ঢাকা (রাত ৩:১৭) সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ ইং

উপজেলা নির্বাচন-১৯: রাত পোহালেই আদিতমারীতে ভোট

মেঘনা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল



ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ ভোট গ্রহন শুরু হওয়ার আর মাত্র বাকী কয়েক ঘন্টা। অনেক ষড়যন্ত্র, ঘাত, প্রতিঘাত পেরিয়ে আদিতমারী উপজেলা বাসী দিতে যাচ্ছে তাদের মহামূল্যবান রায়।

স্থগিত হওয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন রোববার (৫ই মে) অর্থাৎ আগামীকাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই জেলাবাসীর নজর এখন এই উপজেলার দিকে। সব দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ উপজেলার নির্বাচন। গত শুক্রবার রাত ১২ টায় শেষ হয়েছে প্রচারণা। এখন চলছে শেষ মহুর্তের হিসাব-নিকাশ।

এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে  নৌকা প্রতীক মোঃ রফিকুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতীক  ফারুক ইমরুল কায়েস ও জাতীয় পার্টি লাঙ্গল নিগার সুলতানাসহ ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

৬৮ টি ভোট কেন্দ্রে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬১২ জন মহিলা ও পুরুষ ভোটার ভোট প্রয়োগ করবেন।

কে নির্বাচিত হবেন, চলছে শেষ মহুর্তের চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় করেছেন উঠান বৈঠক ও সভা সমাবেশ। করেছেন নিজেদের আলোচনা, একে অপরের সমালোচনা। এদিকে স্বতন্ত্র মোটর সাইকেল প্রতীক ইমরুল কায়েস ফারুকের পক্ষে কাজ করেছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বড় একটা অংশ রয়েছে তার সাথে। তরুণ জননেতা হিসেবে ফারুকের এলাকায় রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। আর এ জনপ্রিয়তা কাজে লাগাতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল আলমের পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। তার সাথে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এরশাদ হোসেন জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাখোয়াত হোসেন সুমনসহ আরও অনেকেই। রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ। অপরদিকে সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ দলীয় নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলায় দলীয় নেতাকর্মীর অনেকেই পড়েছেন বিপাকে।

তবে এখানকার সাধারন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, প্রথম অবস্থায় ইমরুল কায়েস ফারুকের শক্ত অবস্থান থাকলেও জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে নৌকার প্রচারনা করায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল আলম। তবুও মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সাধারন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সঠিক ও রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হলে সতন্ত্র প্রার্থী (মোটরসাইকেল মার্কা) ইমরুল কায়েস ফারুক বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়ন এর বামনেরবাসা বাজারের আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমরা চাই সঠিকভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হোক এবং যাতে আমরা আনন্দের সহিত ভোট দিতে পারি।

ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে মূলত ত্রিমুখী লড়াই হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সাধারন ভোটাররা মনে করছেন। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত, উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মাইদুল ইসলাম বাবু (উড়োজাহাজ মার্কা), উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের সন্তান ডাঃ রাসেল মাহফুজ (টিউবওয়েল মার্কা) ও কুমড়িরহাট এলাকার বাসিন্দা চিত্ত রঞ্জন রায় (চশমা মার্কা) এর মধ্যে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন অংশ নিলেও মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রফিকুল আলম ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাতিজা তরুণ প্রার্থী ইমরুল কায়েস ফারুকের মধ্যে তুমুল লড়াই হবে বলে সাধারন ভোটাররা মনে করছেন।

অন্যদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সবার নজর জাগোনারী প্রগতি সংস্থার পরিচালক শামসুন্নাহার মিলি (পদ্দফুল মার্কা)। এখানকার ভোটাররা মনে করছেন মিলি এবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন। তবে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোজিনা বেগম সম্পা (হাঁস মার্কা) দীর্ঘ ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দলবদল ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠায় অনেক ভোটাররা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে নির্বাচনে তারা মনে প্রাণে চাচ্ছেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও শান্তিপুর্ন পরিবেশ। চাচ্ছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভিগ্নে ভোট দিতে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে বলে জারিয়েছেন সাধারন ভোটাররা।

প্রসঙ্গত:  গত ১০ মার্চ প্রথম দফায় আদিতমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও  নাশকতার আশঙ্কায় নির্বাচন স্থগিত করেছিল নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ২৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আরও অতিরিক্ত ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে সার্বক্ষনিক কাজ করবে। এছাড়াও প্রতি ইউনিয়নে ৪ টি করে বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোনজেরুল হক।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT