চাঁপাইনবাবগঞ্জে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাপাইনবাবগঞ্জ বুধবার রাত ০৮:২৬, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর করা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের তদন্তকারী দল। মো. তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে নানা অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চৌহদ্দীটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরান আলী।
চলতি বছরের ১৯ আগস্ট প্রথম তদন্তে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগের প্রমান মিললেও ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার দ্বিতীয় দফায় তদন্ত করে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের আরেকটি তদন্ত দল। এইদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করেন ৩ সদস্যের একটি তদন্তকারী দল।
এ বিষয়ে তদন্তকারী দলের অন্যতম তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তাসেম উদ্দীন জানান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মাসে একটি তদন্ত হয়েছিলো। আর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমাও দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু এলাকাবাসী চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বরাবর একই অভিযোগ করলে বুধবার আবারও তদন্তে আসে অপর একটি দল। এছাড়াও এই তদন্ত দলের অন্য দুই সদস্য হলেন, সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আল মামুন ও মো. দুরুল হুদা।
অন্যদিকে, প্রথম তদন্তে প্রধান শিক্ষক কামরান আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর-উন-নাহার রুবিনা। মুঠোফোনে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এর প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন দেখে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
এদিকে বারবার তদন্তকে প্রভাবিত করতে নানা অপচেষ্টা অব্যাহত রাখার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এমনকি বুধবার নিজ ভাইসহ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বিদ্যালয় দখল করেন প্রধান শিক্ষক কামরান আলী। এ সময় যারা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় সন্ত্রাসী বাহিনী। এছাড়া প্রথমবারের তদন্তেও বহিরাগত বখাটে যুবকদের এনে তদন্ত কাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন কামরান আলী। জনমনে প্রশ্ন, তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন ?
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক বলেন, অফিসকে ম্যানেজ করে নিয়েছে প্রধান শিক্ষক কামরান। তাই কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে নিছক আইওয়াশের নামে বারবার তদন্ত করছে শিক্ষা অফিস।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক কামরান আলীর বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সহকারী শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ ও অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক কামরান আলী ও শিক্ষিকা মোর্শেদা পারভীন সীমার বিরুদ্ধে।
এর আগেও ২০১৫ সালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় চৌহদ্দীটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ”প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়” শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়। এসব দুর্নীতির সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে নতুন করে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় লোকজনসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষিকগনের কিছু অংশ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শিশু শ্রেণির উপকরণ সামগ্রী ক্রয় বাবদ ১০ হাজার টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। ভবন সংস্কার ও সাইনবোর্ড স্থাপনের বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে কোন খাতে ব্যয় করেছেন তার হিসাব নেই। এছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার খেয়াল খুশিমতো কাজ করছেন। এমনকি তিনি তার মর্জিমতো স্কুলে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া জাতীয় দিবস, মা সমাবেশের বরাদ্দ ও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার বরাদ্দের টাকাও আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, চলতি বছরের ৬ জুলাই জামায়াত নেতা মুনজুর ইসলামকে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য তৈরি করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেন প্রধান শিক্ষক কামরান। এমনকি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-২ শাখার প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন পদ্ধতিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। কমিটি গঠন পদ্ধতিতে শিক্ষক প্রতিনিধি, জমিদাতা সদস্য, অভিভাবক (পুরুষ) ও অভিভাবক (নারী) নেই। এছাড়া সদস্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি লটারির মাধ্যমে অসদ উপায় অবলম্বন করে সদস্য নির্বাচিত করার চেষ্টা করেন এবং মনোনয়নপত্র বিক্রয়কৃত টাকাও আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করায়, যেখানে পাবে খুন করবে বলে হুমকি দেওয়ায়, প্রধান শিক্ষক কামরান আলী এবং তার ভাই আলী ও মো. মোতালেব হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন জমিদাতার ছেলে মো. ইমরুল কায়েস।
তবে এসব অভিযোগের কথা অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক কামরান আলী বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে যার কোন ভিত্তিই নেই।