চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৭ বছর বয়সে এইচএসসি পাশ হান্নানের
এস এম সাখাওয়াত বুধবার রাত ১০:২৭, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪
ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কামাত গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মঞ্জুরের ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান। ৫৭ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত এইচএসসির ফলাফলে তিনি ৩ দশমিক ২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। চলতি বছরে তিনি উপজেলার ধাইনগর এমটিএমকে আনক টিবিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
জানা যায়, বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারিয়ে অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি আব্দুল হান্নান। পরে পরিবারের চাপ সামলাতে ২০০৮ সাল থেকে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন আব্দুল হান্নান। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৮ সালে তার এই কাজের জন্য এসএসসি পাস যোগ্যতা নির্ধারণ হলে বিপাকে পড়েন তিনি। তখন কয়েকজন সহকর্মী টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিলেও তা না মেনে ৫২ বছর বয়সে ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে। ফলে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় তেলকুপি জামিলা সরণি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে ৪ দশসিক ১১ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ধারাবাহিকভাবে ভর্তি হন ধাইনগর এমটিএমকে আনক টিবিএম কলেজে।
আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সহকর্মীদের কথা শুনে যদি ২০-৩০ হাজার টাকায় জাল সনদ কিনে নিতাম তাহলে আজকে যে আনন্দ পাচ্ছি তা কখনও পেতাম না। বুক ফুলিয়ে বলার সাহস পেতাম না যে আমি এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেছি। এমনকি শেষ বয়সে এসে আমার সম্মানহানি হতেও পারতো। তাই ছোটবেলার সেই পড়াশোনা করার স্বপ্ন ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে আবারও শুরু করেছিলাম।স্কুলে ভর্তির সময় পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন। তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও হাসি-ঠাট্টা করেন প্রতিবেশীরা। যেহেতু শিক্ষার কোনো বয়স হয় না। তাই শিক্ষা গ্রহণে বয়স বাধা হতে পারে না। ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। তারপরও সব বাধা পেরিয়ে এইচএসসি পাশ করেছি। আমার পরীক্ষার ফলাফলে এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে।’
আব্দুল হান্নানের ছেলে আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমার বাবা বৃদ্ধ বয়সে এসে পড়াশোনা করতে চাইলে আমরা তাতে বাধা দেই। কারণ এমন কাজ এই বয়সে এসে প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমার বাবা আজ যখন এইচএসসি পাশ করেছেন তখন গর্বে ও আনন্দে বুক ভরে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে মাঝেমধ্যেই পড়াশোনার বিষয়ে সহযোগিতা নিতেন আব্দুল হান্নান। প্রথম দিকে সংকোচবোধ করলেও আমি তাকে উৎসাহ দেই। এখন তিনি আমাদের এলাকার গর্ব। তাকে দেখে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হবেন।’
তরুণ প্রজন্মের জন্য উৎকৃষ্ট অনুপ্রেরণা উল্লেখ করে এমন ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রæতি দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক, শিক্ষা ও আইসিটি) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, ‘এমন সাফল্য অন্যদের অনেক বেশি উৎসাহিত করবে। এমন কোনো ব্যক্তির কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসন সবসময়ই তাদের পাশে থাকবে।’