পীরগাছায় সুদখোরদের দৌরাত্ম
একরামুল ইসলাম,রংপুর বৃহস্পতিবার রাত ১০:৫২, ২১ জানুয়ারী, ২০২১
রংপুরের পীরগাছায় সুদখোরদের দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। বেপরোয়া হয়ে উঠছে সুদখোর মহাজনরা। দিন দিন তাদের অত্যাচার-নির্যাতন বেডেই যাচ্ছে। এতে করে সুদের চক্রবৃদ্ধি ফাঁদে পড়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ। এই সুদখোর মহাজনদের অতিষ্ঠ হয়ে তারা অনেকেই ছাড়ছেন চাকুরি, কেউ বা বাড়িঘর। অনেকেই গরু-ছাগল, ভিটেমাটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে সুদখোরদের। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকুরি ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সম্প্রতি চক্রবৃদ্ধির এই সুদখোরদের অত্যাচারে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন উপজেলা প্রকৌশল অফিসের এক সরকারি কর্মচারী। বর্তমানে তিনি পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। বিষয়টি নিয়ে গোটা পীরগাছা জুড়ে চলছে আলোচনার ঝড়। তবুও সুদখোর মহাজনদের দাপট কমেনি। তারা প্রতিদিন একত্রিত হয়ে মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ওই কর্মচারী ও তার পরিবার থানায় অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বিভিন্ন হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় নামসর্বস্ব সমবায় সমিতি, ক্লাব গঠন ও প্রভাবখাটিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে রমরমা সুদের ব্যবসা। এই সুদখোররা টার্গেট করছেন এলাকার নানা সমস্যায় পড়া সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অল্প বেতনে চাকুরি করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। নানা প্রলোভনে পড়ে মানুষ ফাঁকা ষ্ট্যাম্প ও চেকে স্বাক্ষর করে টাকা গ্রহণ করছে। এসব ঋণগ্রস্তরা অল্প দিনে চক্রবৃদ্ধি হারে পড়ে নি:স্ব হচ্ছে। টাকা গ্রহনকারী এসব মানুষ একদিকে পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে ফাঁকা ষ্ট্যাম্প ও চেকের মামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কোন কুলকিনারা না পেয়ে বাড়ির গরু-ছাগল, জমিজমা বিক্রি করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। এদের অনেকেই বাড়িঘর এবং চাকুরি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পীরগাছা উপজেলায় বর্তমানে এসব মামলা-মোকদ্দমা, অভিযোগ ও সালিশ-বৈঠক আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি গত উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভা ও আইন শৃংঙ্খলা কমিটির সভায় উঠে আসে।
এরই মধ্যে গত রোববার উপজেলা প্রকৌশল অফিসের পিয়ন ফজলুল আলম সুদখোর মহাজনদের চাপ সহ্য করতে না পেরে উপজেলা পরিষদ চত্তরেই বিষপান করেন। পরে তাকে দ্রুত পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিষপানকারী ওই কর্মচারী জানান, রোববার তিনি অফিসে আসার পর বেশ কয়েকজন সুদখোর সকাল থেকেই তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দিয়েছিলো। বিকেলে তিনি মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির যেতে বের হলে উপজেলা পরিষদ গেটে ওই সুদখোররা তার পথরোধ করে আবারো হুমকি-ধামকি এবং টাকা না পেলে জীবনে শেষ করে দেওয়ার কথা বলেন। এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেয়ে ফজলুল আলম উপজেলা পরিষদের ভিতরে ঢুকে বিষপান করেন। এর আগে ওই সুদখোররা তাকে জোরপূর্বক চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করে টাকা পরিশোধের জন্য কাগজপত্র তৈরি করে দেন। কিন্তু তিনি তাতে স্বাক্ষর করেননি। বর্তমানে এ বিষয়টি নিয়ে গোটা পীরগাছা উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
এ ব্যাপারে পীরগাছা থানার ওসি আজিজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীরা কেউ এখনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।