জীবিত অবস্থায় সেফটিক ট্যাংকে ফেলা হয়েছিল শিশু রোহানকে, অপরাধী কিশোর গ্রেফতার
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ রবিবার বিকেল ০৪:৫৩, ৩ জানুয়ারী, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিশু রোহানের মরদেহ উদ্ধারের পর শিশু অপহরণ ও হত্যায় জড়িত এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার কিশোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার ১৪ নং ওয়ার্ডের আরামবাগ মাদ্রাসা মসজিদ সংলগ্ন মৃত বাবুর ছেলে নয়ন (১২)।
শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেলা গোয়েন্দা শাখার চৌকষ অফিসার এসআই আবু আব্দুল্লাহ জাহিদের নেতৃত্বাধীন গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে কিশোর নয়নকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে শিশু রোহানের মরদেহ উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মরদেহ দাফন শেষে রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মসজিদপাড়া মহল্লার মো. সুজন ও মোসা. হিরা খাতুনের ৩ বছরের ছোট্ট শিশু রোহান গত ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তার পাঁচ বছর বয়সী বড় ভাইয়ের সাথে ছাগল নিয়ে বের হয় ঘাস খাওয়াতে। কিন্তু দুই ভাইয়ের মধ্যে ছাগল ধরা নিয়ে মনোমালিন্য হলে ছোট ভাই রোহান বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং বড় ভাই ছাগল নিয়ে মাঠে চলে যায়। এ সময় তার মা বাড়িতে কাজ করছিল আর বাবা কাজের জন্য বাইরে ছিলো। এদিকে বেলা ১১টার পর বড় ভাই ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলে সাথে রোহানকে দেখতে না পেয়ে পরিবারের লোকজন খুঁজাখুঁজি শুরু করে। এদিকে ওই দিন অনেক খোঁজাখুঁজির পর রোহানকে না পেয়ে পরের দিন ১ জানুয়ারী শনিবার বিকালে সদর থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মৌখিক অভিযোগ জানানো হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো বলেন, থানায় অভিযোগ জানানোর পর থেকেই পুলিশের কয়েকটি টিম জেলাব্যাপি চিরুণী অভিযান শুরু করে। পরে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ২ জানুয়ারী শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর হাসপাতালের পেছনের সেফটিক ট্যাংক থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে মরদেহ উদ্ধারের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা অপহরণকারী কিশোর নয়নকে চিহ্নিত করে ও তার অবস্থান নিশ্চিত করে পৌর এলাকার আরামবাগ মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে নয়নকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই সদর মডেল থানায় নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে ভিক্ষাবৃত্তির জন্যই শিশু রোহানকে চিপসের প্রলোভন দেখিয়ে চুরি করেছিলো নয়ন। এমনকি ওইদিন বৃহস্পতিবার রোহানকে সাথে নিয়ে ১৫০ টাকার মতো ভিক্ষা করেছিলো নয়ন। কোলে করে ভিক্ষা করার সময় জোড়াজোড়িতে রোহানের পা দিয়ে নয়নের নিমাঙ্গে আঘাত লাগলে ক্ষোভে সে শিশু রোহানকে হাসপাতালের মর্গের পাশে সেপটিক ট্যাংকের কাছে নিয়ে গিয়ে ট্যাংকে ফেলে দেয়ার ভয় দেখিয়ে জীবিত অবস্থায় সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়।
তবে ঘটনার সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হবে এবং এর সাথে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা বের করে দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
এদিকে জানাযা শেষে নিহত শিশু রোহানের মামা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, এই ধরনের ঘটনা এর আগে কখনও হয়নি। এই হত্যাকান্ডে যারা জড়িত ছিলো তদন্ত করে আমরা তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি। যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ শফিকুল ইসলাম বলেন, ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার ধিক্কার জানায়। আল্লাহ রোহানের পরিবারকে ধৈর্য্য ধারন করার তৌফিক দান করুক।
রোহানের জানাযায় পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিব, নবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন, ওসি তদন্ত কবির হোসেন, ওসি অপারেশন মিন্টু রহমান, এসআই আবু আব্দুল্লাহ জাহিদ সহ বিভিন্ন গন্যমাণ্য বক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ময়নাতদন্তের পর পুলিশ অবুঝ ছোট্ট শিশু রোহানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে রোববার সকাল ১০টায় মসজিদপাড়া গোরস্থানে জানাজা শেষে সেখানেই দাফন করা হয়েছে।