উলিপুরে ইট-ভাটার তাপে পুড়লো কৃষকের স্বপ্ন
সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম মঙ্গলবার ১২:২৫, ২৬ এপ্রিল, ২০২২
উলিপুরে তবকপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাদুল্ল্যাহ দহবন্দ বিলে ধার দেনা করে শ্যালো মেশিনে ৫ বিঘা জমিতে বোরোধান বুনেছিলেন হায়দার আলী দম্পতি। আশা করেছিলেন, পরিবারের সদস্যর খরচ ও গবাদিপশু পালন করে এই ফসল থেকে ভালোভাবে দিন কাটাবে একটি বছর। কিন্তু তীরে এসে তরি ডুবে গেল কৃষক হায়দার আলীর! ইট ভাটার আগুনের তাপে তার আবাদি জমির বোরোধান পুড়ে গেছে গেল ১দিন আগে। সেই সাথে শেষ হয়েছে তার দেখা স্বপ্নও।
শুধু হায়দার আলী নয় ওই এলাকার আবু তাহের, নূরুন্নবী মিয়া, মকমল মিয়া, আইয়ুব আলী, মোসলেম উদ্দিন, নাজমুল ইসলামসহ ইট-ভাটার ইটের সাথে পুড়লো শতাধিক কৃষকের সোনালী স্বপ্ন।
দহবন্দ বিলে প্রায় ১৩০ থেকে ১৫০ একর জমির বোরোধান সম্পূর্ণ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে এইচ আর ব্রিকস’র ইট পোড়ার আগুনের তাপে। শুধু ধানগাছ নয় এর প্রভাব পড়েছে আম, জাম, কাঁঠাল লিচুসহ সব ধরনের ফলজ ও বনজ গাছের উপর। ঝরে পড়েছে গাছের কচি পাতা। তাদের দাবি দ্রুত পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণসহ পরবর্তীতে যাতে এমনটা না ঘটে তার স্থায়ী সমাধান করা হোক।
এছাড়াও গুনাইগাছ ইউনিয়নে নেফড়া এলাকা ও দলদলিয়া ইউনিয়নের কাজীপাড়া এলাকায় গড়ে উঠা ইট-ভাটার তাপে প্রায় ১৫ একর জমির ধানক্ষেত পুড়ে গেছে।
একটি সূত্র জানায়, এ উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলে কমপক্ষে ইটভাটার সংখ্যা ২৫টির মত। তবে হাতেগোনা কয়েকটি ভাটার বৈধতা থাকলেও এর বেশিরভাগই অবৈধ। প্রসাশনকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই বছরের পর বছর চলছে এসব ইট-ভাটা।
নীতিমালায় অনুযায়ী অকৃষি, পতিত, ডোবা ও জনবসতিহীন ফাঁকা জমিতে ইট খোলা তৈরির নিয়ম থাকলেও সকল আইন ভঙ্গ করে কৃষি জমি, জনবসতিপূর্ণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই এ সব ইট খোলা গড়ে উঠেছে। ভূমি অফিস কৃষি জমিকে বানাচ্ছে ডোবা আর কৃষি বিভাগ ফসলি জমিকে দেখাচ্ছে অকৃষি জমি, স্বাস্থ্য বিভাগ জনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও প্রত্যয়ন দিচ্ছে স্বাস্থ্য হানি হবে না, চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন করছে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। এ ভাবে অনৈতিক পদ্ধতিতে যত্রতত্রভাবে ইট ভাটার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইট-ভাটা থেকে যতদূর চোখ যায় বিলের সব জমির ধান অনেকটাই সাদা ও হলুদ রং ধারন করেছে। ফলে উঠতি ফসলের এমন অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ওই এলাকার কৃষকেরা।
ইট-ভাটার আগুনের তাপে কৃষকদের আবাদি বোরধান ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে; দহবন্দ বিলে এইচআর ব্রিকস’র স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান তার ইট-ভাটার দ্বারা ক্ষতি হয়েছে স্বীকার করে বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে ইট-ভাটা পরিচালনা করে আসছি কোন বছর এমন হয়নি। এবার শুধু আমার ভাটায় নয়, আরও অনেক ভাটায় এমন হয়েছে। কৃষকদের সাথে বসে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ইউএনও স্যার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে, কৃষকদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করমি বলেন, আমাদের মোবাইল কোর্ট চলমান রয়েছে। ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার বিপুল কুমার বলেন, এখনও এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।