ঢাকা (সকাল ১০:১৯) রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News লোহাগড়ায় ন্যাশনালিষ্ট ব্লাড ব্যাংকের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান Meghna News ট্রমালিংক ১০ বছর পূর্তিতে মতিন সৈকত এআইপিকে সন্মাননা Meghna News সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ একগুচ্ছ সুপারিশ সংস্কার কমিশনের Meghna News গণহত্যায় অভিযুক্ত আ.লীগের কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না Meghna News বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন Meghna News সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! Meghna News আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার Meghna News ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার করবো: ভিসি আমানুল্লাহ Meghna News গৌরীপুরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বর্ণিল বিদায় সংবর্ধনা Meghna News স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার

পাহাড়ী-বাংঙ্গালী সবার কাছে কদর বাড়ছে ঐতিহ্যবাহী খাবার সবজি বাঁশকোঁড়ল

সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, বান্দরবান সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, বান্দরবান Clock বুধবার রাত ০১:২০, ১৯ আগস্ট, ২০২০

প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাস থেকে বাঁঁশের বংশবৃদ্ধি ঘটে। এ সময় বাঁশের গোড়া থেকে গজিয়ে ওঠা কঁচি অংশকে বলা হয় বাঁশকোঁড়ল। মৌসুমের মাঝামাঝি সময় বাজারে এখন বাঁশকোঁড়লের ছড়াছড়ি। মূলত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি পাওয়া যায়। সারা দিন বাঁশবন এবং বন জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসেন আদিবাসী নারীরা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এতিহ্যবাহী একটি জনপ্রিয় খাদ্যের নাম বাঁশকোঁড়ল। এটি পাহাড়ে দারুণ উপাদেয় খাবার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার বাজারে বাঁশকোঁড়ল পাওয়া যায়। বাজারে প্রতিদিন ছোট-বড় আটিঁ সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। তবে মৌসুম শুরু এবং শেষে এর দাম চড়া থাকে।

প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাস থেকে বাঁঁশের বংশবৃদ্ধি ঘটে। এ সময় বাঁশের গোড়া থেকে গজিয়ে ওঠা কঁচি অংশকে বলা হয় বাঁশকোঁড়ল। মৌসুমের মাঝামাঝি সময় বাজারে এখন বাঁশকোঁড়লের ছড়াছড়ি। মূলত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি পাওয়া যায়। সারাদিন বাঁশবন এবং বনজঙ্গল থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসেন আদিবাসী নারীরা।

বান্দরবানের আলীকদম, লামা থানচি রোয়াংছড়িসহ শহরের মধ্যমপাড়া মারমা বাজার, বালাঘাটা, ক্যচিংঘাটা এবং কালাঘাটায় পাওয়া যায় কয়েক প্রজাতির বাঁশকোঁড়ল।

এদিকে আলীকদম বাজারের বিক্রেতা গোপাদেবী তঞ্চঙ্গ্যাঁ বলেন, মৌসুম শুরুর দিকে আকারভেদে এটি ৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত আটি হিসেবে বিক্রি হয়েছে (প্রতি আটিতে থাকে এক কেজিরও বেশি বাঁশকোঁড়ল)। তখন ভালো দাম পেয়েছি।

আলীকদম ১নং পূর্ণবাসন পাড়া থেকে রিকা তঞ্চঙ্গ্যাঁ এবং রোয়াম্ভু এলাকা থেকে অরুমিতা চাকমা দুই থুরুং (ঝুড়ি) বাঁশকোঁড়ল নিয়ে এসেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫/২০ কেজির মতো হবে। তারা জানিয়েছেন, এক আঁটি ৩০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। সোমবার সাপ্তাহিক বাজার হওয়ায় তাড়াতাড়ি বিক্রি করতে পেরেছেন তারা। বাজার দিন ছাড়া হলে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হতো।

বিক্রি করতে আসা মংহ্লা পাড়ার বাসিন্দা উমেচিং মার্মা বলেন, বন জঙ্গল এবং বাঁশবন ঘুরলে আগে প্রচুর বাঁশকোঁড়ল পাওয়া যেত। এখন চাহিদা বেড়েছে। বন জঙ্গল কমে আসায় আগের মতো পাওয়া যায় না। বাজারে ভালো দাম পেলে সংসার খরচ উঠে যায়।

সপ্তাহে তিন-চার দিন বাজারে বাঁশকোঁড়ল বিক্রি করতে আসেন রিতা তঞ্চঙ্গ্যা ও অনিমা তঞ্চঙ্গ্যা।আলীকদম বাজার এলাকার পাশ্ববর্তীর পাড়ার বাসিন্দা তারা।

বাঙালিদের পছন্দের তালিকায়ও বাঁশকোঁড়ল

এই দুই বিক্রেতা জানান, আগে শুধু পাহাড়ী আদিবাসীরাই বাঁশকোঁড়ল কিনে খেতেন। এখন বাঙালিরাও নিয়ে থাকেন। ফলে চাহিদা ও দাম বেড়েছে। কিছু ব্যবসায়ী এখন চট্টগ্রাম থেকে এসে পাইকারি হিসেবে নিয়ে যায়।

পাইকার বাঙালি ব্যবসায়ী জমির হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে সোমবার সাপ্তাহিক বাজার থেকে দিনে কয়েক মণ বাঁশকোঁড়ল কিনে নিয়ে যান তিনি। সেগুলো চকরিয়া ও  চট্টগ্রামের ফ্রী পোর্ট এবং ষোলশহর এলাকায় ভালো দামে বিক্রি হয়। বিশেষ করে শহরে বসবাসরত পাহাড়িরা কিনে থাকেন।

বিক্রেতাদের মতে, প্রজাতি ভেদে বাঁশকোঁড়ল স্বাদেও ভিন্ন রয়েছে। মিতিঙ্গ্যা এবং মূলি ছাড়া অন্য কোনো বাঁশকোঁড়ল খাওয়া যায় না। এগুলো স্বাদে তেতো হয়। সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাঁশকোঁড়ল সংগ্রহ করা যায়। মৌসুম শুরুতে চড়া দাম ছিল। এখন সহজলভ্য হওয়ায় এক আঁটি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রান্নার পদ্ধতিঃ

বাঁশকোঁড়ল দিয়ে বিভিন্ন প্রকার রান্নার কথা জানিয়েছেন রেষ্টুরেন্টে পাচকরা। শহরে উজানিপাড়ার জুম্ম রেষ্টুরেন্টের পাচক শৈমংচিং মারমা জানান, বাঁশকোঁড়ল যেকোনো মাংসের সঙ্গে সুস্বাদু হয়। এ ছাড়া ঝিড়ির কাঁকড়া অথবা নাপ্পি (এক ধরণের শুটকি পেষ্ট) দিয়ে সিদ্ধ করে বাটা মরিচ দিয়ে আদিবাসীরা বেশি খায়। এ ছাড়া বাঙালি পর্যটকদের অনেকেই বাঁশকোঁড়লের রান্না খুঁজতে আসে। তারা চিংড়ি শুটকি ও তেল দিয়ে ভাজি খেতে বেশি পছন্দ করেন।

আলীকদম বাজার এলাকার বাঙালি বাসিন্দা সুমি আক্তার জানান, তার পরিবারের সবাই গত পাঁচ বছর ধরে বাঁশকোঁড়লের রান্না খেয়ে আসছে। তিনি নিজেও রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি নামকরা হোটেলে বাঁশকোঁড়লের রান্না প্রণালী প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

বাঙালিরা মূলত সুটকি দিয়ে বাঁশকোঁড়ল ভাজি কওে খায়। এ ছাড়া ডালের সঙ্গে রান্না করেও খেতে দেখা যায়। এ ছাড়া সকল মাংসেও এটি ব্যবহার করা হয়।

শহরে চড়ুইভাটি রেষ্টুরেন্টের পাচক নয়ন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এটি শুধু পাহাড়িদের খাবার হিসেবে নেই আর। স্থানীয় বাঙ্গালি এবং পর্যটকদের পছন্দের খাবার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বাঁশকোঁড়ল দিয়ে গরু, মুরগি মাংস, চিংড়ি শুটকি, ভাজি এবং ডালসহ ১২ রকমের খাবার তৈরি করা যায়।

চড়ুইভাটি রেষ্টুরেন্টের পরিচালক রফিক আল মামুনের ভাষ্য, সুস্বাদু এবং উপাদেয় খাবার জানার পর বাঁশকোঁড়লের চাহিদা বেড়েছে। পাইকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি নিরুৎসাহিত করা দরকার। না হলে যেভাবে বনজঙ্গল থেকে বাঁশকোঁড়ল সংগ্রহ করা হয় একসময় বাঁশের সংকট দেখা দিতে পারে।

জেলা বাজার বিপনন কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাশ জানিয়েছেন, বাঁশকোঁড়লে ভরা মৌসুম জুলাই মাস। এ সময় দৈনিক ৫০০ কেজি থেকে এক টন পর্যন্ত বাঁশকোঁড়ল বিক্রি হচ্ছে। মৌসুম শুরু এবং শেষ সময় বিক্রেতারা ভালো দাম পেয়ে থাকেন। বর্তমান বাজার হিসেবে প্রতিকেজি বাঁশকোঁড়লের গড় দাম ৪০ টাকা।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এ কে এম নাজমুল হক জানান, খাবার হিসেবে স্থানীয়ভাবে বাঁশকোঁড়লের ভালো চাহিদা রয়েছে। খাদ্যাভাসের তালিকায় এটি পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবারও বটে। সমতলের মানুষদের খাওয়ার অভ্যাস না থাকলেও ঘুরতে আসা পর্যটকরা বিশেষ খাবার হিসেবে খেয়ে থাকেন




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT