ঢাকা (দুপুর ২:০৫) শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং

দুবাগী ছাহেব বাড়িতে ঈসালে সাওয়াব মাহফিল সম্পন্ন

<script>” title=”<script>


<script>

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, মুফতীয়ে আজম, পীরে কামেল, হযরত আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলা (রহ.)’র ঈসালে সাওয়াব মাহফিল সিলেটের বিয়ানীবাজারে তার গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত ১২ ডিসেম্বর রোববার আব্দুল জলিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি হযরত আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ছাহেবজাদায়ে ফুলতলী।

মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন বিয়ানীবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা মুশাহিদ আহমদ কামালী, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হযরত মাওলানা শরিফ উদ্দিন, ভূরকী হাবিবিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক হযরত মাওলানা হাফিজ শফিকুর রহমান সিরাজী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, দক্ষিণ মাথিউরা জালালিয়া মহিলা মাদ্রাসার ভাইস-প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা কামাল হোসেন আল মাথহুরী, গাজির মুকাম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালিক লতিফী, বিশিষ্ট ইসলামী বক্তা হযরত মাওলানা আব্দুল আহাদ জিহাদি, বিয়ানীবাজার কসবা জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফিজ তাজুল ইসলাম, সিরাজুল হুফফাজ হযরত চান্দগ্রামী বড় হাফিজ সাহেব (রহঃ)’র নাতি মাওলানা মোহাম্মদ কুতবুল আলম চান্দগ্রামী, সিলেট জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুজাফ্ফর হোসেন, সৈয়দ আহমদ তামিম, সৈয়দ আহমদ মুক্তদা, বিয়ানীবাজার কলেজ রোড ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি ও বিয়ানীবাজার তাফসীরুল কোরআন পরিষদের সহ-সভাপতি আলহাজ নূর উদ্দিন আহমদ, দুবাগ বাজার হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা আব্দুল কাদির, দুবাগ বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাবিবুর রহমান, আল ইসলাহ বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা সাইদুল ইসলাম সোহেল, হাফিজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান, হাফিজ ক্বারী কামাল হোসেন, হাফিজ জায়েদ আহমদ চৌধুরী।

বক্তারা বলেন, পীরে কামিল হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রত্যেক মনীষীই বিশেষ কোন গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কারণে খ্যাতি লাভ করেন। এজন্যই তিনি দুনিয়া হতে বিদায় নিলে তাঁর মত আরেকজন পাওয়া যায় না। ‘‘প্রত্যেক ওলীর আলাদা স্থান থাকে”। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা আল্লামা দুবাগী ছাহেবের মাঝে ‘‘জামেইয়্যত” তথা অসংখ্য শান ও গুণের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। তাঁর মত একাধারে একজন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন সৌন্দর্যে সুসজ্জিত কামিল-মুকাম্মাল, সচ্চরিত্রবান, তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, লেখক ও গবেষক, বিজ্ঞ ফকীহ, দক্ষ মুহাদ্দিস, মুজাব্বিদ ক্বারী, বিচক্ষণ সংগঠক, খাঁটি পীর, সাহসী মুজাহিদ, দরদী দাঈ ও ওয়াইজ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। মুত্তাকি ও পরহেজগারের নমুনা কেহ দেখতে চাইলে তিনি যেন দেখে নেন এই আল্লামা দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)কে। সারা জীবন যিনি আল্লাহর স্বরণ ও দ্বীনের ফিকিরে কাটিয়েছেন। ইন্তিকালের পূর্বের দিনগুলোও যিনি যিকির, নামায ও দ্বীনের তা’লীমের পরিবেশে কাটিয়েছেন। এমনকি হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় ও তিনি তাঁর মাওলাকে ভুলেননি। ইন্তিকালের পূর্বক্ষণে ও তিনি সূরা ইয়াসিন পড়তে ছিলেন।

একজন কামিল বা হক্কানী পীরের মধ্যে যেসব গুন থাকা আবশ্যক, পীরে কামিল হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র মধ্যে খোদার ফযলে সবগুলোই ছিল। মানুষ অন্তরের অন্তরস্তল হতে তাঁকে শ্রদ্ধা করত। বস্তুত: তিনি ছিলেন “সর্বজন শ্রদ্ধেয়” কথাটির যোগ্য পাত্র। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, আলেম-আওয়াম, ব্যবসায়ী-শ্রমিক এমনকি বড় বড় সরকারী অফিসার, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নির্বিশেষে সবস্তরের মানুষের কাছে ছিল তাঁর অতুলনীয় গ্রহণ যোগ্যতা। সবখানেই তিনি ছিলেন একান্ত শ্রদ্ধার পাত্র।

তিনি ছিলেন আম খাছ সবার দোয়ার কেন্দ্রস্থল। যে কোন বিপদে-আপদে যখন মানুষ নিরুপায় হয়ে যেত, তখন আল্লামা দুবাগী ছাহেবের কাছে দোয়ার জন্য হাজির হত। কাছ দূর থেকে মানুষ দোয়ার জন্য তাঁর কাছে আসত। বৃটেনে অনেক দুরে দুরে বড় বড় মাহফিলে তাঁকে দোয়ার জন্য অনুরোধ করে নেওয়া হত। তিনি ছিলেন শামসুল উলামা হযরত আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী (রহ.)’র প্রথম সারীর সুযোগ্য অন্যতম খলিফা।

আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব রাহিমাহুল্লাহ দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসারে উৎসর্গীকৃত ছিলেন। জন্মভূমি বাংলাদেশে অবস্থানকালে ইলম অর্জনের পর বিভিন্ন মাদরাসায় প্রিন্সিপাল, শায়খুল হাদীস ও মুফতী ছিলেন। বিলাতে পাড়ি দেয়ার পর লেস্টার দারুসসালাম মসজিদ ও নিউক্রস জামে মসজিদ এবং ব্লাকবার্ন শাহ জালাল জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ইউকে ওলামা সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৮০ সালে সৈয়দপুরের ঘটনার পর ইউকে আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ প্রতিষ্ঠা করেন।

মুনাযীরে আযম হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) বিলাতবাসী মুসলমানদের আমন্ত্রণে ১৯৭৮ সালের ১লা জানুয়ারী লেস্টার শহরে গমন করেন। যুক্তরাজ্যে তিনি সর্বপ্রথম জৈনপুরী মসলকের ভিত্তিস্থাপন করেন, তাঁর পূর্বে বিলাতে এ মসলকের কোন আলিম উলামা ছিলেন না। একই বৎসর ১৯৭৮ সালের ২রা জুন শামছুল উলামা হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) প্রথমবারের মত বৃটেন সফর করেন। দুবাগী ছাহেব বিলেতবাসীকে সংগঠিত করে ফুলতলী ছাহেব কিবলাহকে বৃটেনে এক বিশাল ঐতিহাসিক অভ্যর্থনা জানান। আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) জনগণকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে যুক্তরাজ্যের কোণায় কোণায় ফুলতলী ছাহেবের ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা করেন। তিনি ফুলতলী ছাহেবের এ সফরকে সফল করার জন্য বাংলা, ইংরেজী, উর্দু, হিন্দী, ও গুজরাটি ভাষায় সর্বাধিক প্রচার প্রচারণা করেন। এই সফরেই দুবাগী ছাহেব স্বীয় পীর ও মুর্শিদ আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী (রহ.)’র সাথে বৃটেনে মুসলমানদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দ্বীনি শিক্ষার কথা আলোচনা করে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা পেশ করেন। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী এ সফরেই লন্ডনে মাদ্রাসার ভিত্তিস্থাপন করেন, তখন এই মাদ্রাসার নাম ছিল মাদ্রাসা-এ-দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া। পরবর্তীতে এই মাদ্রাসার নাম করণ হয় লন্ডন দারুল হাদীস লাতিফিয়া।

তাঁর কর্ম জীবন এর একটা বড় অংশ বৃটেনের লেস্টার শহরের দারুস সালাম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং খতীব হিসেবে কাটিয়েছেন বলে বৃটেনে তিনি “লেস্টারের ছাহেব” নামে সুপরিচিত ছিলেন। বৃটেনে দুবাগী ছাহেবের কারণে লেস্টারই ছিল ফুলতলী মসলকের হেডকোয়াটার বা প্রধান কেন্দ্র। বৃটেনে এই লেস্টার শহরেই ফুলতলী ছাহেব সর্বপ্রথম গমন ও অবস্থান করেছিলেন, প্রথমে সেথানেই সকল মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্টার পরিকল্পনা করা হয়। দুবাগী ছাহেবের মাধ্যমে এ মছলকের সকল কাজ কর্ম পরিচালিত হত এবং ইউকে আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ লেস্টারেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব গত বৎসর লন্ডনে ১০ জুলাই ২০২০ইং রোজ শুক্রবার জুম্মার পূর্বক্ষনে বার্ধক্য জনিত কারণে মাওলায়ে হাকিকীর সাড়া দিয়ে তাঁর পরিবার পরিজন অগনিত ভক্তমুরীদ আর দেশবাসীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়া ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ)’ র ইন্তেকালের পর বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সহ দেশ-বিদেশের সর্বস্তরের মানুষের শোক প্রকাশ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ, সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ-নিবন্ধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দোয়া মাহফিলের যে ধারা লক্ষ্য করা গেছে তা তুলনাহীন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইয়ামন, সিরিয়া, জর্দান, মিশর, সৌদি আরব,কুয়েত, ডুবাই, আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ইত্যাদি থেকে আসতে থাকে শোকবার্তা। আর দোয়া-দুরুদ শুরু হয় মসজিদ-মাদরাসায়। অসংখ্য কুরআন খতম হয়।

বক্তারা আরো বলেনঃ হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোটেই শেষ হয়ে যাননি। কখনো ও যাবেনও না। আল্লাহর মহিমায় তিনি তাঁর অবিস্মরণীয় কীর্তির মধ্য দিয়ে চির জাগরুক থাকবেন। যত দিন তাঁর তৈরী মসজিদ, মাদ্রাসা ও লেখনী থাকবে। ততদিন ইট পাথর থেকে শুরু করে প্রতিটি ধুলি কনা তাঁর বিরহে কাঁদবে স্মরণ করবে তাঁর মেহনত।

মাহফিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাথিউরা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আলিম, চান্দগ্রাম সিনিয়র মাদ্রাসার ভাইস-প্রিন্সিপাল মাওলানা ওহিদুজ্জামান চৌধুরী খসরু, চান্দগ্রাম সিনিয়র মাদ্রাসার প্রভাষক মুফতি আছাব উদ্দিন, দুবাগ বাজার হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, লন্ডন প্রবাসী মাওলানা ক্বারী সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণ দুবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা এখলাছুর রহমান, দুবাগ মক্তব মসজিদের ইমাম হাফিজ রিয়াজ উদ্দিন, মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, মাওলানা শাহীন আহমদ, মাওলানা খালেদ হোসেন, মাওলানা আব্দুল হামিদ, হাফিজ মাছুম আহমদ, হাফিজ আবু তাহের, হাফিজ আজির উদ্দিন, হাফিজ মফিক আহমদ, মাওলানা আব্দুল জলিল, মাওলানা আব্দুস সালাম প্রমুখ।

সর্বশেষে এ মহতী অনুষ্ঠানে মীলাদ পাঠান্তে দোয়া করা হয় রাব্বুল আ’লামীন আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র জীবনের সব নেক আমলকে কবুল করে দ্বীনের এই নিরলস খাদিমকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উঁচু মোকাম দান করে তাঁর কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন। সাথে সাথে তাঁর রেখে যাওয়া সকল প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্য ও স্মৃতিকে কেয়ামত পর্যন্ত হেফাজত করুন।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT