উলিপুরে ৩দিন নাটকীয়তার পর অবশেষে পঁচা চাল ফেরত নিলেন খাদ্য বিভাগ
সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৬:৪০, ৭ জুলাই, ২০২২
নানান নাটকীয়তার পরে, অবশেষে সেই পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে পৌর মেয়রে কার্যালয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, ইউএনও বিপুল কুমার, পৌর মেয়র মামুন সরকারসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত খাওয়ার অনুপযোগি চালগুলো ফেরত নিয়ে ভাল চাল সরবরাহ করবে খাদ্য বিভাগ। এছাড়াও পঁচা চালের নমূনা (স্যাম্পল) সংগৃহিত থাকবে এবং বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে তা পুনরায় তদন্ত করা হবে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে (০৪ জুলাই) উলিপুর পৌরসভার জন্য বরাদ্দকৃত ৩০.৮১ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করে উলিপুর খাদ্য বিভাগ। এসব চাল ট্রাক্টরে করে পৌরসভায় পৌঁছলে কিছু চালের বস্তা গুদামে ঢোকানো হয়। এরমধ্যে পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত খাবার অযোগ্য চালের বিষয়টি চোখে পড়ে পৌর কর্তৃপক্ষের। পরে চালের বস্তা বাছাই করতে গিয়ে দেখেন বিভিন্ন ধরনের চাল সরবরাহ করা হয়েছে।
কোন বস্তার চালে ছত্রাক ধরা, কোন বস্তায় দুর্গন্ধযুক্ত। এছাড়া চালের বস্তা গুলোর মুখের সেলাই দুই ধরনের ছিল। হাতের ও মেশিনের সেলাই। এ অবস্থায় পৌর মেয়র মামুন সরকার খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
পরে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান পৌরসভায় গিয়ে খারাপ চাল পরিবর্তনের আশ্বাস দিলেও তা কাজ হয়নি। ওই দিন (সোমবার) সন্ধ্যায় খাদ্য বিভাগের টেকনিক্যাল টীম এসে তদন্ত করে মৌখিকভাবে চালগুলো পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত স্বীকার করলেও, পরে রহস্যজনক কারণে তা অস্বীকার করেন।
এদিকে, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে খাদ্য বিভাগ ও চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা শুরু হয়। এ ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর নানা নাটকীয়তার শেষে বৃহস্পতিবার (০৭ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একটি সূত্র জানায়, উলিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সরকারি ভাবে ক্রয় করা ধান স্থানীয় মিলারদের মাধ্যমে ছাঁটাই করে চাল সংগ্রহ করার কথা। কিন্ত তা না করে ওই কর্মকর্তা একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাগজে কলমে তা দেখিয়ে বাহিরে থেকে সরকারী মূল্যের চেয়ে কম দামে চাল সংগ্রহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার ঈদে ভিজিএফ‘র চাল হিসেবে এসব চাল সরবরাহ করায় গোঁমর ফাস হয়ে যায়।
অপরদিকে, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিএফ‘র চাল উত্তোলন করলেও, খাওয়ার অনুপযোগি ও নিম্নমানের হওয়ায় এসব চাল বিতরণ করতে অনিহা প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর কয়েকজন চেয়ারম্যান লিখিত ও মৌখিক অভিযোগও করেছেন। পরে খারাপ চাল পরিবর্তনের আশ্বাসে বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতরণ শুরু হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হোসাইন বলেন, চালগুলো দীর্ঘদিন খামালের নিচে মেঝের কাছাকাছি থাকার কারণে আদ্রতা বেশি শোধিত হয়। ফলে চালগুলো বিবর্ণ হয়ে যায়।
পৌর মেয়র মামুন সরকার মিঠু বলেন, মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল পরিবর্তন করে ভাল চাল দিতে চেয়েছে। অধিকাংশ বস্তার স্যাম্পল নিয়ে সিলগালা করে থানা হেফাজতে রাখা হবে। মেয়র আরো জানান, মৌখিকভাবে তদন্ত টিম চালগুলো পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত স্বীকার করলেও, পরে রহস্যজনক ভূমিকা গ্রহণ করে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক যে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেন, সেটির নারাজি দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার বলেন, ঈদের আগে উপকারভোগিদের মাঝে ভিজিএফ‘র চাল বিতরণ করার জন্য এসব চাল পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, মেয়রের অভিযোগটি সত্য। এসব চাল খাওয়ার উপযোগি নয়। তবে ঈদের আগে দুস্থদের মাঝে ভিজিএফ‘র চাল পৌঁছে দেয়ার জন্য এসব চাল পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।