উলিপুরে নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনের পরামর্শ দেয়ায় শিক্ষার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি
মোঃ কামরুজ্জামান বুধবার সন্ধ্যা ০৭:০৫, ২২ এপ্রিল, ২০২০
সাজাদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরের ধামশ্রেনী ইউনিয়নের খোয়াজ খামার গ্রামে নারায়ণগঞ্জ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়ায় এক শিক্ষার্থীকে তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার (২০ এপ্রিল) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন দাখিল করেছেন।
বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী গ্রামটিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ ঘটনায় করোনা ভাইরাস সংক্রামন রোধে সরকারি স্বাস্থ্য নির্দেশনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা যুব সমাজের মাঝে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে সম্প্রতি খোয়াজখামার গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র আবু তাহেরসহ বেশ কয়েকজন ওই গ্রামে আসেন। গ্রামে ফিরে তারা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে বউভাত অনুষ্ঠানের আয়োজনসহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে ঘোরাঘুরি করতে থাকে।
করোনা ভাইরাসের মত মহা দুর্যোগকালীন সময়ে তাদের এমন তৎপরতা দেখে একই গ্রামের আয়নাল হকের পুত্র স্থানীয় সামাজিক সংগঠন শতদলের সাধারণ সম্পাদক ও কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে সচেতন করেন এবং তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন। সেই সাথে বিষয়টি তারা স্থানীয় প্রশাসনকেও অবহিত করেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত সোমবার বিকেলে প্রশাসনের করোনা সচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ অফিসার উপপরিদর্শক বকুল মিয়া ওই গ্রামে এসে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে চলে যান।
ঐ পুলিশ কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর পরই ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্যা তাসলিমার স্বামী ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা নুর ইসলাম তার পুত্র আবু তাহের, হানিফ মিয়া ও তার পুত্র ফারুক মিয়াসহ সংঘবদ্ধ একটি দল মঞ্জুরুল ইসলামকে ধাওয়া করে।
সে ওই মুহূর্তে কোন রকম পালিয়ে আত্মরক্ষা করলেও দূর্বৃত্বরা মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়ি ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে ওই এলাকার ইউপি সদস্য মিন্টু অধিকারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আপোষ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। পরে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই দিন রাতেই মঞ্জুরুল ইসলাম উলিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) বিকেল চারটা পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি বলে মঞ্জুরুল জানান।
ইউপি সদস্য মিন্টু অধিকারী জানান, তাদের ওই কয়েকটা বাড়িতে বেশ কয়েকজন নারায়ণগঞ্জ ফেরত ব্যক্তি রয়েছে তারা সামাজিক দূরত্ব এবং কোয়ারেন্টাইন মানছেনা এ ব্যাপারে স্থানীয় যুব সমাজ তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিলেই উল্টো তাদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল তারা।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্যা তাসলীমার স্বামী নূর ইসলাম বলেন, ছোট ছোট ছেলে উল্টাপাল্টা কথা বলে কেন এজন্য একটু ধমক দিয়েছি।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোয়াজ্জে হোসেন কে বিকেল ৪টায় একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া না যাওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া নেয়া সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল সুলতান জুলকারনাইন কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমিও জেনেছি আজ দুপুরে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি।
উল্লেখ্য,ওই গ্রামে এখন চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। মানবতার পক্ষে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বর্তমানে ভূক্তভোগী মঞ্জুরুল ইসলাম দূর্বৃত্বদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।