চাঁপাইনবাবগঞ্জে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের যোগ সাজশে সরকারি গাছ বিক্রয়
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বুধবার সন্ধ্যা ০৭:২১, ২০ অক্টোবর, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের সরজন জোড় পাইকড়তলা মোড়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র সরকারি গাছ বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও একজন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। ওই মোড়ের ৩টি কড়াই গাছের কাঠ ও খড়ি বিক্রি করেছেন তারা। গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়ার নির্দেশে ১নং ওয়ার্ড সদস্য মশিউর রহমান সান্তাজুল এসব গাছের কাঠ ও খড়ি বিক্রি করেছেন বলে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। আর ঘটনা জানতে পেরে ইতোমধ্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শণ করে রাস্তার ধারের গাছগুলোর মালিকানা বিএমডিএ’র আওতাধীন বলে নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ১০ দিন আগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে গাছগুলো কেটে রেখে যায়। এরপর রাস্তার ধারেই পড়েছিল গাছের ডালপালাগুলো। পরে চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে ইউপি সদস্য মশিউর রহমান সান্তাজুল সেগুলো বিক্রি করেন। স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ গরিবুল্লাহ বলেন, কয়েকদিন আগে সরকারি কারেন্টের লোকজন (বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা) গাছগুলো এসে কেটেছে। শুনলাম কারেন্টের তারের নাকি অসুবিধা হচ্ছিলো তাই কেটেছে। কিন্তু তারা সরকারী লোক হলেও কয়েকদিন পড়ে থাকা কাটা গাছগুলো নিয়ে যায়নি। আর গত সোমবার (১৮ অক্টোবর) থেকে শ্রমিকরা গাছগুলো কাটা শুরু করেছে এবং গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, তারা নাকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছ থেকে গাছগুলো কিনে নিয়েছে।
এ বিষয়ে কাঠ ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রায় ৪ দশকের বেশি বয়সের ৩টি কড়াই গাছের মোটা ডাল ও খড়ির বাজার মূল্য অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু পানির দামে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকায় গাছের কাঠ ও খড়ি কিনে নিয়েছেন একই ইউনিয়নের সরজন গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী কবির আলী। আর বিএমডিএ’র কোনরকম অনুমতি বা যোগাযোগ ছাড়াই এসব কাঠ ও খড়ি বিক্রি করেছেন ইউপি সদস্য।
ইউপি সদস্যের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা বায়না (প্রাথমিক জামানত) দিয়ে গাছগুলো উঠিয়ে নিয়ে যাবার কাজ শুরু করেছিলেন কবির আলী। তিনি বলেন, কার গাছ বা গাছের মালিককে এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন গাছগুলো কেটে রেখে যাবার পর গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়ার সাথে কথা বলে মশিউর রহমান মেম্বার আমার কাছে কাটা গাছ বিক্রি করেছে। প্রথম দিনে একটি গাছের ৪৪ মণ খড়ি পাঠিয়েছি। আর বাকি খড়ি ও কাঠ পড়ে আছে। যা আজকে নিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে কবির আলীর নিয়োজিত এক শ্রমিক জানান, প্রথম দিন বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের উপস্থিতিতে গাছগুলো আমরাই কেটেছিলাম। পরে কয়েকদিন পড়ে থাকার পর মেম্বার-চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমাদের মহাজন গাছগুলো কিনে নিয়েছে। রাস্তার ধারের গাছগুলো কার এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, গাছগুলো সরকারি, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বারের থেকে কিনে নিয়েই কাটা গাছগুলো উঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান সান্তাজুল জানান, আমি সরকারি লোক। সরকারি গাছ কেটেছি। যার যা ইচ্ছে করবে। চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেই গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
আর ইউপি চেয়ারম্যান আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়া বলেন, বিএমডিএ’র গাছগুলো আমরা বিক্রি করেছি। সেখান থেকে যা অর্থ আসবে ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে জমা করা হবে। বিএমডিএ’র অনুমোদন নিয়ে বিক্রি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি গাছ বিক্রি করেছি। এতে আমার নামে মামলা হলে সেখানে মোকাবেলা করবো।
এদিকে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী আবু শাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিশ্চিত হয়েছি গাছগুলো বিএমডিএ-এর। বৈদ্যুতিক তার সংযোগ দেয়ার জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ না করে বা কোন অনুমতি ছাড়াই পড়ে থাকা গাছগুলো বিক্রি করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।