধ্যে নিহত প্রত্যেকের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ খেকে নগদ ২০হাজার টাকা,শুকনো খাবার ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ধর্মপাশার মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন,ট্রলারডুবিতে নিহত ১০জনের মধ্যে সাতজনই আমার ইউনিয়নের এবং দুইজন পাইকুরাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। আর একজনের বাড়ি নেত্রকোনার সদর উপজেলার মেদনী গ্রামে। আমাদের উপজেলার তিনটি গ্রামের নয়জন ট্রলারডুবিতে মারা যাওয়ায় গ্রামগুলোতে এখনো শোকের মাতম চলছে।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্তে থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি)আবু তালেব বলেন,ওই দিন মধ্যনগর বাজার থেকে সিরিয়ালে যেটি যাওয়ার কথা ছিল সেটি অন্য জায়গায় ভাড়ায় চলে হিয়েছিল।এ ব্যাপারে মধ্যনগর থানার ওসির সহায়তায় যাবতীয় কথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। দূর্ঘটনার পেছনে দায়ী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী সাংবাদিকদের বলেন, মদনের উচিতপুরে ট্রলাররডুবির ঘটনার পর থেকে সেখানে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে জনসচেতনতা বাড়ানো ছাড়া ট্রলারডুবির ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।আমরা সবরকম চেষ্ঠা করছি।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন,তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়ে গেছে।সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।