প্রিন্টার কিনতে চাইলে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
মেঘনা নিউজ ডেস্ক মঙ্গলবার বিকেল ০৪:৪৩, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৮
ডিজাইনের দিক থেকে প্রিন্টার খুব একটা পরিবর্তন না হলেও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। মোবাইল প্রিন্টিং অপশন, ওয়ারলেস সংযোগ, এনএফসি ইত্যাদি প্রযুক্তি বর্তমানে প্রিন্টারগুলোকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে তুলেছে। প্রিন্টার কেনার আগে নির্ধারণ করুন প্রিন্টারটি কেনার উদ্দেশ্য কি এবং এটি কে ব্যবহার করবে। তাছাড়া বাজেটের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যাতে করে আপনি সবচেয়ে ভালো মডেলের প্রিন্টারটি ক্রয় করতে পারেন।
কার কোন ধরনের প্রিন্টার প্রয়োজন?
সাধারণত প্রিন্টার ব্যবহারকারীর ৩টি শ্রেণী রয়েছে-
হোম ইউজার- হোম ইউজারদের মধ্যে আছে ব্যক্তি, পরিবার বা শিক্ষার্থী। যদিও তারা পরিমাণে খুব বেশি প্রিন্ট করবেনা কিন্তু তাদের হোমওয়ার্ক এসাইন্মেন্ট থেকে শুরু করে ফটো বা আর্ট প্রজেক্ট যেকোনো কিছু প্রিন্ট করার সম্ভাবনা আছে। তাদের জন্য মূলত স্বল্পমূল্যে একটি বহুমুখী ইঙ্কজেট প্রিন্টার প্রয়োজন।
অফিস ইউজার– হোম অফিস বা ছোট অফিস ইউজার স্বল্প পরিমাণে প্রিন্ট করতে পারে বা বেশিও প্রিন্ট করতে পারে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রফেশনাল কোয়ালিটি আউটপুট পাওয়া। এদের অনেকের লেজার প্রিন্টারের প্রয়োজন পরে আবার অনেকে সমমূল্যের কালার ইঙ্কজেট প্রিন্টার ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত ভালো আউটপুট পান।
ছোট ওয়ার্কগ্রুপ- ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত ছোট ওয়ার্কগ্রুপের জন্য প্রয়োজন ওয়ার্কহর্স প্রিন্টার যা বৃহত্তর চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এইচপি অফিসজেট প্রো ৫৭৬ডিডব্লিউ এই চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এছাড়া লেজার প্রিন্টারগুলোও এই চাহিদা মেটাতে পারে।
প্রিন্টারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচারঃ
ইঙ্কজেট ভার্সেস লেজার- অফিসে ব্যবহারের জন্য লেজার প্রিন্টার খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বর্তমানের ইঙ্কজেট প্রিন্টারগুলো পূর্ববর্তী মডেলগুলো থেকে অনেক কর্মক্ষম এবং অফিস ও হোম ইউজারদের জন্য উন্নত মডেলের ইঙ্কজেট প্রিন্টার রয়েছে। আপনি যদি ভালো পারফর্মেন্স পেতে চান তাহলে স্বল্পমূল্যের লেজার প্রিন্টার কেনার চেয়ে আধুনিক ইঙ্কজেট প্রিন্টার কিনুন। তাছাড়া একই মূল্যে অপেক্ষাকৃত ভালো, দ্রুততর এবং বিভিন্ন ফিচারসম্পন্ন ইঙ্কজেট প্রিন্টার বাজারে পাওয়া যায়।
মাল্টি-ফাংশন মডেল- শুধু প্রিন্ট করে এমন প্রিন্টার বর্তমানে নেই বল্লেই চলে। স্ক্যানার সংবলিত প্রিন্টার কিনলে ডকুমেন্ট কপি বা ডিজিটাল ডকুমেন্ট তইরি করা অনেক সহজ হয়। বহুমুখী ব্যবহারের জন্য আপনি মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার ক্রয় করতে পারেন।
কানেক্টিভিটি- সব ধরনের প্রিন্টারই ইউএসবি/ ইথারনেট পোর্টের সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। সাধারণত অফিসে ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত মডেলগুলো ইথারনেটের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে। প্রিন্টারের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়াই-ফাই এর বিকল্প নেই। ওয়াই-ফাই আপনাকে সহজেই প্রিন্টার ব্যবহার করতে এবং মোবাইলের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করবে। ওয়াই-ফাই ছাড়া প্রিন্টার কেনার পূর্বে ভালোভাবে চিন্তা করে নিন।
মোবাইল প্রিন্টিং- এমনকি সবচেয়ে কর্পোরেট-ফোকাসড্ প্রিন্টারগুলোও মোবাইল ডিভাইসের চাহিদাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি এবং মোবাইলের মাধ্যমে প্রিন্ট করার কোনও না কোনও ব্যবস্থা রেখেছে। সরাসরি প্রিন্টিং এর জন্য এমন অ্যাপ খুজুন যা অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস এবং অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসের সাথে কাজ করে বা ইমেইলের মাধ্যমে(এইচপির ইপ্রিন্ট ও গুগোলের ক্লাউড প্রিন্ট) বা থার্ড-পার্টি টেকনোলজির মাধ্যমে(অ্যাপেলের এয়ারপ্রিন্ট) প্রিন্ট করতে পারে। এনএফসি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল ডিভাইসটি প্রিন্টারের সাথে পেয়ার করতে পারবেন এবং ওয়াই-ফাই ও অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রিন্ট করার নির্দেশ দিতে পারবেন।
পেপার হ্যান্ডলিং- আপনার দৈনিক যতগুলো পেজ প্রিন্ট করতে হয়, তার চেয়ে বেশি পেজ ধারন করতে পারে এবং প্রিন্টার বাছাই করুন। একটি পার্সোনাল প্রিন্টার সাধারণত একটি সিঙ্গেল ট্রেতে ১০০ থেকে ১৫০টি পেজ ধারন করতে পারে। কিছু কিছু প্রিন্টারে ডেডিকেটেড ফটো ট্রে আছে যা পেপার সোয়াপিং কমিয়ে আনে। একটি বিজনেস প্রিন্টার সর্বনিম্ন ২৫০ পেজ ধারন করতে পারে এবং উন্নত মডেলের প্রিন্টারগুলো সাধারণত ৫০০ থেকে ১০০০ পেজ ধারন করতে পারে। অফিসে ব্যবহারের জন্য মাল্টিপল পেপার ট্রে ওয়ালা প্রিন্টার শ্রেয়।
ডুপ্লেক্সিং- টু-সাইডেড প্রিন্টিং বা ডুপ্লেক্সিং আপনার পেপার খরচ অর্ধেক কমিয়ে আনতে পারে। কিছু কিছু প্রিন্টারে ম্যানুয়াল ডুপ্লেক্সিং আছে। ম্যানুয়াল ডুপ্লেক্সিং আপনাকে বলে দেয় কিভাবে পেপারটি রোটেট ও রিলোড করতে হবে।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফিচারঃ
ডিসপ্লে- অনেক পার্সোনাল প্রিন্টার ও কিছু কিছু বিজনেস প্রিন্টারে ফ্রন্ট কনট্রোল প্যানেলে ছোট ডিসপ্লে আছে যা আপনাকে মেন্যু সিলেক্ট করতে বা প্রিন্টারের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে। যদিও টিপিক্যাল ডিসপ্লেতে এক বা দুই লাইনের ক্যারেক্টার ভিত্তিক মেসেজ থাকে, উন্নত মানের ও ফটো ওরিয়েন্টেড প্রিন্টারগুলোতে ফুল কালার এলসিডি থাকে। কিছু কিছু মডেলে টাচ ক্যাপাবিলিটিও থাকে। মূলত যেকোনো ডিসপ্লেই ব্যবহারের উপযোগী।
মিডিয়া কার্ড স্লট এবং ইউএসবি / পিকট্ব্রিজ পোর্ট- আপনি যদি ইঙ্কজেট প্রিন্টারে ফটো প্রিন্ট করতে চান তাহলে এমন প্রিন্টার বাছাই করা শ্রেয় যাতে ইন্টিগ্রেটেড মিডিয়া স্লট বা পিকট্ব্রিজ আছে। অবশ্য এই পোর্টগুলো যদি আপনার কম্পিউটারে ইতিমধ্যে থেকে থাকে তাহলে নতুন করে এগুলোর প্রয়োজন নেই। যদিও ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে সরাসরি কি ড্রাইভ থেকে ডকুমেন্ট প্রিন্ট করা যায় কিন্তু এতে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে।
বাজেট অনুযায়ী প্রিন্টার ক্রয় করুনঃ
৩,০০০ থেকে ৬,৫০০ টাকা- এই মূল্যে আপনি সিঙ্গেল ফাংশন ইঙ্কজেট প্রিন্টার পাবেন। কিন্তু এই মূল্যের মডেলগুলো অনেক স্লো হবে ও ফিচার থাকবেনা বল্লেই চলে। এর কালি ব্যয়বহুল হবে। তাছাড়া এগুলোতে সবুজে নীল, ম্যাজেন্টা এবং হলুদের সমন্বয়ে ট্রাইকালার কার্তুজ আছে যাতে একটি কালার শেষ হয়ে গেলে পুরো কার্তুজ পরিবর্তন করতে হয়।
৬,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা- এই মূল্যে আপনি সিঙ্গেল ফাংশন ইঙ্কজেট প্রিন্টার বা স্বল্পোন্নত ইঙ্কজেট মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার বা ব্যাসিক মোনোক্রম লেজার প্রিন্টার ক্রয় করতে পারবেন। সিঙ্গেল ব্যবহারকারীদের জন্য এই মূল্যের প্রিন্টারগুলো পরিমিত গতি ও পেপার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দিয়ে থাকে। কিন্তু এগুলোর কনট্রোল প্যানেল মধ্যম মানের হয়ে থাকে। কালি বা টোনার ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। কিছু কিছু মডেলে পৃথক কালার কার্তুজ থাকে কিন্তু বেশিরভাগ মডেলেই ট্রাইকালার কার্তুজ থাকে।
১২,০০০ টাকা- এই মূল্যে আপনি অটো ডুপ্লেক্সিং ও উন্নত ইঙ্ক অপশনের মডেলগুলো পাবেন। তাছাড়া এই মূল্যে ব্যাসিক মোনোক্রম প্রিন্টার পাওয়া গেলেও তা পূর্ববর্তী মডেলগুলোর তুলনায় কার্যকরী। এই রেঞ্জের প্রিন্টারগুলোতে যথেষ্ট গতি আছে। বেশিরভাগ মডেলে ওয়াই-ফাই থাকার সম্ভাবনা আছে।
২০,০০০ টাকা- এই রেঞ্জে আপনি দ্রুত গতি ও পেপার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা সম্পন্ন প্রিন্টার পাবেন। তাছাড়া অধিকতর নেটওয়ার্কিং ফিচার ও অপেক্ষাকৃত ভালো কনট্রোল প্যানেল পাওয়া যাবে। ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে টাচস্ক্রীন, কালার ডিসপ্লে, ওয়াইড-ফরম্যাট ক্যাপাবিলিটি। এই রেঞ্জের মোনোক্রম লেজার প্রিন্টারে ২৫০ পেজ ইনপুট ট্রে থাকতে পারে। কিন্তু এটি অপেক্ষাকৃত স্লো হতে পারে।
৩২,০০০ টাকা- এই মূল্যে প্রিমিয়াম লেভেলের ফিচার পাওয়া যাবে যেমন নেটওয়ার্কিং, বড় কালার এলসিডি, ওয়েব কানেক্টিভিটি। স্পীড ও প্রিন্ট কুয়ালিটি ভালো হবে এবং ইঙ্ক খরচও কমে আসবে। লেজার মডেলগুলোর মধ্যে আপনি পেতে পারেন দ্রুততর এবং নেটওয়ার্কেবল মোনোক্রম প্রিন্টার বা বেয়ার-বোন্স কালার প্রিন্টার। কিন্তু টোনার খরচ বেশি হবে।
৪০,০০০ টাকা- এই মূল্যের লেজার প্রিন্টারগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো। আপনি ২৫০ পেজ ইনপুট ট্রে, নেটওয়ার্কাবিলিটি এবং ভালো গতিসম্পন্ন প্রিন্টার পাবেন। টোনার খরচ এখানেও বেশি পরবে।
৫৫,০০০ থেকে ৬৫,০০০ টাকা- এই মূল্যের প্রিন্টারগুলো মূলত ওয়ার্কগ্রুপের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফিচারগুলোর মধ্যে পাবেন মাক্সিমাম র্যাম, স্ট্যান্ডার্ড ও অপটিক্যাল পেপার ট্রে, মাসিক ডিউটি সাইকেল ইত্যাদি। টোনার খরচ কম হবে।
৮০,০০০ টাকা বা তার বেশি- আপনি যদি ৮০,০০০ এর চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে পারেন তাহলে সবচেয়ে উন্নতমানের প্রিন্টার পাবেন। হাইয়ার ক্যাপাসিটি কার্তুজের কারনে এক্ষেত্রে টোনার খরচ অনেক কম হবে। যদি আপনি এমন কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালান যেখানে প্রচুর প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়, শুধুমাত্র তখনই এই মূল্যের প্রিন্টার কিনার কথা ভাবতে পারেন।