চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিষ প্রয়োগে পুকুরের ৫০ মণ মাছ নিধণ
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ রবিবার বিকেল ০৫:২৫, ১০ অক্টোবর, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেষপুর গ্রামের একটি পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে ৫০ মণ মাছ নিধন করা হয়েেেছ বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাতের অন্ধকারের কোন এক সময় বিষ দিয়ে এসব মাছ নিধন করা হয়। এতে ৫০ মণ মাছ মারা গেছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা বলে জানান মাছ চাষী। শনিবার (৯ অক্টোবর) সকালে সরজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে বিপুল পরিমাণ মাছ ভাসতে দেখা যায় পুকুরে।
এ বিষয়ে পুকুর মালিক, কর্মরত শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এর আগেও একবার এই পুকুরে মাছ নিধনের জন্য তরল বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে সে সময় ১০ থেকে ১৫ মণ মাছ নিধন হয়। তবে শুক্রবার রাতে বিষ দেয়ার ঘটনায় ৫০ মণ মাছ মারা গেছে।
চাঁপাই-মহেষপুর গ্রামের মৃত আজাহার আলীর ছেলে পুকুর মালিক মজিবুর রহমান বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকেই পুকুর খননের সময় আমার সাথে বিভিন্ন কারণে কয়েক জনের সাথে শত্রুতা তৈরি হয়। এমনকি এখানে মাছ চাষ করতে দেয়া হবে না এবং দেখে নেয়ারো হুমকি দেয়া হয়। এর আগেও একবার বিষ দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তবে সে সময় ১০-১৫ মণ মাছ মারা যায় এবং আরো অন্তত ২০-২৫ মণ মাছের ক্ষতি হয়।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করে পুকুর থেকে এক শ্রমিক ফোন দিয়ে বলে পুকুরে মাছ ভাসতে শুরু করেছে। খবর পেয়ে বিভিন্ন স্যালাইন ও ট্যাবলেট দিয়ে মাছের অক্সিজেন ফেরানোর কাজ শুরু করি। কিন্তু কোনভাবেই অক্সিজেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। এমনকি পুকুরের পাড়ের উত্তর-পশ্চিম কোণে ফেলে যাওয়া তিনটি বিষের প্যাকেট পাওয়া যায়। শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে প্রচুর পরিমাণে মাছ মরেছে।
পুকুরে কর্মরত শ্রমিক মফিজ উদ্দিন জানান, শুক্রবার রাতে যখন থেকে বুঝতে পারলাম যে পুকুরে বিষ দেয়া হয়েছে, তখন থেকে নানারকম প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু পুকুরে নতুন পানি ভর্তি করাসহ বিভিন্ন রকম চেষ্টা করেও মাছ মরা বন্ধ করতে পারিনি। রাতে কিছুটা কম মারা গেলেও সকাল থেকেই প্রচুর পরিমাণে মাছ মরছে। মরা মাছের বেশির ভাগই পোনা এবং সিলভার কাপ। এছাড়াও কাতলা, রুই মৃগেল, মিরর কার্প মাছ রয়েছে। পোনা মাছ থেকে শুরু করে দুই কেজি ওজনের মাছ পর্যন্ত মারা গেছে।
আরেক শ্রমিক আব্দুল খালেক বলেন, রাতে কিছুটা কম হলেও সকাল থেকে প্রচুর পরিমাণে মাছ ভাসতে শুরু করে। সকাল থেকে মাছগুলো নৌকায় করে উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে দিয়েছি। কারণ মরা মাছগুল খাওয়া বা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও পানি মরা মাছের কারণে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত হয়ে যাবে এবং বাকি জীবিত মাছগুলো এতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তাই মাছগুলো মাটির নিচে পুঁতে ফেলছি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষার্থী নিশান আলী ও ইয়াসির আরাফাত জানান, কারো সাথে কারো ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ বা শত্রুতা তৈরি হতেই পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কারণে এমন কাজ সত্যিই অমানবিক। যে বা যারাই করুক কাজটি ঠিক করেনি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত বিচার চাই।
গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. তাসেম আলী এ বিষয়ে জানান, ঘটনাটি শুনেছি। যে বা যারাই পুকুরে বিষ দিয়ে মাছগুলো মেরেছে তারা আর যাই হোক মানুষ হতে পারেনা। এ কাজটা খুবই অমানবিক ও মার্মান্তিক। বিষ দিয়ে মাছ মরার এতো বড় ঘটনা এই এলাকায় এর আগে ঘটেনি কেনাদিনও।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ওবাইদুল হক রোববার জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় থানায় ভূক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সকাল ১১টার দিকে সদর মডেল থানার একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এমনকি অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।