সাংসদ জারার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগ মৎস্যজীবীদের
এস এম সাখাওয়াত বৃহস্পতিবার বিকেল ০৪:৩৯, ১ আগস্ট, ২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জারা জাবীন মাহবুব এবং তার বাবা কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিল দখল, চাঁদাবাজি, হয়রানি ও লুটপাটের অভিযোগ করেছেন মৎস্যজীবীরা। বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা বাজারে ৫ শত মৎস্যজীবী পরিবারের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই অভিযোগ করেন তারা।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে মৎস্যজীবীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুমিরাদহ বিলের ইজারাদার মো. আলফাজ উদ্দিন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিয়ম মাফিক চৌধুরী ইসমাইল সাজ্জাদ জোয়াদ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী এমপি জারা জাবীন মাহবুবের বাবা কাইয়ুম রেজা চৌধুরী। আমরা তার নিকট কাছ থেকে কুমিরাদহ বিলের ইজারা নিলেও মেয়ে এমপি জারা তার নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি কওে মৎস্যজীবীদের কাছে।
তিনি আরও বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এমপি নিজেই উপস্থিত থেকে বিলের ধারে থাকা মাছের খাবার ও বিভিন্ন সরঞ্জাম লুটপাট করেছেন। এছাড়াও একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন এমপি জারা। আর এ নিয়ে প্রায় ৫ শত মৎস্যজীবী পরিবার তাদের বিনিয়োগ করা আড়াই কোটি টাকা হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে।
বিভিন্ন হুমকি-ধামকিতে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন উল্লেখ করে আলফাজ উদ্দিন আরো বলেন, এমপির সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার ও হুমকিতে আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে মৎস্যজীবী ৫ শত পরিবারের সদস্যরা। এমনকি পুলিশ দিয়েও আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এমপি জারা জাবীন মাহবুব। আমি নিজেও দুইবার অপহরণ চেষ্টার ন্বীকার। আর তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনা। আর তাই আমাদের ইজারা নেয়া বিলে আমাদেরকে বিনা বাধায় মাছ উৎপাদন করতে দেয়া হোক অথবা আমাদের ইজারা বাবদ দেয়া সমুদয় অর্থ ফেরত দেয়া হোক।
আলফাজের অভিযোগ, কুমিরাদহ বিল ছাড়াও কায়েম রেজা চৌধুরীর কাছে ১০ কোটি ৯০ লক্ষ ৭১ হাজার ২১২ টাকা পাওনা রয়েছে ৫০০ জেলে পরিবারের। যা তার বাড়ীর দফাদার রবু, কেয়ারটেকার খাইরুল ইসলাম খায়ের এবং তার প্রধান হিসাব রক্ষক মোজাম্মেল হক জানে। এছাড়া কায়েম রেজা চৌধুরীর নিজের স্বাক্ষরিত ওয়াকফ স্টেটের ভাউচার ও চৌথায় উল্লেখ্য থাকলেও তিনি টাকা দিচ্ছেন না। তার কাছে টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।
তবে বিল দখল, চাঁদাবাজি, হয়রানি ও লুটপাটের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তা মিথ্যা বানোয়াট বলছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জারা জাবীন মাহবুব। তিনি বলেন, বিলটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আলফাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেটের দেখার জন্য ম্যানেজার নিযুক্ত ছিলেন। তার হাত দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন বাবা। আর বাবার সরলতার সুযোগ নিয়েই ২০ লক্ষ টাকার চেকে ঘষামাযা করে ৯ কোটি টাকা বেশি লিখে জালিয়াতি করেছেন।
এমপি জারা মাহবুব আরও বলেন, আমার বাবার একাধিক স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আদালতে বাবাসহ তার সহযোগীদের আসামী করে বেশ কিছু অভিযোগ দাখিল করেছেন আলফাজ। সম্প্রতি শিবগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে তিনটি দায়েরকৃত মামলা দরখাস্তকারীর পক্ষে প্রতিকুল প্রতিয়মান হওয়ায় খারিজ করা হয় এবং দরখাস্তকারীর পক্ষে মাছ চাষের অনুমতির আদেশ ভ্যাকেট করা হয়। সে সাথে বিলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পেতে বাদী পক্ষ হকদার নয় বলে আদেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জারা জাবীন মাহবুব আরো জানান, তিনি ও তার পিতা দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করায় এবং অভিযোগকারী আলফাজ বরখাস্ত হওয়ায় রাগে এলাকার কিছু খারাপ লোক সাথে নিয়ে আমাদের পৈত্রিক সম্মতি জোর করে দখলের চেষ্টা করে। তিনিসহ তার কিছু লোকজন বিলটি দখল করে রেখেছে। এমনকি আমাদের অনুগত লোক ও পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করছে। এছাড়াও আমাদের স্থাপনায় আগুন দিয়েছে আলফাজ উদ্দিনের লোকজন। আদালত ও থানায় এসব অভিযোগ না টেকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনসহ যা নয় তাই করছে, যা দু:খজনক।
এদিকে মৎস্য খাদ্য লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চলতি বছরের ১৬ জুলাই মঙ্গলবার কুমিরাদহ বিলের ইজারাদার মো. আলফাজ উদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তা এখন পর্যন্ত তদন্ত হয়নি বলেও জানান আলফাজ। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইন্দ্রজিৎ জানান, আমি ওই এলাকার দায়িত্বে থাকায় বিভিন্ন কাগজ ও আদালতের আদেশ বিশ্লেষণ করে দেখেছি বিলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ চুরি করেছে আলফাজ ও তার লোকবল। তাই তাকে বারবার সর্তক করার পাশাপাশি আদালতের আদেশ ও বৈধ কাগজপত্র নিয়ে থানায় দেখা করার কথা বলা হলেও আলফাজ থানায় আসছেন না। তাকে হয়রানি বা কেউ হুমকি দিচ্ছে এমন ঘটনা সত্য নয়।