ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:৫৫) বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

রাণীনগরে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সোনালী মুরগি পালন

রাণীনগরে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সোনালী মুরগি পালন। ছবিঃ এম এ ইউসুফ, রাণীনগর, নওগাঁ প্রতিনিধি।
রাণীনগরে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সোনালী মুরগি পালন। ছবিঃ এম এ ইউসুফ, রাণীনগর, নওগাঁ প্রতিনিধি।

<script>” title=”<script>


<script>

এম এ ইউসুফ, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে একই গ্রামে তিন জন খামারীর ৩৩ হাজার সোনালী মুরগী পালন করছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প পরিসরে প্রায় ১০ হাজার মুরগি পালন করা হচ্ছে। রোগবালাই ও মৃত্যু ঝুকি কম হওয়ায় সোনালী মুরগি পালনে তেমন কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। এছাড়াও বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা ও কাঙ্খিত বাজার দর থাকায় দিনদিন সোনালী মুরগি পালনের প্রসার ঘটছে এই উপজেলায়। বাচ্চার দাম ও বাজার মূল্য স্বাভাবিক থাকলে সোনালী মুরগি পালনের পরিধি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে এমনটায় ধারণা করছেন খামারীরা। পুরো উপজেলা মিলে বছরে সোনালী মুরগি থেকে প্রায় ২শ মেট্রিকটন মাংস উৎপাদন হয় বলে স্থানীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তর বলছে।

জানা গেছে, উপজেলা সদরের সিম্বা গ্রামের মৃত আব্বাস আলী আকন্দ’র ছেলে আবু সাইদ টিংকু ও তার ছোট ভাই সানোয়ার হোসেন রিংকু গত প্রায় ১১ বছর আগে ব্রয়লার মুরগি পালন শুরু করে। বছর খানিক পর ব্রয়লারে লোস হওয়ায় স্বল্প পরিসরে সোনালী মুরগি পালন শুরু করে। রোগ-বালাই ও মৃত্যু ঝুকি কম থাকায় এবং বাজার দর ভাল পাওয়ায় ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকে। বর্তমানে তারা দুই ভাই আলাদা ভাবে মুরগি পালন করছেন। তাদের দেখাদেখি বেকারত্ব ঘোচাতে খামারী আবু সাইদের শালক সোয়েব ইবনে প্রিন্স প্রায় ৩ বছর আগে সোনালী মুরগি পালন শুরু করেন। এই তিন জন খামারী বর্তমানে ৫ টি ফার্মে প্রায় ৩৩ হাজার সোনালী মুরগি পালন করছেন।

খামারী আবু সাইদ টিংকু’র ২ টি ফার্মে প্রায় ১৫ হাজার, সানোয়ার হোসেন রিংকু’র ২ টি ফার্মে ৮ হাজার ও সোয়েব ইবনে প্রিন্সের ১ টি ফার্মে ১০ হাজার সোনালী মুরগি রয়েছে। বেশ কিছু দিনের মধ্যেই মুরগি গুলো খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে। খামারীরা এই মুরগি গুলো সাধারণত ৮শ গ্রাম থেকে সাড়ে ৯শ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হলেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। সেই অনুপাতে স্থানীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তর বলছে, শুধুমাত্র সোনালী মুরগি থেকে চলতি বছরে রাণীনগর উপজেলায় ২শ মেট্রিকটন মাংস উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। যা দেখে আগামীতে উপজেলায় সোনালী মুরগি পালনে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত যুবকরা উৎসাহি হবে এবং এই উৎপাদনের হার দিনদিন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন প্রাণীসম্পদ দপ্তর।

স্থানীয় মুরগি খামারী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাণীনগর উপজেলায় সোনালী মুরগি পালন শুরুর দিকে বাচ্চা’র বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৭ টাকা পিচ। বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩২ টাকা পিচ বিক্রি হচ্ছে। বাচ্চা মুরগি প্রায় ৬৫ দিন থেকে ৭০ দিন পালন করলে প্রায় ৮শ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের হয়ে থাকে। যার খরচ হয় প্রায় ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা পর্যন্ত (সর্বসাকুল্যে)। অধিকাংশ সময় পাইকারি বাজার মূল্য থাকে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত। খুরচা বাজারে এই মুরগি গুলো ২১০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা পর্যন্ত বেচা-কেনা হয়। খামারীরা বছরে ৪ থেকে ৫ বার মুরগির চালান তুলে থাকেন। মুরগি পালনে সব মিলে ¯^ল্প আয় হলেও রাণীনগর উপজেলার খামারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে এই মুরগির গাম্বুরা রোগের প্রাদুর্ভাবটা বেশি থাকে। বাচ্চা ক্রয়ের পর থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা, মানসম্মত খাদ্য, সঠিক সময়ে খাবার প্রদান, ফার্মের উপযুক্ত আদ্রর্তা বজায়, সার্বক্ষিক নজরদারী ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক থাকলে একই খরচে আরো অনেক অংশে মাংস উৎপাদন করা সম্ভব বলে খামারীরা জানান।

উপজেলার সব চেয়ে বড় মুরগি খামারী আবু সাইদ টিংকু জানান, দীর্ঘদিন যাবত এই ব্যবসার সাথে জরিত থেকে লাভ লোস দুইটারই দেখো পেয়েছি। ব্যবসা শুরুর দিকে প্রশিক্ষণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে বর্তমানে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছি। আমার দেখা এই এলাকার অনেক খামারী এই ব্যবসা থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছে তার কিছু চিহিৃত কারণ রয়েছে। যেমন, অপরিকল্পিত ভাবে ফার্ম নির্মাণ, মান সম্মত বাসস্থানের পরিবেশ তৈরি, বায়ু সিকিউরিটি না মানা, গুনগত মানসম্পূর্ণ খাদ্য বাচাই করতে না পারা, স্বল্প পুঁজি ও অদক্ষ শ্রমিক এর কারণে মুরগি পালনে বেশিভাগ খামারী অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও পুঁজি হারিয়ে পোল্ট্রি ব্যবসা থেকে সড়ে যাচ্ছে।
খামারী সানোয়ার হোসেন ও সোয়েব ইবনে প্রিন্স জানান, সরকার পর্যায় থেকে বাচ্চার দর কমে মূল্য নির্ধারণ, খাদ্যের দাম স্বাভাবিক, খাদ্যের গুনগত মান ঠিক রাখতে বাজার মনিটোরিং এর ব্যবস্থা এবং পাইকারি বাজার দরের উন্নতি হলে আমাদের ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে এই ব্যবসা থেকে ভাল আয় করা সম্ভব।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা: মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, রাণীনগরে পোল্ট্রি শিল্পের উজ্জল সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলায় হাঁস, মুরগি ও কবুতর থেকে মাংস উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে বেশি মাংস উৎপাদন করছেন স্থানীয় খামারীরা। লক্ষ্যমাত্রার সিংহভাগ মাংসই সোনালী মুরগি থেকে উৎপাদন হচ্ছে। আগামীতে এর পরিধি আরো বাড়বে বলে আশা করছি।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT