প্রশাসনের নাকের ডগায় ৪০ বছর যাবৎ ডাক্তারি করছেন ফার্মেসির মালিক ভোজন!
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার শনিবার বেলা ১২:৫৫, ৬ জুলাই, ২০২৪
সামনে সাদা কাগজ, হাতে কলম, টেবিলের উপরে স্টেথোস্কোপ। নিজের কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান না থাকলেও চিকিৎসা করেন সাধারণ রোগসহ জটিল রোগের। সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে, মধ্যবয়সী,বয়োবৃদ্ধ নারী- পুরুষসহ আগত রোগীর স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিবরণ শুনে সাদা কাগজে প্রেসক্রিপশন করছেন তিনি নিজেই। দিচ্ছেন স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর বা প্রাণঘাতি হতে পারে এমন উচ্চ মাত্রার বেদনাশক ও এন্টিবায়োটিক টেবলেটও।
কখনও কখনও তার সাথে থাকা সহকারী ফার্মাসিস্টরা রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন। যেসব ওষুধ বিএমডসি অনুমোদিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রয় করার অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও এসব ওষুধ তুলে দিচ্ছেন তিনি দেদারসে।এতে রোগীর সমস্যা ক্ষণিকের জন্য প্রাথমিকভাবে ভালো হলেও জীবন ফেলে দিচ্ছে মারাত্মক ঝুঁকির দিকে।
প্রাতিষ্ঠানিক কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানবিষয়ক ডিগ্রি না থাকলেও অত্যন্ত সুচতুর এই ফার্মেসির মালিক নিজেকে প্রশাসনিক ঝামেলা থেকে আড়াল করতে সাদা কাগজে প্রেসক্রিপশন করে থাকেন। ওষুধ দেওয়ার পর নিজের কাছেই রেখে দিচ্ছেন এই সাদা কাগজে লেখা ব্যবস্থাপত্রটিও।
বলছি, দাউদকান্দি পৌরসভার মাছ বাজারের শাহী মেডিকেল হলের মালিক ভোজন ওরফে স্বঘোষিত ডাক্তার ভোজনের কথা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তার কাছে আসা রোগীর একটি বেশি অংশ দাউদকান্দি উপজেলার উত্তরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত সহজসরল রোগীদের কাছে নিজেকে বড় ডাক্তার বলেই পরিচয় দেন।কৌশলে এসব সহজসরল মানুষের থেকে রাখেন ভিজিট করার জন্য ‘ফি’। যা অনেক সময় ওষুধের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে দেন। এতে বুঝারও উপায় থাকে না।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিবন্ধনহীন নামসর্বস্ব ওষুধ কোম্পানির ওষুধ মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে রোগীদের দিয়ে দিয়ে থাকেন।
অথচ অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে এসব কোম্পানির ওষুধ সেবনের ফলে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি, লিভার, হার্টসহ বিভিন্ন অঙ্গসমূহ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এবিষয়ে জানতে চাওয়া হয় উপজেলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে তিনি জানান,” বিএমডসি কর্তৃক নিবন্ধিত চিকিৎসকগণ কেবল ওষুধের নির্ধারিত ডোজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। কেউ নিবন্ধিত চিকিৎসক না হলে যদি চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন তাহলে এতে জীবন ঝুঁকিতে থাকে।
এধরণের হাঁতুরে চিকিৎসকরা চিকিৎসার নামে মানুষের জীবন এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন।
এদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেের কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন,”এ বিষয়ে আমি আগে অভিযোগ পাইনি, বিষয়টি ইনভেস্টিগেশন করে বলতে পারব।”