দুই ছেলের পাশে চিরনিদ্রায় সমাহিত হলেন ডেপুটি স্পিকার
আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা মঙ্গলবার ১২:০২, ২৬ জুলাই, ২০২২
সদ্য প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এমপির শেষ নামাজে জানাজা শেষে, গাইবান্ধার সাঘাটার পারিবারিক কবরস্থানের দুই ছেলের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের গটিয়া নিজ গ্রামে জানাজা শেষ পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
এসময় সংসদ সদস্য, প্রশাসনের জনপ্রতিনিধিগণ, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল দুপুরের দিকে ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহ ঢাকা থেকে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া শিমুলতাইর মাঠে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করে। সেখান থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার উল্লা বাজারের ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পুর্ব তাকে গার্ড অফ অনার প্রদর্শন করার পর সর্বস্তরের জনসাধারণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলি জানান, এর আগে আমেরিকার নিউইয়র্ক জামাইকা ইসলামিক সেন্টারে সদ্য প্রয়াত জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ঢাকা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি ৯ মাস ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার দাম্পত্য জীবনে এক স্ত্রীসহ ৫ সন্তানের জনক ছিলেন। স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও দুই ছেলে আগেই মারা গেছেন। এখন তার তিন কন্যা রয়েছে।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৮ সালে চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরে জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও পরাজিত হন। এরপর ২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বর্ষীয়ান এই রাজনৈতিক ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। দশম জাতীয় সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ফজলে রাব্বী মিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন
তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ ছিলেন অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারও। এমন রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ফজলে রাব্বী মিয়া মরণঘাতী ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে শুক্রবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রেখে যান বর্ণাঢ্য এক রাজনৈতিক জীবন।
প্রাথমিক জীবন
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। ১৯৬১ সালে তিনি গাইবান্ধা কলেজে ভর্তি হন। তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
ফজলে রাব্বী মিয়া আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। আইনজীবী থাকাকালীনও তিনি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য হন।
রাজনৈতিক জীবন
ফজলে রাব্বী মিয়ার রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। ১৯৫৮ সালে রাজনীতিতে আসেন এই সংসদ সদস্য। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানে যখন মার্শাল ল’ চালু করেছিলেন তখন ফজলে রাব্বীর চাচা ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। চাচার মাধ্যমে তিনি মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। এভাবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়ান। পরে আবারও আওয়ামী লীগে ভেড়েন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি কাজ করেন।