ভিজিডি’র চাল বিতরণে অনিয়ম,বস্তায় ওজনে কম
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ মঙ্গলবার দুপুর ০২:২৪, ৫ জানুয়ারী, ২০২১
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নে ভিজিডি কর্মসূচির চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতি বস্তায় ৩০ কেজি চাল থাকার কথা থাকলেও সেই বস্তায় রয়েছে ২৬ কেজি (প্রায়)।
বর্তমানে ৩৪৩ জনের পুরো দুই মাসের চাল দেওয়া হয়নি, এছাড়াও ৪ মাস বা ৫ মাসের চাল পায়নি অনেক সুবিধাভোগীরা। প্রতিমাসে যেগুলো পেয়েছে তাতেও ৭ থেকে ৮ কেজি করে কম দেওয়া হয়েছে। চাল কম দেওয়ার প্রতিবাদ করলে ধমক দিয়ে বের করে দেয় সুবিধাভোগীদের। সত্যতা যাছাইয়ে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উক্ত ইউনিয়ন পরিষদে সুবিধাভোগীদের মাঝে চাল বিতরন করা হচ্ছে কিন্তু ওজনে কম। নেই তদারকি কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, ইউপি সচিব এমনকি ইউপি চেয়ারম্যানও।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে চাল নিতে আসা উপকারভোগীদের তাড়িয়ে দেন ইউপি সদস্য আবুল কালাম। পরে সেখানে অন্তত ৩০ জন সুবিধাভোগী নারীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সবাই ভিজিডির চাল কম দেওয়ার এই অভিযোগ করেছেন।
ডৌহাখলা ইউনিয়নের উপকারভোগী নাজনীন বেগম বলেন, “হুনছি চাউল দিব ৩০ কেজি কিন্তু আমরাতো পাই ২৫-২৬ কেজি, অন্য আরেক উপকারভোগী রবিলা বেগম জানান, এইবার ২বস্তা দিছে, ২৬ কেজি কইরা অইছে, আরো ২ বস্তা বাকি রইছে, আরেকজন সুবিধাভোগী রোকেয়া বেগম বলেন, লেহ্যা আছে ৩০ কেজি, মাইপ্পে দেহি ২৫ কেজি চাউল। কেউ কেউ তো ৭-৮ কেজি কমের অভিযোগ তুলেন।
সত্যতা নিশ্চিত করতে উপকারভোগীরা একটি ডিজিটাল মিটার নিয়ে আসেন পরিষদের গুদামে। ইউপি সদস্য আবুল কালাম এবং ২০/২৫ জন উপকারভোগীদের সম্মুখে ওজন দেওয়া হলে দেখা যায় প্রতি বস্তায় ৪/৫ কেজি চাউল কম রয়েছে।
এবিষয়ে ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার জানান, গৌরীপুর খাদ্যগুদাম থেকে কম ওজনের ওই বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ভিজিডির চালের বস্তায় চাল কম হওয়ার কথা না আমরা প্রতি বস্তায় ৩০ কেজি বুঝিয়ে দেই তারাও আমাদের কাছ থেকে বুঝে নেয়। গুদাম থেকে বের হওয়ার পরে চাল কম হলে আমাদের কিছু করার নেই।
বকেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ২০২০ সালের কোন চাল আমাদের কাছে বকেয়া নেই, আমরা চেয়ারম্যানদের কাছে হস্তান্তর করেছি। যদি তারা না দিয়ে থাকে এতে আমাদের কোন দায়ভার নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফকে অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঐ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে পরিদর্শন করেন এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা বেগম আকন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার, ৩নং অচিন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম অন্তর, স্থানীয় ইউপি সদস্য, গনমাধ্যমকর্মী, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও এলাকাবাসী। পরে তিনি ডৌহাখলা (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার সাথে একান্ত বৈঠক করে ২০২১ সালের সোমবার (৪ জানুয়ারী) সকলের উপস্থিতিতে ওজনে কম হওয়া চালসহ বাকী দুই মাসের চাল বিতরন করা হবে বলে জানান।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা বেগম আকন্দ এসময় চালের বস্তা দেখেই বলেন “বস্তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে বস্তায় চাল কম আছে” কথাটি বললেও নীরব ছিল সবাই। পরে পরিষদের সামনে এসে সকলের সামনে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেন আগামী সোমবার (৪ জানুয়ারী) চাল বিতরন করা হবে এসময় সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন তারা। পরে তাদের দেওয়া তারিখ মতো সোমবার (৪জানুয়ারী) সকালে ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদে গণমাধ্যমকর্মীরা গিয়ে দেখতে পায় উপকারভোগীরা দাড়িয়ে আছে কিন্তু চাল দেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। দেখা যায় ইউপি সচিব তার রুমের ভিতর কাগজপত্র দেখছেন তার কাছে গিয়ে চাল বিতরনের কথা জানতে চাইলে, তিনি জানান আমিও শুনেছিলাম চাল দিবে আপনারা চেয়ারম্যানকে বলেন এই কথা বলে চৌকিদার দিয়ে পরিষদে তালা ঝুলিয়ে চলে যান।
চাল দেওয়ার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল কল ধরেননি। এবিষয়ে তদারকি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, আমি নাম মাত্র ট্যাগ অফিসার বড় ঈদের পরে চাল বিতরনের বিষয়ে আমাকে কোনদিন জানানো হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা বেগম আকন্দ জানান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় গৌরীপুর উপজেলায় ৩ হাজার ২৬ জন দুস্থ নারী এই সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে ডৌহাখলা ইউনিয়নে ৩ শত ৪৩ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। প্রত্যেক সুবিধাভোগী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা পাচ্ছেন। এসব সুবিধাভোগী নারীকে প্রতি মাসেই ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার পরে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বরাবরে মাস্টার-রোল জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও আজ পর্যন্ত কেউ জমা দেয়নি চেয়ারম্যানরা নিজেদের ইচ্ছামত চালিয়ে যাচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে, তিনি সাংবাদিকদের জানান ওজনে কম দেওয়া ও বকেয়া চাল সহ বিতরনের জন্য চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, যদি ব্যবস্থা না দেওয়া হয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।