ঢাকা (রাত ১২:০৫) শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ ইং

সিলেটের এক কিংবদন্তি এম সাইফুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী আজ



বিএনিপর স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের একাদশ মৃত্যবার্ষিকী আজ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর)। মৌলভীবাজার থেকে ঢাকা আসার পথে ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জে মাইক্রোবাস খাদে পড়ে তিনি নিহত হন।

রাজনৈতিক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হিসেবে সিলেটের আলাদা পরিচয় রয়েছে দেশজুড়ে। এ পরিচয় প্রতিষ্ঠায় সাইফুর রহমানেরও ভূমিকা কম নয়। শুধু রাজনীতির খাতিরে তিনি কখনও বিরোধী আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেননি। বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিলেটে একটি গল্প প্রচলিত রয়েছে, বিএনপির জোয়ারের সময় সংসদে আওয়ামী লীগের এক জাঁদরেল নেতার আসন টিকিয়ে রাখতে নিজেই মাঠে নেমেছিলেন সাইফুর রহমান। গল্পটির সত্যতা নিয়ে হয়তো অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, তবে সাইফুর রহমানের ব্যক্তিমানসের সাথে পরিচয় থাকলে তারা তা একেবারেই উড়িয়ে দিতে পারবেন না।

‘সাইফুর রহমান’ নাম শুনলেই সিলেটের মানুষ তাকে চিনে নেয় পরম আপনজন হিসেবে। যেখানে রাজনৈতিক পরিচয় কোনো দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সিলেট যেনো এখানে অনন্য। সিলেট নিজের কৃর্তী সন্তানদের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে চেনে না। তাই সিলেটে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, আবুল মাল আবদুল মুহিতকেও কেউ বিচার করে না তার দলীয় আদর্শের মানদন্ড তারা সিলেটের হৃদয় সিংহাসনে নিজেদের কীর্তি দিয়েই জায়গা করে নিয়েছেন।

সাইফুর রহমান বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও একাধিকবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে। তিনি ১৯৭৯ সালে মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন এবং ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

১৯৯৫  সালের ১ আগস্ট রেজিস্ট্রারি মাঠে সে সময়কার প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। সিলেটবাসী উন্মুখ হয়ে আছে সে সভা থেকে বিভাগের ঘোষণা শুনতে। কিন্তু প্রেক্ষাপটটা সিলেটবাসীরর মনের মতো ছিলো না। বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন কেবিনেটের প্রভাবশালী সদস্য সাইফুর রহমান। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, মন্ত্রীত্ব অনেক করেছেন, সিলেট বিভাগের ঘোষণা না এলে তার আর মন্ত্রিত্বের দরকার নেই। খালেদা জিয়া জানতেন সাইফুর রহমান এক কথার মানুষ। কেবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ এ সদস্যটিকে তিনি বিগড়াতে চাননি। সে সভাতে ঘোষণা আসে ‘সিলেট বিভাগ হলো’।

এক যুগের বিরহ ঘুুচিয়ে আবার এক হয় সিলেটের চার প্রান্ত। বিভাগ ঘোষণা করিয়েই কাজ শেষ হয়ে যায়নি সাইফুর রহমানের। তিনি এ বিভাগকে সাজানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। বিশেষ করে হেড কোয়ার্টার সিলেটকে তিনি মনের মতো সাজানোর মিশনে নামেন। জ্যেষ্ঠতায় ষষ্ট হলেও এক সময় তাই মর্যাদায় ঢাকা-চট্টগ্রামের পরই স্থান করে নেয় সিলেট।

এম সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে তার অনন্য আন্তরিকতার গুণে নিজেকে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের সন্তান এম সাইফুর রহমান দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী, যিনি ১২ বার সংসদে বেশ সফলতার সঙ্গে বাজেট পেশ করেছেন। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেট বিভাগেই তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেন।

১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে জন্ম নেয়া এই খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ গ্রামের মক্তব ও পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন পরিবর্তন করে লেখাপড়া করেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসে। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন। ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দুররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা যাওয়ার পথে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী গ্রামের বাড়ি বাহারমর্দনে তাকে সমাহিত করা হয়।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT