মেঘনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার বৃহস্পতিবার দুপুর ০৩:৫১, ২ মে, ২০২৪
প্রতীক পাওয়ার পর থেকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। কড়া রোদ উপেক্ষা করে ঘাম ঝরাচ্ছেন আর বিরামহীন প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করতে দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
তবে এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন ৪ জন, অপরদিকে সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন— বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার(মটর সাইকেল), সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম ( দোয়াত-কলম), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন শিশির( কাপ পিরিচ), সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রমিজউদ্দীন লন্ডনী(ঘোড়া) ও সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম তাজ(আনারস)।
বেশ কিছু সাধারণ ভোটারদের ভাষ্যমতে এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নতুন কাউকে বেছে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
যদি এমনটাই হয় তাহলে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এই নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে বাধাগ্রস্ত হবেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদারের অনুকূলে গেল নির্বাচনে গণজোয়ার ছিলো, এবার কেউ কেউ তার পক্ষে বললেও আবার বিপক্ষেও বলেছেন। কেনো বিপক্ষে বলেছেন এমন কারণ খোঁজতে গিয়ে জানা যায়— এবার নির্বাচনে উপজেলা পরিষদের সাবেক সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম তার( রতন শিকদার) পক্ষে মাঠে তেমন ভূমিকায় নেই, এই উপজেলায় শফিকুল আলমের রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। ভোটের সমীকরণ বলছে যে কেউ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে হলে তার নীরব সমর্থন পজেটিভ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান তার পাঁচ বছরের মেয়াদে উপজেলায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করলেও তার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন কিছু কিছু ভোটাররা। এই অভিযোগের কিছুটা মিল পাওয়া যায় মেঘনার মানচিত্রে তাকালে, উপজেলার কোথায়ও কোথায়ও রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। এছাড়া আর তেমন কোনো নেতিবাচক সমালোচনা নেই তাকে নিয়ে। তার আমলে এই উপজেলায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এসব অভিযোগ নেই। তিনি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করছেন। তবে সহজ বিজয়ের পথ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও তা কাটিয়ে ওঠতে তিনি বিরামহীন প্রচারণায় ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে চেষ্টা করছেন।
যেসব বাধা সামনে দেখা যায় তা কাটিয়ে ওঠবে বলে তার পক্ষের লোকজন মনে করেন। তিনি বিজয়ী হওয়ার পথে পজেটিভ দিক হলো মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী উপজেলার পশ্চিমের একজন মাত্র প্রার্থী। আর চারজন প্রার্থী হলেন উত্তর ও পূর্ব এলাকার। যদি এলাকাভিত্তিক ভোটাররা চ্যালেঞ্চ নেয় ও লুটেরচর ইউনিয়নের ভোটাররা যদি রতন শিকদারের পক্ষে একাট্টা হয়ে কাজ করে তাহলে মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়াটা স্বাভাবিক পক্রিয়া। এছাড়া আটটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে তার পক্ষে সমর্থন আছে পাঁচজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এটা একটা বিশাল পজিটিভ দিক। পরিবেশ এর বিপরীতে গেলে হয়তো ভিন্ন কিছু হতে পারে। দিন যত গড়াবে মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ভোটের মাঠের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন তার কর্মীসমর্থকরা।
তবে সুশীল সমাজের পছন্দের তালিকার প্রার্থী হিসেবে সাবেক কেন্দ্রীয় তুখোর ছাত্রনেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য কাপপিরিচ প্রতীকের প্রার্থী নাসিরউদ্দিন শিশিরের নামও রয়েছে।
পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন। জেলা পরিষদ সদস্য থাকাকালে এই উপজেলার মসজিদ মাদ্রাসা ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে উন্নয়ন করেছেন। উচ্চ শিক্ষিত ও মার্জিত ব্যাক্তি, খুব সহজে সরল আবেদনে গণসংযোগ করে ভোটারদের মন জয় করে নিজের ভোটের পাল্লা ভারি করছেন।
এই নির্বাচনে শেষাবধি চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি ত্রিমুখী লড়াই হয় তাহলে কাপ পিরিচের প্রার্থী নাসিরউদ্দিন শিশিরও বিজয়ী হতে পারেন বলে তার কর্মী সমর্থক ও সাধারণ ভোটারা মনে করছেন ।
দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। তিনি এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো নির্বাচন করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে এবার লোকমুখে তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা নেই।
জনরায় নিজের পক্ষে আনতে গণসংযোগ ও পথসভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এই প্রতিদ্বন্দ্বী । তার কর্মীসমর্থকদেরও আশা ভোট সুষ্ঠু হলে আব্দুস সালামই হবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী রমিজউদদীন লন্ডনীও এই নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় আছেন। যদি সুষ্ঠু ভোট হয় বিএনপির সাধারণ ভোটাররা যদি ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যায় তাহলে তিনিও বিজয়ী হতে পারেন বলে জানানা তার কর্মী সমর্থকরা। কারণ বিএনপির নীরব ভোট রয়েছে এই উপজেলায়, ভোটাররা ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে গেলেই তার ভোটের পাল্লা ভারি হতে পারে। ফলাফল আসতে পারে অনুকূলে। তার কর্মী সমর্থকরা মনে করেন এবার ভোটারদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছেন রমিজ উদ্দিন লন্ডনী।
এই নির্বাচনে আরেক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকের প্রার্থী তাজুল ইসলাম তাজ।
তিনি কর্মীবান্ধাব নেতা হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত।
মানুষের উপকারে ঝাপিয়ে পড়েন। একটি পক্ষ তার প্রতি রয়েছে অনিহা। কেউ কেউ চাচ্ছেন না তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোক। তবে সরেজমিনে ভোটের মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বেশ কিছু ভোটাররা তাকে চাচ্ছেন এই উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে।
তার কর্মীসমর্থকদের ভাষ্যমতে, এবারের এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাররা যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পান তাহলে আনারস প্রতীকের প্রার্থী তাজুল ইসলাম তাজকেই ভোট দিবেন। তার জনপ্রিয়তার বর্তমান অবস্থান যদি ভোটের দিন পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন তাহলে ভোটের প্রতিযোগীতায় আনারস প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেন বলে মনে করছেন তার কর্মীসমর্থকরাও।
এছাড়াও ভাইসচেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন— এদের মধ্যে বই প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান মিলন সরকার, চশমা প্রতীক নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ ও তালা প্রতীক নিয়ে ছাত্র লীগ নেতা রবিন মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটের মাঠে লড়াই করছেন।
টানা দুইবারের বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান দিলারা শিরিন হাঁস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, নাসরিন সুলতানা কলস প্রতীক, গাজী মুক্তা জাহান প্রজাপতি ও হালিমা আক্তার সিমু ফুটবল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নদী মাতৃক এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ১ শত ১৬ জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৫৪ হাজার ৬৯৩ ও নারী ভোটার সংখ্যা ৫০ হাজার ৪ শত ২৩ জন। ৩৮ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে বুধবার।