ঢাকা (সকাল ১০:১৯) শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News বিআরডিবি’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মহিউদ্দিন তালুকদার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে শাশুড়ী হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল পলাতক Meghna News গৌরীপুরে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মোৎসব পালিত Meghna News সিলেট টিটিসি থেকে ২২ বছর পর বদলী : মালিক হলেন লাল লাখ টাকার! Meghna News গৌরীপুরে হুমায়ূন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী ভক্তদের Meghna News সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বালু বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় শিশু নিহত, চালক আটক Meghna News ভোলার চরফ্যাশনে মোটরসাইকেল-নসিমন সংঘর্ষে দুই বন্ধু নিহত Meghna News যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে ভাই-ভাতিজাকে কুপিয়ে যখম Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ৮ কোটি টাকার ভারতীয় অলংকারসহ আটক-১

স্বামীর নিকট স্ত্রীর হক ইসলাম কি বলে !

ইসলাম ধর্ম ২৬৬৯ বার পঠিত
Meghna News Logo

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock বুধবার দুপুর ০৩:৪৬, ১৭ জুন, ২০২০

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকীঃ     ইসলাম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আল্লাহর মনোনীত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। একজন স্ত্রী যেমন স্বামী ছাড়া পরিপূর্ণ নয় তেমনি একজন স্বামীও স্ত্রী ছাড়া পরিপূর্ণ নয়। সৃষ্টিগত এভাবেই মহান আল্লাহ পাক এই সম্পর্কটাকে একে অপরের সহায়ক এবং পরিপূরক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নারীরা পুরুষের অর্ধাংশ। (আবু দাউদ, তিরমিযী) শুধু হজরত আদম (আ.) দ্বারা এই পৃথিবী কখনোই পরিপূর্ণতা লাভ করত না আর তাই হাওয়ার (আ.) এর আগমন ঘটিয়েছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। একজন স্ত্রীর নিকটে স্বামীর যেমন কিছু হক বা অধিকার রয়েছে, তেমনি একজন স্বামীর নিকটেও স্ত্রীর কিছু হক বা অধিকার রয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন মাজীদে বলেন, পুরুষ গণ নারীদের প্রতি দায়িত্বশীল, যেহেতু আল্লাহ তায়ালা একের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তারা তাদের সম্পদ হতে ব্যয়ও করে। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৩৪)
সূরা নিসার যে আয়াতটি বিবাহের খোতবায় তেলাওয়াত করা হয়, সে আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, দেখ! তুমি ও তোমার স্ত্রীর মাঝে জন্মগতভাবে কোনো পার্থক্য নেই।
আল্লাহ পাক হাওয়া (আ.)- কে হযরত আদম (আ.) এর বুকের বাম পাশের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাই বলা হয় নারী পুরুষেরই অংশ। তোমার শরীরের যেকোনো স্থানে আঘাত লাগলে তুমি কষ্ট পাও। আঘাত যেন না লাগে, সে ব্যবস্থা কর।
সে কারণে তোমার স্ত্রীর প্রতিও লক্ষ রাখবে, সে-ও তোমার শরীরের একটি অংশ। ইজাব কবুলের মাধ্যমে সে তোমার কাছে এসেছে, তুমি তোমার শরীরের সঙ্গে যেমন ব্যবহার কর, স্ত্রীর সঙ্গেও সেরূপ ব্যবহার কর।
তুমি স্ত্রীর কাছ থেকে যেমন মহব্বতপূর্ণ মুলায়েম ও ভক্তিপূর্ণ কথা আশা কর, স্ত্রীর সঙ্গে তুমিও এমন কথা বল যেন তোমার কথা থেকে মহব্বত ও ভালোবাসা ঝরে পড়ে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা তোমাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবুও তুমি যা অপছন্দ করছ হয়তো আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৯)
হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেন, কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রাগান্বিত হবে না। কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার জন্য সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৬৯)
অন্য আরেক হাদিসে এসেছে যে, তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১১৬২)
হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও পরাবে। তার চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। তার সঙ্গে অসদাচরণ করবে না। (আবু দাউদ, হাদিস: ২১৪২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৮৫০১)
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য:
সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর ওপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হলো।
(১) দেনমোহর পরিশোধ:
নারীর দেনমোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে বলেন, তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৪)
(২) বাসস্থান:
নিরাপদ বাসস্থান বা নিরাপদ আবাসন। অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রীকে থাকার জন্য এমন একটি ঘর বা কক্ষ দেবেন, যে ঘর বা কক্ষে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া (স্বামী ব্যতীত) কেউই প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি স্বামীর মা-বাবা, ভাই-বোনও না।
স্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনে এই ঘরে বা কক্ষে তিনি তালাচাবিও ব্যবহার করতে পারেন। স্ত্রীর ব্যক্তিগত বা গোপনীয় বিষয়ে স্বামী ছাড়া কেউই নাক গলাতে পারবেন না। স্ত্রীর স্যুটকেট, ট্রাঙ্ক ও আলমারি স্বামী ছাড়া কেউ তল্লাশি করতে পারবেন না।
কোনো স্ত্রীর চলাফেরা বা আচার-আচরণ শ্বশুর-শাশুড়ির অপছন্দ হলে তাকে আলাদা বাড়ি বা ঘর করে দেওয়া উচিত। স্ত্রীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড় ধুয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও স্বামীকেই করতে হবে এবং স্ত্রীর ফুত ফরমাশ ধরার জন্য একজন কাজের লোকও রাখবেন স্বামী। (শরহে বেকায়া, কিতাবুন নিকাহ)
(৩) স্ত্রীর ভরন পোষণ:
সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর চাহিদার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে। অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজীদে বলেন, বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না। (সূরা: তালাক, আয়াত: ৭)
(৪) স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু থাকা:
স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুল সমূহকে ক্ষমা করে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়।
হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের ওপরের হাড়টি সবচেয়ে বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।, (সহীহ বুখারি)
(৫) স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল ও সতর্ক হওয়া:
হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে কোনো উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ কারণে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোনো ফেতনা রেখে আসিনি। (সহীহ বুখারী,হাদীস নং: ৪৭০৬)
(৬) স্ত্রীর প্রতি আত্মমর্যাদাশীল হওয়া:
স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছো । আমি তার চেয়ে বেশি আত্মসম্মানবোধ করি, আবার আল্লাহ আমার চেয়ে বেশি অহমিকা সম্পন্ন।
(সহীহ মুসলিম,হাদীস নং: ২৭৫৫) শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে এসেছে: দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (দারামি: ৩৩৯৭)
উক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও একজন স্বামীর ওপর স্ত্রীর আরো কিছু হক বা অধিকার রয়েছে যেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণ-পোষণ ও খরচাদি দিতে কোনো প্রকার অবহেলা না করা,
২. স্ত্রীকে দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা প্রদান করা,
৩. ভালো কাজের প্রতি উদ্ভূত করা,
৪. যাদের সঙ্গে দেখা দেয়ার ব্যাপারে ইসলামের অনুমতি রয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ প্রদান করা,
৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ প্রদান করা,
৬. কোনো প্রকার ভুল বা অসাবধানতা হলে ধৈর্য ধারণ করা,
৭. শাসন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা,
৮. মহর আদায় করা,
৯. ইসলামি শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর মন জয় করা,
১০. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা,
১১. নির্যাতন না করা, ইত্যাদি ।
পরিশেষে বলা যায় যে, স্ত্রী হলেন সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী, সন্তানের জননী; তাই স্ত্রী সম্মানের পাত্রী। স্ত্রীর রয়েছে বহুমাত্রিক অধিকার; সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য। যদি স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে এবং উভয়ের পরিবার প্রত্যেকে নিজ নিজ অধিকারের সীমানা ও কর্তব্যের পরিধি জেনে তা চর্চা করে তাহলে তা সংসারের জন্য মঙ্গলজনক হবে।মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা তোমাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।



শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT