ঢাকা (সন্ধ্যা ৬:৪৫) শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

বুড়িতিস্তা খাল পুনঃখননের পরেও ২ বছরেই নাব্যতা হারানোর পথে

<script>” title=”<script>


<script>

তিস্তা নদীর একটি শাখা বুড়ি তিস্তা। এটি কুড়িগ্রাম জেলায় উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে চিলমারী উপজেলার কাচকল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে।

একসময় বুড়িতিস্তা নদীকে ঘিরে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। সেই সঙ্গে তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা চলত বুড়িতিস্তা নদীতে মাছ শিকার করে।১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ারে নির্মিত স্লুইস গেটটি তিস্তা নদীর গর্ভে চলে যায়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে বুড়িতিস্তার উৎস মুখে বাঁধ নির্মাণ করেন। ফলে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে, দখল আর দূষণে প্রমত্তা বুড়িতিস্তা মরা খালে পরিণত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ বছর আগে বুড়ি তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন শুরু করে ছিলেন উলিপুর প্রেসক্লাব এবং রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি। তারা নদী খনন করে এর পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা ও নদী দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছিল। বুড়িতিস্তা নদী দখলমুক্তসহ পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ বুড়িতিস্তা নদী রক্ষায় মানববন্ধন, ২১ মার্চ বাইসাইকেল র‌্যালি ও ১১ এপ্রিল বুড়িতিস্তা নদী পাড়ে হাজারো মানুষ প্রতীকী পানির ঢল কর্মসূচি পালনসহ সভা-সমাবেশ করেন।

উলিপুরের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বুড়ি তিস্তা প্রধানমন্ত্রীর ডেলটা প্ল্যান কর্মসূচির আওতায় ১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৮০ ফুট প্রস্থ ও ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ব্যাপী খনন কাজ করে।৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী,খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড,কুড়িগ্রামের বাস্তবায়নে গত ২ বছর আগে ১৩ মার্চ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে উলিপুর উপজেলাধীন বুড়িতিস্তা খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করেন ২৭ কুড়িগ্রাম- ৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন।যা ওই বছরেই শেষ হয়।

পরিকল্পনা ছিল খনন কাজ শেষে নদীর পানিপ্রবাহ বহমান করতে নদীর উৎস মুখে রেগুলেটর স্থাপন,পাম্পহাউস নির্মাণ করে শুকনো মৌসুমেও পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা, নদীর দুপাশে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত,বুড়িতিস্তা নদীর দুই পাড় সংস্কার করে বসার জায়গাসহ সৌন্দর্যবর্ধন ও বিভিন্ন প্রকার ফলদ বৃক্ষ রোপণ করবে। প্রাণ ফিরে পাবে মরা বুড়িতিস্তা।আবারও পানির ঢল নামবে মরা বুড়ি তিস্তায়, বাড়বে ফসল উৎপাদন, জেলেরা ফিরে পাবেন নিজ পেশা, এই স্বপ্ন দেখছিল নদীর দু’পাড়ের মানুষ।

সরিজমিনে, থেতরাই, দলদলিয়া, ধামশ্রেণী, কাচকল ও উলিপুর পৌর এলাকার বুড়িতিস্তা পাড় ঘুরে দেখা গেছে,বুড়িতিস্তা খাল পুনঃখনন হলেও দুই বছরে থেতরাই, দলদলিয়া ও ধামশ্রেণী ইউনিয়নে কিছু এলাকায় দায়সারাভাবে পাড় সংস্কার করা হয়েছে । নদীর দুই পাড় সংস্কার না করা, বিভিন্ন জায়গায় নদীর পাড়ের অংশ কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা, পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া এমন নানা প্রতিবন্ধকতায় নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে বুড়িতিস্তা তার নাব্যতা হারানোর পথে।

এ সময় নদী ঘুরে দেখার কথা ভরা নদীতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ঠিক সেই মুহুর্তে দেখা যাচ্ছে নদীর দুপাড়ের স্থানীয় লোকেরা বুড়িতিস্তার বুকে গরু,ছাগল ও ভেঁড়া চড়াতে।শুকনো নদীর দুই পাড়ে পড়ে আছে জেলেদের মাছ ধরার জালের বাঁশের কামান।

রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির উলিপুর শাখার সভাপতি আপন আলমগীর বলেন, আমাদের আন্দোলনের মুুল লক্ষ্য ছিল থেতরাই থেকে কাচকল পর্যন্ত বুড়িতিস্তা নদীতে পানির ঢল থাকবে। পানির ঢল আনতে নদীতে যে জমিগুলো খনন করা হয়েছে অধিগ্রহণ সাপেক্ষে তা খালে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা খাল চাইনি আমরা পূর্ণাঙ্গ নদী চেয়েছি যা অতীতে ছিল।এখন নদীটির যে অবস্থা এটা আমাদের কাম্য নয়। বরং এভাবে নদী খননে অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বুড়িতিস্তা বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কতৃপক্ষের সুুুুদৃষ্টি কামনা করছি।

তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির কুড়িগ্রাম সভাপতি ও উলিপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরদার বলেন,বুুুড়িতিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বহমান করতে নদীর উৎস মুখে দ্রুত স্লুইসগেট নির্মাণ করে নদীর দুই পাড় সংস্কার করে পুনঃখননের দাবী জানান তিনি।

বুড়িতিস্তা বাঁচাও উলিপুর বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক,তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি কুড়িগ্রাম জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা ও উলিপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সরকার জানান,সরকারের এই উন্নয়ন মূলক কাজকে সফল করতে বুড়িতিস্তা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অধিগ্রহণে যেসব আইনি জটিলতা রয়েছে তা অতিদ্রুত নিরসন করে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, বুড়িতিস্তা নদীর উৎস মুখে রেগুলেটর স্থাপনের প্রস্তাবনা দেয়া আছে তা পাস হলে স্থাপন করা হবে।তবে বুড়িতিস্তা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অধিগ্রহণে আইনি জটিলতা থাকায় হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন তাই নদীর দুই পাড় সংস্কারসহ অন্যান্য কোন কাজের পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT