বান্দরবানের পর্যটন স্পটে দর্শনার্থীদের ভীড়, উম্মাতাল দামতুয়া ঝর্ণা
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার সকাল ১১:২৪, ২৮ আগস্ট, ২০১৯
সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, আলীকদম (বান্দরবান): বান্দরবানের আলীকদমে প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি ওয়াংপা ঝর্ণা, দামতুয়া ঝর্ণা। যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে রুম্ ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্ শব্দ বয়ে চলা ঝর্ণা ধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলতে পারে এর হিমশীতল জলে। ধারণা করা হচ্ছে শর্তবর্ষ পূর্ব হতেই প্রবাহিত রয়েছে এসব ঝর্ণা ও জল প্রপাত। এতদিন সড়ক যোগাযোগ না থাকা বিচ্ছিন্ন পাহাড়ী জনপদ হওয়ায় তা ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে ফলে তা অনাবিষ্কৃতই থেকে যায়।
উদ্যমী তরুন – যুবকরা পাহাড়ের বুকে লুকিয়ে থাকা এসব ঝর্ণা রাণী ও জল প্রপাত কে খুঁজে খুঁজে বের করে আনছে ফলে পাল্টে যাচ্ছে আলীকদম উপজেলার পর্যটন পরিবেশ। নতুনত্বের ছোঁয়া লাগছে পর্যটন খাঁতে, সরকারি অানুকূল্য পেলে এসব পর্যটন স্পট হয়ে উঠবে আরো আকর্ষনীয় পর্যটন বান্ধব।
ঢাকা থেকে দূর্গম এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা জানান-দাতুয়াঝর্ণা খুবই সুন্দর, এর পরিবেশ দেখলে যে কারোর মনই ভালো হয়ে যাবে। পর্যটকরা বলেন প্রকৃতির সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর স্হান হলো দামতুয়া ঝর্ণা।
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পর্যটন নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ সায়েদ ইকবাল বলেন -আলীকদম উপজেলার দামতুয়া ঝর্ণা দূর্গম হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক অনেক পর্যটক ভ্রমণ করতে আসে সেখানে। ওখানে রেস্ট হাউস বা কটেজ না থাকায় পর্টযকরা আলীকদম সদরে অবস্হান করেন। আমাদের পর্যটন স্পট গুলো যাতে নষ্ট না হয় সেটি সংরক্ষণ করা দরকার ও জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া হবে এবং দূর্গম পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাতায়াতের জন্য যাতে রাস্তা তৈরি করা যায় সে বিষয়ে সমানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন – দামতুয়া ঝর্ণা সহ ওই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্হা এখনো পর্যন্ত স্বাভাবিক এবং ওখানে যারা যাচ্ছে তারা স্হানীয় গাইড নিয়ে যাচ্ছে। তারা সেনাবাহিনী এবং আলীকদম উপজেলা প্রসাশনকে অবহিত করেই যাচ্ছেন।
কিভাবে যাবেন দামতুয়ায় – ঢাকা কিংবা কক্সবাজার থেকে বাস করে চকরিয়া বাসস্টেশন নামতে হবে। চকরিয়া থেকে বাসে করে আলীকদম বাসস্টেশন নামবেন। সেখানে থেকে জীপ বা চাঁদের গাড়ী ভাড়া নেওয়া যায় অথবা বাসস্টেশন থেকে অটোরিক্সায় চড়ে পানবাজার এসে ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক নিয়ে আলীকদম থানছি সড়কের ১৭ কিলোমিটারের মুরুং পাড়া নামতে হবে। সেখান থেকে স্হানীয় মুরুং গাইড নিয়ে উত্তর দিকে এক-দেড় ঘন্টা হাঁটলেই পেয়ে যাবেন ওয়াংপা ঝর্ণা ও উপরের অংশ ওখান থেকে আপনাকে দামতুয়া ঝর্ণায় আরো অনন্ত এক ঘন্টা হাঁটতে হবে। পথে যেতে যেতে ৩ টি স্হানে দেখা মিলবে পাহাড়ের ঢালে সবুজের বুকে কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর টং ঘর (পাহাড়ী জুম ঘর) এসব স্হানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ম্রো পাড়া। ওই এলাকায় কোন ধরণের ভয় নেই, এখানকার ম্রোরা অত্যন্ত অতিথি পরায়ণ। তারা পর্যটক দেখলে প্রাণখুলে হাসি দেয়, অসংখ্য ঝিরি ও জল প্রপাতের সাড়ি দেখা মিলবে দামতুয়া ঝর্ণা।
থাকার স্হান সমূহ – আলীকদম উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে পর্যটক থাকার জন্য বেশ কয়েকটি কটেজ ও হোটেল গড়ে ওঠেছে। তার মধ্যে আলীকদম সদরে রয়েছে শৈল কুঠির রিসোর্ট, দ্যা দামতুয়া ইন, হোটেল আলীকদম, এ ছাড়াও পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রিত রেষ্ট হাউসে ও থাকা যাবে। পযর্টকরা ইচ্ছে করলে স্হানীয় সেনাবাহিনী কে অবগত করে পাহাড়ী পরিবেশে মুরুং পাড়ায় ও থাকতে পারে।
সতর্কতাঃ চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। পাহাড়ের ঝর্ণা ও জল প্রপাত সমূহ দেশের মানুষের সম্পদ। অপচনশীল এসব আর্বজনা ফেললে পরিবেশ নষ্ট হয়। যাওয়ায় সময় লবণ সঙ্গে রাখলে ভালো হয়, জোঁক কামড়ালে লবণ ছিটিয়ে দিলে ভাল কাজ হয় এবং নিরাপত্তার জন্য স্হানীয় গাইড ও পুলিশের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।