ঢাকা (সকাল ৬:০৯) শনিবার, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


সংসার জীবন

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock শুক্রবার রাত ০২:৪৬, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরিফ ও তার স্ত্রী দুজন মিলে ভালভাবে সংসার করে যাচ্ছিল। তাদের সংসারে কোন কিছুর অভাব ছিল না। যদিও তেমন কোনো আয় ছিল না,আয় বলতে কৃষি কাজ করে যা আয় হয়। তাই দিয়ে তাদের সংসার দিব্যি চলে যায়। এমনকি টুকটাক ব্যবসা-বাণিজ্য করে আরিফ।

আরিফের সংসারটা ছিল ছোট;বাবা মা এবং তারা দুজন। আরিফের স্ত্রী একজন ভালো মনের মানুষ ছিল। সে সব সময় তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ির খেয়াল রাখতো। তাদের বিপদ-আপদে হাসি-কান্নায় সবসময় পাশে থাকতো। এ নিয়ে আরিফের গর্বে বুকটা ভরে যেতো। এমনকি আরিফের বন্ধুদের সাথে গল্প করে বলতো আল্লাহ তাআলার রহমতে আমার ঘরের সুন্দর একটা স্ত্রী পেয়েছি। যার প্রশংসা করে শেষ করা যাবেনা। আরিফের মুখে এমন প্রশংসা শুনে তার বন্ধুরাও খুব খুশি ছিল,কারণ বন্ধু শব্দটির গভীরতা অনেক ।

এভাবে আরিফের সংসারের চলতে থাকে। কয়েক বছর যেতে না যেতেই আরিফ বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে যায়। আরিফ তার সন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনবে। এদিকে তাদের ঘরে কোনো সন্তান নেই, মনে একটা দুঃখ রয়ে গেছে। আরিফ বলে আমাদের ঘরে যদি একটি সন্তান থাকতো তাহলে আমার এই ঘরটা আলোকিত হয়ে যেতো বলে সে আফসোস করে।

অনেকবার ডাক্তার দেখিয়েছে কোন কারণে তাদের সন্তান হচ্ছে না। কিন্তু ডাক্তার কোন কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা। আরিফ ও তার স্ত্রীর এমন অবস্থা যে হাল ছাড়ার পাত্র না। একদিন রাতে স্বামী, স্ত্রী দুজনে গল্প করছে তখন আরিফ বললো আমরা একটা ছেলে নিয়ে আসবো অন্যের কাছ থেকে। যারা লালন-পালন করতে পারেনা সন্তানকে। অনেকে তো তার ছেলে সন্তান কিনে নিয়ে  লালন-পালন করে। আমরা না হয় একটি সন্তান ওইভাবে নিয়ে নেবো। যাকে নিবো তাকে সন্তানের মতো মানুষ করবো। আরিফের স্ত্রী শুনে খুশি হয়ে যায় এবং বলে আমাদের বাবা মার সাথে একটু কথা বলা দরকার। আরিফ বলে ঠিক আছে চলো আব্বু আম্মুর কাছে। সবকিছু বুঝিয়ে বলে আরিফ। বাবা-মা সবকিছু শোনার পর রাজি হয়ে যায়,আরিফকে অনুমতি দিয়ে দেয় সন্তান নিয়ে আসার জন্য,আরিফ আগে থেকেই একটি সন্তানের খোঁজ জানে। তাদের ঘরে সাতজন সন্তান এবং শেষে সন্তানকে লালন-পালন করার মতো তাদের সামর্থ্য নেই। আর সেই জায়গায় গিয়ে সেই দুধের শিশুকে তারা নিয়ে আসে।

এভাবে আরিফের সুখের সংসার ভরে যায়। ছেলেকে নিয়ে আরিফ সারাদিন ব্যস্ত থাকে। হৈ-হুল্লোড় করে আস্তে আস্তে ছেলেটি বড় হতে থাকে। আরিফের আগের মতো আর শরীর নিয়ে কাজ করতে পারে না। ছেলে বড় হয়ে  গেছে সংসারের বোঝা আরিফের ছেলে জয় নিতে পারবে।

আরিফ ছেলেকে এতই ভালবাসত যে কাজ করা তো দূরের কথা একটু আঘাত লাগেতে দেয় না, ছেলেকে ধরে আদর করতো সব সময়। তাই লোকে বলে অতিরিক্ত আদরের ছেলে-মেয়ে বাঁদর হয়ে যায়।

আরিফ এর ছেলের অবস্থা তাই হয়েছে।সে লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে আর ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। একদিন আরিফের বউ বলল আমাদের ছেলে তো বড় হয়ে গেছে এবার একটা কিছু করলে ভাল হয়। তারপর আরিফ বললো ঠিক আছে। জয়ের কাছে সবকিছু শুনে, সে যদি রাজি থাকে অবশ্যই বলবো। এরপর আরিফ তার ছেলেকে ডেকে বলে তুমি পড়াশোনা করলে না বিদেশ চলে যাও। জয় বলো বাবা আমি বিদেশ চলে যাবো আর আরিফ একটিমাত্র সন্তানকে হাতছাড়া করতে চান না। নিজের কাছে রাখতে চান।

এরপর আরিফের স্ত্রী বলল ঠিক আছে যাক না বিদেশ গিয়ে আমাদেরকে সে ভালোভাবে দেখবে। এই বলে স্ত্রীর কথায় আরিফ রাজি হয়ে যায়। এমনকি তাদের সামান্য জমি ছিলো, সে জমি বিক্রি করে জয়কে বিদেশ পাঠানো হয়। বিদেশে গিয়ে কিছুদিন কথা বলার পর আরিফের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এমনকি সে অন্য কোথাও টাকা পাঠায়। নিজের বাবা-মাকে টাকা দেয় না আর এই বৃদ্ধ মানুষ এবার কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছিল না। আর ভাবতে থাকে নিজের শেষ সম্বল জমি ছিল তাও বিক্রি করে ছেলেকে দিয়ে দিয়েছে। এরপর ছেলে কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায় না। আরিফ আর তার স্ত্রী ছেলে ও সম্পত্তির শোকে পাগল হয়ে যায়।


মোঃ বুলবুল হোসেন




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT