সন্দ্বীপের এমপি মিতার আমলনামা দুদকে
নিজস্ব প্রতিনিধি শনিবার সকাল ০৯:৫৬, ২৯ অক্টোবর, ২০২২
২০১৪ সালে নির্বাচনি হলফনামার তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ আসনের এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা ছিলেন ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণখেলাপি। মাত্র ৮ বছরের মাথায় সেই মিতা এখন শত কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি আর মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সন্দ্বীপজুড়ে মিতার এ সাম্রাজ্য তৈরির নেপথ্যে মূল ভূমিকায় রয়েছেন তারই সেকেন্ড ইন কমান্ড ও ক্যাশিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। এই জসিম চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সন্দ্বীপজুড়ে তৈরি করেছেন এক ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব।
সরেজমিন অনুসন্ধান, দুদক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে এসব তথ্য।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর মিতার অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট, প্রতিটি প্রকল্প থেকে ২০ শতাংশ ঘুস বাণিজ্য ও জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা-১ এর সহকারী পরিচালক মো. শফি উল্লাহকে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। দুদক থেকে এমপিকে নোটিশও দেওয়া হয়। সে সময় এ নিয়ে চট্টগ্রামজুড়ে তোলপাড় উঠে। কিছুদিনের জন্য আত্মগোপন করেন জসিম চেয়ারম্যানসহ সাঙ্গপাঙ্গরা। কিন্তু ৩-৪ মাস যেতে না যেতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সিন্ডিকেট।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, গত ৮ বছর ধরে জসিম চেয়ারম্যান তার ক্যাডার বাহিনী ও সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সন্দ্বীপজুড়ে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছেন। তার অবৈধ দাপটে ঘরছাড়া সন্দ্বীপ আওয়ামী লীগের শত শত নিরীহ নেতাকর্মী। থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান বিএ’র অসুস্থতার পর থেকে আরও বেপোরোয়া হয়ে ওঠে এই সিন্ডিকেট। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা থানা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোর প্রতিটি শাখায় বসাতে থাকেন বিএনপি-জামায়াতের লোকদের। এরা এখন সন্দ্বীপের ১৩টি ইউনিয়নে গড়ে তুলেছেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী।
দুদক সূত্র জানায়, তাদের কাছে যে অভিযোগ আছে তাতে দেখা গেছে, এমপি তার অফিসের পিয়নকে বানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ঘুস বাণিজ্যের ক্যাশিয়ার। জসিম উদ্দিন নামে পরিচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান এখন সন্দ্বীপ থানা আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ইতোমধ্যে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। এসব কারণে বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান, এমপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। প্রকাশ্যে তারা এমপি’র অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন।
এমপি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে থানা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ২০ শীর্ষ নেতার স্বাক্ষর রয়েছে। তাদের অভিযোগ ২০০৮ সালে তারা দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। সে সময় মাহফুজুর রহমান মিতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস মার্কায় নির্র্বাচন করেন। পরে ২০১৪ সালে মিতা আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর চরম প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেন। শুরু হয় নেতাকর্মীদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার।
চিঠিতে তারা বলেছেন, সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, শিবির ও বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। উপর্যুপরি হামলা চালিয়ে শত শত নেতাকর্মীকে সন্দ্বীপ ছাড়তে বাধ্য করান। নিজে ডিও লেটার দিয়ে মগধরা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান শাহীনকে হত্যা মামলায় জড়ান। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীকে মারধর, পুলিশি হয়রানি করে ঘরছাড়া করান। ক্যাডার লেলিয়ে দিয়ে সন্দ্বীপ পৌরসভার নির্বাচিত ৫ কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন। তার অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করায় নির্যাতিত-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে আরও অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে।
প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য : দুদক সূত্রে জানা গেছে, মিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সন্দ্বীপের প্রতিটি প্রকল্প থেকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ঘুস ও কমিশন বাণিজ্য করছেন। প্রকল্পের মান ভালো হোক বা খারাপ হোক সেদিকে তার খেয়াল নেই। তার কমিশন না দিয়ে কোনো ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেন না।
দুদকের কাছে দেওয়া অভিযোগ অনুযায়ী সন্দ্বীপ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৯৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে তিনি ৩ ঠিকাদারের কাছ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ কমিশন দাবি করেছেন। তার ক্যাশিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের (তৎকালীন এমপির পিএস) মাধ্যমে তিনি এই কমিশন দাবি করেন। শুধু তাই নয় ঠিকাদারি শুরু করার পর সেখানে তিনি নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করেন। এইসব ক্ষেত্রে তিনি অবৈধ হস্তক্ষেপ, প্রভাব খাটানো ও ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করেন। ঠিকাদারদের অভিযোগ, এ কারণে তারা কোনো প্রকল্পই যথাসময়ে এবং ভালোভাবে শেষ করতে পারেননি। একপর্যায়ে ওই ঠিকাদার কাজ না করেই চলে যান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৯৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ প্রকল্পটির অধিকাংশই ভেঙে গেছে। কমিশন নিয়ে দুপক্ষের বিরোধের কারণে অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।
অভিযোগ আছে, সন্দ্বীপে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বাস্তবায়ন করা দেলোয়ার খাঁ সড়ক নির্মাণের ৭২ কোটি টাকার টেন্ডারে বড় ধরনের কমিশন বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে মিতার বিরুদ্ধে। এই রাস্তার টেন্ডারে অংশ নেয় ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্যর প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও ওই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা এক জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে সরকারের ৪ কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা গেছে।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে এই রাস্তার টেন্ডার নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির পর নির্মাণ কাজেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। রাস্তা নির্মাণে জমি অধিগ্রহণেও বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, এই খাতে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক ভেঙে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন বাজারের শত শত দোকান, ঘরবাড়ি আর ভবন। ক্ষতিগ্রস্তরা এ সময় বাধা দিলে তার ক্যাডার বাহিনী তাদের বেদম মারধর করে।
জানা গেছে, এই প্রকল্পসহ সন্দ্বীপের অন্যান্য রাস্তা সংস্কারের নামে ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের গাছ কেটে নিয়ে গেছে এই বাহিনী।
দুদকের কাছে দেওয়া আরেকটা অভিযোগ হলো, গুপ্তছড়া ঘাটে জেটি নির্মাণে ব্যাপক অনয়িম-দুর্নীতি। ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ঘাটে প্রথমে একটি জেটি নির্মাণ করা হলেও নিম্নমানের ও অপরিকল্পিত হওয়ায় সেটি কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে যায়। পরে ওই জেটি সংলগ্ন ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি জেটি নির্মাণ করা হয়। এই জেটি নির্মাণের কাজটি পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিতষ্ঠানকে ডিও লেটার দেন এমপি। দুদকের কাছে অভিযোগ আছে ১০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্য করে কাজটি ওই ঠিকাদারকে পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সিন্ডিকেট।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সন্দ্বীপেও একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। অভিযোগ, ১৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পের টেন্ডারে কোনো ঠিকাদারকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। দুদকের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের ১০ শতাংশ কমিশন নিয়ে ঘনিষ্ঠভাজন এক জামায়াত নেতাকে কাজটি পাইয়ে দেয় সিন্ডিকেট। উপজেলা সদরে মসজিদটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও সেখানে না করে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বাউরিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ির কাছে নির্মাণ করা হয়।
২০১৮ সালে সন্দ্বীপের পিআইও অফিস থেকে টেন্ডার হওয়া ২৭টি ব্রিজের কাজও এমপি মিতা তার বাহিনীর মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয় বলে দুদক তদন্ত করছে। এসময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খাদিজা এন্টারপ্রাইজ কাজগুলো করার জন্য ৫ শতাংশ কম দরে টেন্ডার দাখিল করলেও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।
টেন্ডার আর কমিশন বাণিজ্যর হাত থেকে রক্ষা পায়নি সন্দ্বীপের শিক্ষা খাতও। অভিযোগ আছে স্থানীয় এমপি বাহিনীর অনুমোদন ছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজের টেন্ডার করতে পারেনি কেউ। মাত্র একটি কোম্পানি ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে সব কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে।
জানা গেছে, মুস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রি কলেজ ভবন নির্মাণের ৩ কোটি টাকার দুটি কাজ, মুস্তাফিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের ৩ কোটি টাকার কাজ, কালাপানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ৪ কোটি টাকার কাজ থেকেও মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করেছে তার বাহিনী। এছাড়া গাছুয়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের ৮৫ লাখ টাকার কাজ, বাউরিয়া জিকে একাডেমির ভবন নির্মাণে ৩ কোটি টাকার কাজে মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন নিয়ে তার পছন্দের লোককে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে দুদকের কাছে। এছাড়া কাটগড় জিএন উচ্চ বিদ্যালয়, সন্দ্বীপ মডেল হাই স্কুল ও মাইট ভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার ৩টি কাজ পছন্দের লোককে পাইয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট। জানা গেছে, এসব নির্মাণ কাজে অন্য কোনো ঠিকাদারকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ১০টি খাল খননের নামেও মোটা অঙ্কের টাকা লোপাট হয়েছে। গুপ্তছড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন বাণিজ্য হয়েছে।
সরকারি টাকায় সন্দ্বীপের ১৪টি স্কুলের দাতা সদস্য এমপি : নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য হতে হলে কমপক্ষে ২ লাখ টাকার ডোনেশন দিতে হয়। কিন্তু এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি টিআর, কাবিখা ও কাবিটা খাত থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল ও টাকা বরাদ্দ দিয়ে দাতা সদস্য মনোনীত হন। অভিযোগ আছে, গত ৬ বছরে সন্দ্বীপের গাছুয়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, মুস্তাফিচজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, বিজেড হাই স্কুল, মুস্তাফিজুর রহমান কলেজ, সাউথ সন্দ্বীপ কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিআর-কাবিখা বরাদ্দ দিলেও সে বরাদ্দ কোনো কাজে আসেনি। প্রতিটি প্রকল্প থেকে এমপি’র পিএস জসিম উদ্দিনকে ১০ হাজার টাকা করে ভাগ দিতে হয়েছে।
এমপির যত সম্পদ : দুদকের তদন্তাধীন অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি ছিলেন মিতা। কিন্তু এখন নামে-বেনামে কত টাকার মালিক তিনি নিজেও জানেন না। বর্তমানে সন্দ্বীপে তার দোতলা বিশাল আলিশান বাড়ি রয়েছে। আরও একটি দোতলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ঢাকার কাইরাইলে বহুতল ভবন, মতিঝিল ফকিরাপুলে আরেকটি বহুতল ভবন রয়েছে। গুলশান ২ নম্বরে রয়েছে আলিশান বাড়ি। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ এলাকার চৌমুহনীতে রয়েছে একটি ভবন। হালিশহর বড়পোলের পশ্চিমে একটি আলিশান ফ্ল্যাট। চট্টগ্রাম জিইসি গরিবুল্লাহ হাইজিংয়ে একটি বহুতল ভবন রয়েছে তার। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে একটি আলিশান বাড়ি। দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগগুলোর তদন্ত শুরু করেছেন তারা। তদন্ত শেষে জানা যাবে তার সম্পদের পরিমাণ কত।
এমপির বক্তব্য : এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মিতা বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি। সন্দ্বীপের উন্নয়ন করা আমার কাজ। আমি সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার করেছিল। এখনো তারা মাঠে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তারা আবার এসব অপপ্রচার শুরু করেছে।
তিনি বলেন, এই গোষ্ঠী দুদকের কাছেও মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এ কারণে দুদক আমার কাছে জবাব চেয়েছে, আমি জবাব দিয়েছি। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকল্প থেকে কমিশন বাণিজ্য করার প্রশ্নই উঠে না।
এর আগে ২৪ অক্টোবর যুগান্তরে প্রকাশিত গুপ্তছড়া জেটি এখন স্পিডবোট ঘাট, এক ঘাটেই বাণিজ্য ১২৫ কোটি টাকা শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট প্রসঙ্গে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা। সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাটের দুটি জেটি নির্মাণে ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ পানিতে গেছে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, গুপ্তছড়া জেটিটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিআইডব্লিউটিএ’র অর্থায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে স্থান নির্বাচনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। জেটি নির্মাণ শেষে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে অপ্রত্যাশিতভাবে জেটির সামনে নদীতে চর জেগে ওঠে। এ কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারছে না। জেটি নির্মাণের সময় এমন অবস্থা হবে তা বিশেষজ্ঞরা কেউ চিন্তা করেননি। এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা এবং আমাকে দায়ী করা একবারেই কল্পনাপ্রসূত। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য আমি জাতীয় সংসদে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছি। ডিও লেটার দিয়ে জানিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নৌ পরিবহণমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ হাইকোর্টের আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ নিয়ে গুপ্তছড়া ঘাটটি পরিচালনা করে আসছে। জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিএ’র দ্বন্দ্ব নিরসনে আমি একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কয়েকবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু দুটি সংস্থার দ্বন্দ্বের কারণে ঘাটটির সুফল পাচ্ছে না জনগণ। প্রতিবেদনে ১২৫ কোটি টাকার যে কথা বলা হয়েছে তা মনগড়া ও অসত্য। গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকেই এই ইজারাদার ঘাট পরিচালনা করে আসছেন। তাই ঘাট বাণিজ্যের কোনো অনিয়মের দায় আমার ওপর বর্তায় না।
সন্দ্বীপের ৬টি ঘাটের মধ্যে ৫টি বন্ধ রেখে ১টি ঘাট চালু রাখা হয়েছে মর্মে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। বাউরিয়া ফেরি ঘাট, বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট, গাছুয়া ফেরি ঘাট চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে চলমান রয়েছে। শুধু মাইটভাঙ্গা, মগধরা ও ছোয়াঘাটে চর জেগে ওঠার সেগুলো বন্ধ আছে। ব্যাখ্যায় তিনি আরও বলেছেন, আমি সন্দ্বীপের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। সিন্ডিকেট, কমিশন বাণিজ্য, গডফাদার বা মানি লন্ডারিংয়ের সব কল্পিত কাহিনীর সঙ্গে আমি আদৌ জড়িত নই। আমার নির্বাচনি এলাকা সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সরকারবিরোধী একটি গোষ্ঠীর অপপ্রচারের মাধ্যমে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।