বন্দর অব্যবস্থাপনায় মুখ ফিরাচ্ছেন আমদানীকারকরা, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ বন্দর অব্যবস্থাপনায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানী করছেন। আর এতে কমেছে রাজস্ব।
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন শনিবার দুপুর ০২:০১, ১৭ জুন, ২০২৩
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুল্ক স্থলবন্দর ও কাস্টমস স্টেশন উত্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সোনামসজিদ শুল্ক স্থল বন্দর। গত এক বছর ধরে এই স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ফলে কমেছে রাজস্ব আহরণ। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ দশমিক ৯৬ শতাংশই ঘাটতি। অথচ আগের দুই অর্থ বছরে এ বন্দরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ বন্দর অব্যবস্থাপনায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানী করছেন। আর এতে কমেছে রাজস্ব।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বিগত (২০২২-২৩) অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৭ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৬০ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪৭৬ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। আবার নতুন অর্থ বছরে আসছে নতুন লক্ষ্যমাত্রা।
সূত্রমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২৮ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। ওই অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯৭০ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা বেশি। আহরণ প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
এছাড়া ২০২০-২১ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। ওই অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭০৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। যা
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩৪ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা বেশি। আহরণ প্রবৃদ্ধি ৪৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
সোনামসজিদ কাস্টমস স্টেশন সূত্র মতে, এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর, ভুট্টা, ভূসি, চিড়া, কিছু মেশিনারিজ, পোলট্রি ফিড, ফ্লাইঅ্যাশ ও পিয়াজ আমদানি হয়। মৌসুমি ফল হিসেবে কমলা, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ফল আমদানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় নেট মশারি, পাটের ব্যাগ, পাটের দড়ি, রাইস ব্রান অয়েল ও কিছু গার্মেন্টস পণ্য। তবে এই বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের শতকরা ৬০ ভাগই পাথর।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে স্থলপথে আমদানি পণ্যের বড় অংশ আসে এই বন্দর দিয়ে। কিন্তু এলসি সংকট, স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বিরাজমান সমস্যার জন্য আমদানি কমেছে। ব্যবসায়িক সুবিধার কারণে বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে সোনামসজিদ কাস্টমস স্টেশনে রাজস্ব আদায় কমেছে।
সোনামসজিদ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন জানান, এ বন্দর নিয়ন্ত্রণ করে বেসরকারি অপারেটর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী অপারেটর এত বছরেও এই বন্দরে আধুনিক ও ভারী কোনো যন্ত্রপাতি স্থাপন করেনি। সেবা বৃদ্ধি না করলেও প্রতি বছর বন্দর মাশুল পাঁচ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অন্য বন্দরের চেয়ে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত সেবা ও ভারী যন্ত্রপাতি না থাকায় আমদানি-রপ্তানিকাররা এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছে। আর তাই বৈষম্য দূর করা হলে বন্দরের ব্যবহার বাড়বে, বাড়বে রাজস্ব।
এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার প্রভাত কুমার সিংহ বলেন, এ বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছেন না ব্যবসায়ীরা। মূলত এ কারণেই রাজস্বে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এলসি সংকটের কারণে এই বন্দরে আমদানি কমেছে বলে আমাদের ধারণা। এ কারণে গেল অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।