রাণীনগরে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা অধ্যয়ন কেন্দ্র থেকে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তরুণ রবিউল
নিজস্ব প্রতিনিধি সোমবার রাত ১১:১২, ২ মার্চ, ২০২০
আবু ইউসুফ,নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে একান্ত নিজ উদ্যোগে গড়ে
তোলা অধ্যয়ন কেদ্র থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছেন গ্রামের তরুন যুবক রবিউল
সরদার। উপজেলার একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল গুয়াতা বাঁকা গ্রামে নিজ বাড়ীর বারান্দায়
“মেঘনা অধ্যয়ন কেন্দ্র” গড়ে তুলেছেন তিনি। এতে পড়া লেখার সুযোগ পেয়ে ঝড়ে
পড়া থেকে উপকৃত হচ্ছে ওই গ্রামের ৩ থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুরা। তরুন রবিউল ওই
গ্রামের কৃষক আলম সরদারের ছেলে ।
তরুন রবিউল জানান,তিনি ছোট বেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল
থেকে কাদা মাটি পারি দিয়েবিদ্যালয়ে গিয়ে পড়া লেখা করেছেন। তার গ্রাম থেকে
প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। চলা চলের তেমন রাস্তা
না থাকায় গ্রামের লোকজন যেমন একদিকে হাজারো দূর্ভোগ পারি দিয়ে মালা মাল
পরিবহনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম করছেন। অন্য দিকে গ্রামের শিশুরা বিদ্যালয়
মূখী হতে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের অনিহা দেখা যায়। খড়া মৌসুমে যে কোন পথে
পায়ে হেটে চলা চল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে একে বারেই ঘড় বন্দি অবস্থা দাড়ায়
গ্রাম বাসির । পড়া লেখা থেকে ঝড়ে পড়া রোধ করতে এবং গ্রামকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত
করে গড়ে তুলতে অধ্যয়ন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন তিনি। তিনি জানান, পড়া
লেখার পাশা পাশি বিভিন্ন মূনীষিদের লেখা বই পড়ে অধ্যয়ন কেন্দ্র স্থাপনের স্বপ্ন জাগে
তার মনে । পারিবারিক ভাবে আলোচনা করে এবং গ্রামের মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলে গত
২০১৮ সালে নিজ বাড়ীর বারান্দায় তার মায়ের নামে “মেঘনা অধ্যয়ন কেন্দ্র” গড়ে তোলেন।
প্রথম দিকে তেমনটা সারা না মিললেও পরবর্তিতে সচেতনতা সৃষ্টি হয় গ্রামের
লোকজনের মধ্যে। ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন, কৃষক
বাবা আলম সরদার,মা মেঘনা বিবি এবং একমাত্র ছোট বোন রিয়া বানু । বর্তমানে তার
বিদ্যালয়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। রবিউল আরো জানান, সরকারের শিক্ষা নীতিতে
“সবার জন্য শিক্ষা ” কর্মসূচী থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়
। একটি সু-শিক্ষিত জাতি গঠনে সরকারের পাশা পাশি সামাজিকভাবে সবাইকে
এগিয়ে আসতে হবে । আর সেই দায়বদ্ধতা থেকেই শিক্ষা ও জ্ঞানাজর্নে ছাত্র-ছাত্রীদের
প্রতিভা ও মেধার সমন্বিত উৎকর্ষ সাধনের প্রত্যয়ে ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুদের নিয়ে
“মেঘনা অধ্যয়ন কেন্দ্র” গড়ে তুলেছেন তিনি। শিশুদের কেন্দ্র মূখী করতে প্রতিনিয়ত
চিপস্ধসঢ়;,চকলেটসহ নানা ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়। গত দু’ বছর ধরে তার বিদ্যালয়
থেকে পড়া লেখা শেখা শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে
দিচ্ছেন । তরুন রবিউল বর্তমানে পড়া লেখার পাশা পাশি বগুড়ায় একটি বে সরকারী
প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। আর চাকুরীর সমস্ত বেতন ব্যয় করছেন নিজ বাড়ীতে গড়ে
তোলা অধ্যয়ন কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পিছনে। পড়া লেখার জন্য তিনি বেতন ভুক্ত এক
জন শিক্ষিকা রেখেছেন। ওই শিক্ষিকার পাশা পাশি ছোট বোন রিয়া বানুও সার্বিক
সহযোগিতা করছেন পাঠদানে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত পড়া লেখা চলে
কেন্দ্রটিতে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে এবং বিনা মূল্যে বই দিয়ে বিদ্যালয়ে
যুগোপযোগী ও বাস্ত মূখি এবং হাতে কলমে শিক্ষাদান করানো হচ্ছে শিশুদের । এছাড়া
ছেলে-মেয়েকে শিক্ষাদানে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি মাসে মা সমাবেশ করা হয়। মাত্র ২২ বছর
বয়সি এই তরুন রবিউল বলছেন,গ্রামের সকল ছেলে-মেয়েদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে
মফস্বল এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল “গুয়াতা বাঁকা” গ্রামকে শিক্ষার রোল মডেল হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষেই “মেঘনা অধ্যয়ন কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
এব্যাপারে ওই গ্রামের চাঁন মিয়া জানান,তরুন রবিউলের উদ্যোগে সমাজে অনেকটা
পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। তার কারনে সবার মাঝে শিক্ষা সর্ম্পকে সচেতনতা সৃষ্টি
হচ্ছে এবং সবাই আগ্রহী হচ্ছে । তবে শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক উন্নয়নেও সে
নানান রকম ভূমিকা পালন করছেন।
গুয়াতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা পারভিন বলেন, তরুন রবিউলের
মেঘনা অধ্যয়ন কেন্দ্র থেকে প্রায় ৮ জন শিক্ষার্থীকে আমার বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেনীতে
ভর্তি করে দিয়েছে। শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করালে অক্ষর জ্ঞান,লেখা শিখাতে শিক্ষকদের যে
পরিশ্রম করতে হয় ,রবিউলের কারনে তা আর করতে হচ্ছে না। এছাড়া শিশুদের পড়া ও লেখার মান
খুবই সন্তোষজনক এবং এই শিশুরা ভবিষ্যতে আরো ভাল করবে।
রাণীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার শামসুজ্জামান তরুন
রবিউলের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শিক্ষিত জাতি গঠনে সরকারকে যেভাবে
সহায়তা করছেন তা অত্যন্ত প্রসংশনীয় । এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তরুন রবিউলকে
সাধ্যনুসারে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া প্রতিটি গ্রাম বা মহল্লা থেকে এমন
তরুন,যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।