শিক্ষককে বদলি করায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অবস্থান
এস এম সাখাওয়াত বুধবার সকাল ১১:৪৭, ৬ মার্চ, ২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বিউগল বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে অন্য জায়গায় সংযুক্ত বদলি করায় অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা। মঙ্গলবার সকালে তারা শ্রেনী পাঠদানে না গিয়ে বিদ্যালয়টির মাঠে অবস্থান নিয়ে সংযুক্ত বদলি বাতিলের দাবি জানান। এতে দুপুর পর্যন্ত এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পাঠদান ব্যহত হয়। তবে পরে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরে। আর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অনুরোধে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা তাদের কর্মসূচী বন্ধ করেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার বিরতি চলছিলো। এ সময় পঞ্চম শ্রেণীর ইসতিয়াক আহমেদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্রিকেট বল নিয়ে খেলছিল।
অসাবধানতায় ওই খেলার বলটি গিয়ে পড়ে আরেক শিক্ষার্থীর ভাতের প্লেটে। এতে ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামানকে বলটি জমা দেন। তখন তিনি বলটি অফিসের টেবিলে রাখেন। তবে কাউকে কিছু না বলে অফিস কক্ষ থেকে খেলার বলটি নিয়ে চলে যায় ওই শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলটি ফেরত নেয়ার জন্য পেছন থেকে বারবার ডাকাডাকি করতে থাকে ইসতিয়াকসহ তার সহপাঠীদের। শিক্ষকের কথা না শোনায় ইসতিয়াককে বকাদেন-কান ধরেন এবং থাপ্পড় মারেন।
আর এ ঘটনাটি পঞ্চম শ্রেনীতে পড়–য়া ইসতিয়াকের বাবা কামরুজ্জামান মেনে নিতে না পারায় অনৈতিক-শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ আরও কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়। পরে তদন্ত কমিটির সদস্য সরজমিনে ঘটনাস্থল ও এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের সঙ্গে কথা বলেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে সদর উপজেলার নশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তি করেন। ৫ মার্চ এ বিদ্যালয়ে প্রথম কার্য দিবস ছিলো এই গণিত শিক্ষকের।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছে, শাসন করার জন্য স্যার আমাদের বকাঝকা-মারধর করতেই পারে। আসাদ স্যারও তাই করেছেন। একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অভিযোগের ভিত্তিতে ভালো শিক্ষককে স্কুল থেকে অসম্মানজনকভাবে বিদায় দেয়া মোটেই ঠিক হয়নি। আমরা আবারও আসাদ স্যারের ক্লাস করতে চাই।
অভিভাবক সারোয়ার জাহান বলেন, আসাদ স্যার ভালো মানুষ। পাঠদনের সঙ্গে সঙ্গে বিনোদন দিতেন শিক্ষার্থীদের। আকস্মিকভাবে এই শিক্ষকের বিদায় মেনে নিতে পারছিনা। আরেক অভিভাবক মোশতাক আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের বাচ্চাদের বোঝাচ্ছি। তারা যেন ক্লাসে গিয়ে পড়ালেখা করে। তাও তারা মানছে না। গত সোমবার যখন শিক্ষক আসাদ বিদায় নেন তখন আমাদের বাচ্চারা মন খারাপ করে
কাঁদছিলো। তারা চাই তাদের আসাদ স্যার আবারও এই স্কুলে ফিরে আসুক।
এদিকে শিক্ষার্থীর বাবা কামরুজ্জামানের বলেন, আমার ছেলে ভালো আছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলাম চিকিৎসক বলেন কানের কোন সমস্যা হয়নি। হালকা ব্যাথা পেয়েছে। আমার ছেলেকে জোরে মেরেছে। এটা স্যার ঠিক করেনি। তবে কোচিং অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন- কোচিং না করায় আসাদ স্যারের ক্ষোভ ছিলো আমার ছেলের উপর।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইশতিয়াক একটি খেলার বল নিয়ে আরেক শিক্ষার্থীর ভাত নষ্ট করে। তাই তিনি বলটি অফিসে রেখে দেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলটি নিয়ে চলে যায়। তারপর তাদের ডাকাডাকি করলে তার আসেনি। যারা বল এনেছিলো তাদের কাছে যায়। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকি করার পরেও কথা না শুনায় তিনজনকেই মেরেছি। শুধুমাত্র শাষনের জন্য, অন্য কোন কারণে নয়।
কোচিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি এই বিদ্যালয়টি ৫৩ বিজিবির আবাসিক এলাকায়। বিজিবির অধিনায়ক বলেছিলেন- শিক্ষার্থীদের ভালো রেজাল্ট অর্জন করতে আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করতে। তাই প্রধান শিক্ষকের কাছে অনুমতি নিয়ে আলাদা ক্লাস নিতাম। কাউকে কখনই ক্লাসের জন্য চাপ দেয়নি।
বিউগল বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক আহমেদ বলেন, বাচ্চারা দুপুর পর্যন্ত ক্লাসে যায়নি। তারপর বাচ্চারা শান্ত হয়ে ক্লাসে অংশ নেয়। অভিভাবকরাও শান্ত হন। কোচিং বিষয়ে বলেন, করোনা কালিন সময়ে বিজিবির সন্তানদের জন্য কোচিং চালু করা হয়। তাই এখনও কোচিং হচ্ছে। শিক্ষার্থী ইশতিয়াক এই কোচিং এর ছাত্র ছিলো না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল কুমার কুন্ডু বলেন, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অবস্থান কর্মসূচী করছে এমন খবর পেয়ে বিদ্যালয়টি গিয়েছিলাম। পরে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে তদন্ত সাপেক্ষে সংযুক্তি বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে দুপুরে এ বিষয়ের সংবাদ সংগ্রহে বিউগল বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বিজিবি সদস্য স্বরুপসহ আরো কয়েকজন সংবাদকর্মীদের বাধা প্রদাণ করেন ও কারো কারো মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।