সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলা তদন্ত পিবিআইতে
আবুল কাশেম রুমন বুধবার রাত ০৯:৪৫, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
সিলেটে বিগত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলা সিলেট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। একই সাথে পিবিআই হেড কোয়ার্টার থেকে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইর কাছে হন্তান্তর করতে এসএমপির কোতোয়ালী থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে মামলার নথিপত্র পিবিআই সিলেটের পুলিশ পরিদর্শক মুরসালিনকে বুঝিয়ে দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই শাওন।
এ ব্যাপারে পিবিআই সিলেটের ইন্সপেক্টর মুরসালিন বলেন, আমি রোববার মামলার নথিপত্র বুঝে পেয়েছি। মঙ্গলবার মামলার বাদীর সাথে আলাপ আলোচনা করেছি। (বুধবার) ঘটনাস্থল পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। মামলার তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রত্যক্ষদর্শী, স্বাক্ষীসহ সাংবাদিকমহলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাওন বলেন, আদালত ও পিবিআই হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে মামলাটি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছি।
উল্লেখ্য- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই জুমআ’র নামায শেষে নগরীর কোর্টপয়েন্টে পুলিশের গুলীতে গুরুতর আহত হন দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান এটিএম তুরাব। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক না থাকায় নার্সরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে জরুরী ভিত্তিতে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আইসিইউতে থাকাকালে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের সময় তুরাব ইন্তেকাল করেন।
এই ঘটনায় প্রথমে গত ২৪ জুলাই রাতে নিহত তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ (জাবুর) বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ সেটিকে মামলা হিসেবে না নিয়ে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। এ নিয়ে তুরাবের পরিবারসহ সিলেটের সাংবাদিক সমাজের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করে।
এরপর গত ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করেন তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ (জাবুর)। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য কোতোয়ালী থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্রেখ করে আরো ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। মামলায় উল্লেখিত আসামী হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম, উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউছার, উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখ, এসএমপির কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মিজানুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন, পরির্দশক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, এসআই কাজী রিপন আহমদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আপ্তাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পীযূষ কান্তি দে, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ও ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, শিবলু আহমদ, সেলিম মিয়া, সাজলু, আজহার, ফিরোজ ও উজ্জ্বল। কিন্তু মামলার ২ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় সর্বশেষ পিবিআইতে স্থানান্তর করা হলো।
মামলার বাদী সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ (জাবুর) বলেন, মামলা দায়েরের ২ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়া দুঃখজনক। এমনকি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী কোতোয়ালীর সাবেক ওসি মঈন উদ্দিনকে শিপনকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় আমার পরিবার বিস্মিত। আমি আশা করবো পিবিআই যেন দ্রুত তদন্ত শেষ করে এবং সকল আসামীকে গ্রেফতার করে।