ছাত্রশিবির নেতা হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
এস এম সাখাওয়াত শনিবার সন্ধ্যা ০৭:২৭, ৯ নভেম্বর, ২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রশিবির নেতা মো. আসাদুল্লাহ তুহিনকে হত্যার অভিযোগে ঘটনার ৯ বছর পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের সাবেক ডিজি, সাবেক এমপিসহ র্যাব-পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ও আওয়ামীলীগ নেতাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
এ মামলায় অজ্ঞাত আরো ১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলার আবেদন করেন জেলা শহরের নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি নিহত আসাদুল্লাহ তুহিনের মামা মো. কবিরুল ইসলাম। আর আবেদন গ্রহণ করে উর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি এস এম জাকারিয়া।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরমোহনপুর এলাকার চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নিহত আসাদুল্লাহ তুহিন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।
মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ^াসকে (৫৬)। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী ফটিক (৫৫), জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়ন সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. রুহুল আমিন (৭২), আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এজাবুল হক বুলি (৫১), মো. মাইনুল ইসলাম (৬০), ডা. ইব্রাহিম আলী (৪২), মো. সোহেল (৩১), র্যাবের সাবেক ডিজি বেনজির আহমেদ (৬২), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খাঁন আলমগীর, র্যাব-৫ রাজশাহীর সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর কামরুজ্জামান পাভেল, এস আই বিসারুল ইসলাম, এস আই শহিদুল ইসলাম, হাবিলদার খাইরুল ইসলাম, ল্যান্স কর্পোরাল ওমর ফারুক, নায়েক মো. সওদাগর আলী, মো. মাসুম বিল্লাহ, নুর মুহাম্মদ শিকদার, সিপাহী শফিকুল ইসলাম ও এসআই আবু হুরায়রা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারী সোমবার দুপুর ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে ছাত্র শিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিনকে বাসা থেকে চোখ বেঁধে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। এ সময় তিনি গাড়িতে উঠতে আপত্তি করলে রাইফেলের বাট দিয়ে তাকে বেধরক পিটিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় তারা। এ সময় রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ১টার মধ্যে উল্লেখিত আসমিদের উপস্থিতিতে আ.আ.ম মেসবাউল হক বাচ্চু স্টেডিয়ামে অস্থায়ী র্যাব ক্যাম্পে তুহিনকে বেধড়ক পিটিয়ে তার কাছ থেকে জামায়াত নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় আসামিদের প্রচন্ড মারধরের ফলে আসাদুল্লাহ তুহিন গুরুতর জখম হয়ে মারা যান। এরপর তাকে হত্যা করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভিকটিম তুহিনের মরদেহকে জেলার সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের লালাপাড়া এলাকায় নিয়ে গিয়ে সড়কে মরদেহ ফেলে তার উপর দিয়ে গাড়ি চালানো হয় এবং সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু বলে প্রচার করা হয়। এমনকি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ যেন উদঘাটিত না হয় সেজন্য তৎকালীন বি.এম.এ নেতা ডা. গোলাম রাব্বানী ফটিকের দায়িত্বে হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভয়ভীতি হুমকি দেখিয়ে মরদেহের মনগড়া ও বানোয়াট সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রদাণ করতে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে নিজ বাড়ি থেকে আমার ভাগ্নে আসাদুল্লাহ তুহিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। এরপর আমরা তার কোনো খোঁজ খবর পাইনি। তার পরের দিন একটি মাধ্যমে আমরা খবর পাই যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে তার মরদেহ রাখা আছে। সারাদিনের বিভিন্ন সাজনো নাটক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে সন্ধ্যার পরে তার মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং আমাদের চাপ দিয়ে দ্রæত সময়ের মধ্যে জানাজার ব্যাবস্থা করতে বলা হয়।
নিহতের বাবা মো. ইমামুল হক বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে পরিবেশ অনুকুলে না থাকায় ও নিহতের পরিবারকে নানারকম ভয়ভীতি হুমকি দেয়ার কারনে আমরা কোনো মামলা করতে পারিনি বরং আমাদের জীবনই হুমকির মুখে ছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিদায় হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা সদর মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে মামলা করেছি। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া বলেন, মামলার আবেদন নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা গ্রহণসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।