দাউদকান্দিতে সুদচক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার!
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার শনিবার বিকেল ০৫:০৩, ৬ জুলাই, ২০২৪
সামাজিক এক ভয়ংকর ব্যাধির নাম সুদ।
শুনে রীতিমতো চোখ চড়কগাছ। অবাক বিস্মিত হয়ে গেলাম।
এসব সুদিদের(স্থানীয় ভাষায় সুদ দাতা) লভ্যাংশ কম দিতে চাইলে নেমে আসে সুদ গ্রহীতার উপর অত্যাচারের খড়্গ।
এমন চক্রবৃদ্ধি সাপ্তাহিক সুদের ফাঁদে পা বাড়িয়ে ধ্বংস হচ্ছে অনেকেরই সাজানো সংসার জীবন! সুদীদের ভয়ে আর নির্যাতনে কেউ কেউ চলে যায় এলাকা ছেড়েও। এসব প্রতিষ্ঠিত সুদ কারবারীরা রাতারাতি ফুলেফেঁপে আঙ্গুল ফুলে গলাগাছ বলা যায়।এমনে দেদারছেই অর্থনৈতিকভাবে বিদ্যুৎ গতিতে স্বাবলম্বী হচ্ছে সুদীরা। এর আইনগত কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় খুব সহজে অনায়াসে সুদের কারবারে কোটিকোটি টাকার লেদদেন করে পার পেয়ে যাচ্ছে সুদিরা।
মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আল্লাহ পাক “ব্যবসাকে হালাল করেছেন,সুদকে হারাম করেছেন।
কিন্তু এই চির শাশ্বত ঐশ্বি বাণীকে গুরুত্বহীন মনে করে কিছু মুসলমানসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও আজ যেনো সুদের ব্যবসায় নিজেকে নিঃসন্দেহ ডুবিয়ে দিচ্ছে। যদিও ক্ষণিকের জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
এ সমাজে ব্যক্তি মালিকানাধীন সুদের ব্যবসা ভয়কংর রুপ ধারন করেছে। সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে চক্রবৃদ্ধিহার সুদের চাকায় পিষ্ট হয়ে।
যে মানুষটা গেল এক বছর আগেও চলতে ফিরতে, সংসার নামক চাকার ঘানি টানতে কষ্ট হতো সেই মানুষটা আজ সুদের লভ্যাংশ আঙ্গুলে থুথু দিয়ে কোটি টাকা গুণছে।
এ যেনো আরকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ অবস্থা!
এমন সুদের রমরমা কারবার শুধু মুসলমান ধর্মেই সীমাবদ্ধ তা নয়,বহুকাল আগে থেকেই সুদের ব্যবসায় জড়িয়ে আছে সনাতনধর্মাবল্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু অংশও।
সুদিরা যে হারে টাকার লেনদেন কিংবা সুদের টাকা ধার দেয় তা শুনে রীতিমতো আঁতকে ওঠি,অবাক বিস্ময় হয়ে এসবের সামান্য আদ্যোপান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
এমন চক্রবৃদ্ধি সাপ্তাহিক সুদের ফাঁদে পা বাড়িয়ে ধ্বংস হচ্ছে অনেকেরই সাজানো সংসার জীবন! এক প্রতিষ্ঠিত সুদ কারবারীর রাতারাতি ফুলেফেঁপে ওঠার গল্পও। সুদের কারবারে টাকা বিনিয়োগ করে হয়েছেন অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক। রয়েছে একাধিক বাড়ি ও গাড়ি।
সুদের টাকা কিংবা লভ্যাংশ কম দিতে চাইলে সুদ গ্রহীতার উপর চলে মানসিক ও শাররীক নির্যাতন। এমন ঘটনা ওপেন সিক্রেট। সুদিদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদও করে না।কারণ তাদের আবার খুঁটির জোর আছে,নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে এসব খুঁটির জোর টাকার বখরার বিনিময়ে নখদর্পণেই থাকে।
জানা যায়,” কেউ যদি বিপদে পড়ে ঋণ দাতাদের থেকে সুদে টাকা আনে তাকে জামানত হিসেবে ৩ শ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও ব্যাংক এর ব্লাইং চেক ঋণ দাতার কাছে জমা দিতে হয়। এসব ব্যক্তিরা চওড়া সুদে টাকা দিয়ে থাকে। পড়ে ঋণ গ্রহীতা পড়ে যায় বিপদে কারণ সুদের মূল টাকার সাথে অতিরিক্ত হিসেবে হু হু করে বাড়তে থাকে সুদ। এসব ব্যক্তি ঋণ দাতারা লাখে প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ নিয়ে থাকেন।
আবার কেউ কেউ দৈনন্দিন হিসেবেও সুদে টাকা দেয়, যেমন : ১ লাখ টাকায় প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ নিয়ে থাকে।
তবে গভীরের ঘটনা আরও ভয়াবহ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাউদকান্দি পৌরবাজারের প্রায় সকল স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ বন্ধক নিয়েও সুদে ঋণ দিয়ে থাকে, অবশ্য এ ক্ষেত্র ১লাখ টাকায় মাসিক ২ হাজার ৫ শ’ টাকা সুদ দিতে হয় ঋণগ্রহীতাকে।
সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর তথ্য ও অভিযোগ ওঠেছে পৌরসভার গায়েনবাড়ি এলাকার…
বীনা ও রীনার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে এ প্বার্শবতী মেঘনার উপজেলার পুরান বাটেররা সেকান্দর বেপারী নামের একজন।
তিনি অভিযোগ করেন, বীনা ও রিনা তাকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দিবে বলে নগদ ১লাখ টাকা অগ্রীম জামানত নেন ঋণ গ্রহীতা ভুক্তভোগী
সেকান্দর বেপারীর থেকে।
পরে ঋণ আর আর দেওয়া হয়নি তাকে। ভুক্তভোগী জামানতের ১লাখ টাকা চাইতে গেলে উল্টো আরো হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী
দাউদকান্দি মডেল থানায় থানায় অভিযোগ করে এর সুরাহা না পেয়ে আদালতের দারস্থ হোন এই ভুক্তভোগী । এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা জজকোর্টলের আমলি আদালত-৩ এ একটি মামলা চলমান। এদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও রয়েছে দাউদকান্দি মডেল থানায়।
পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সবজিকান্দির বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বরকতউল্লাহ বলেন, রীনা ও বিনাসহ গায়েন বাড়ির কতিপয় দুষ্কৃতকারীর যোগসাজশে এ সুদের ব্যবস্থার নামে মানুষকে হয়রানি ও জিম্মি করে অভিনব কায়দায় টাকা বাগিয়ে নিচ্ছেন।
দাউদকান্দি পৌরসভার মেয়র নাইম ইউসুফ সেইন পৌরসভার বাজেট ঘোষণাকালে এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, সুদ এক ভয়াবহ ব্যাধি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব জটিল ও কঠিন। তবে সুদের এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে দাউদকান্দি পৌরসভাকে মুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসক আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে।
আমরা নানা উদ্যোগে মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করবো।
এই সুদ নামক মারাত্মক বিষয়টি আমাদের বিভিন্ন এলাকায় যে পরিমাণ বেড়েছে। আবার অনেকে সুদ ধার গ্রহণ করে ঋণগ্রস্ত হওয়ায় পরিবার নিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যাচ্ছে এবং কি এসব পরিবারগুলোর ভবিষৎ ধ্বংস হচ্ছে।
এ বিষয়ে সরকার ও স্থানীয় নির্বাহী প্রশাসন ও থানা পুলিশ উদ্যোগ নিলে এ অবস্থা থেকে সমাজ বেঁচে যাবে।তা না হলে সুদের ভয়ংকর থাবা মাদকের চেয়েও বেশি ভয়ংকর দিকে মানুষকে নিয়ে যাবে।