ঢাকা (রাত ১০:৫৯) সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

Join Bangladesh Navy


ঘটছে প্রাণহানীর মতো মর্মান্তিক ঘটনার পরও রাণীনগরে দাপিয়ে চলছে মাটিবাহী ট্রাক্টার

রানীনগরে দাপিয়ে চলছে প্রায় দুই শতাধিক মাটিবাহী ট্রাক।
রানীনগরে দাপিয়ে চলছে প্রায় দুই শতাধিক মাটিবাহী ট্রাক।

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock বৃহস্পতিবার বিকেল ০৪:৪০, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯

আবু ইউসুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে চলতি ইট কাটার মৌসুমে কৃষি জমি হতে মাটি কেটে সড়ক পথে বিভিন্ন ইট ভাটায় চুক্তি ভিত্তিক মাটি
পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাণীনগর-আত্রাই সড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীন সড়কে দিন রাত ২৪ ঘন্টা অবাধে দাপিয়ে চলছে প্রায় দুই শতাধিক মাটিবাহী ট্রাক্টার।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর স্থানীয় প্রশাসনের জোড়ালো পদক্ষেপের অভাবে অধিকাংশ মাটি বাহী ট্রাক্টার চালকরা বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে মাঝে
মধ্যে ঘটে চলেছে ছোট-বড় দূর্ঘটনাসহ প্রাণহানীর মতো মর্মান্তিক ঘটনা।

ট্রাক্টারের ধাক্কায় গত দুই বছরে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েক জন নিহত হলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শুধুমাত্র
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে নানা চাপে ফেলে কিছু টাকা দিয়ে মিমাংসার প্রবণতাও দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রাক্টার চালক ও মালিকরা আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে
বিরামহীন ভাবে অবৈধ ট্রাক্টার সড়ক পথে চালিয়ে যাচ্ছে।

লাভজনক ব্যবসা হওয়ার কারণে একজনের দেখাদেখি আরেক জনও ট্রাক্টার ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়ছে। অবৈধ ট্রাক্টারের বিরুদ্ধে পুলিশী ব্যবস্থা জোরদার করে নিরাপদে সড়কে চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা
মিটিংয়ে অবৈধ টাক্টার চলাচলের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। প্রশাসন বলছে খুব শীঘ্রয় সড়ক ও পরিবহন আইন কার্যকর করতে অবৈধ যানবাহনসহ বৈধ
কাগজপত্র নেই এমন পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।

সম্প্রতি কিছুদিন আগেই রাণীনগর-আত্রাই সড়ক মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ করা হলেও অতিরিক্ত মাটি বোঝায় ট্রাক্টার চলাচলের কারণে এই সড়কটি আবারও খানা-খন্দ
হতে শুরু করেছে। ট্রাক্টারের আঘাত থেকে রেহায় পাচ্ছেনা গ্রামীন জনপদের অধ্যন্তরীন পাকা সড়ক ও মেঠো পথগুলো। স্থানীয় জনসাধারণ এই সমস্ত সড়ক দিয়ে
পায়ে হেঁটে যেতেও ট্রাক্টার আতংক নিয়ে চলতে হয়।

রাণীনগর সদরের উপজেলা বাসট্যান্ড, বিজয়ের মোড়, রেলগেট, উপজেলা প্রশাসনের সামনের সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কে পিছু ছাড়ছে না যানজট আর ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।
এলাকার সাধারণ মানুষ বলছে, রাণীনগর থানাপুলিশ প্রায় প্রতিদিনই তাল্লশির নামে চেকপোষ্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র না থাকলে আইনগত
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও পথচারি ও বৈধ যানবাহন চালকদের আতঙ্ক, অবৈধ এই ট্রাক্টার চালকদের। পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা
গ্রহণ করেনা। এমনকি পুলিশের অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের ছোঁয়া ট্রাক্টর চালক-মালিকদের কাছে পৌছায় না। উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ
চেকপোষ্ট বসিয়ে শুধুমাত্র মটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকে।
সে ক্ষেত্রেও পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে মটরসাইকেল চালকদের নানা হয়রানির অভিযোগ।

বেশি লাভের আশায় ট্রাক্টার মালিক পক্ষ স্বল্প বেতনে অপ্রাপ্ত বয়সের চালককে দিয়ে ট্রাক্টার চালানোর ফলে সড়কে চলাচলরত স্কুলগামী কমলমতি ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন
শ্রেণী পেশার মানুষ মাঝে মধ্যে ট্রাক্টারের চাপায় আহত ও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। চালকদের পেশাগত কোন প্রশিক্ষণ না থাকায় ভ্যান চালক হেলপাররাই ট্রাক্টার
মালিকদের ভরসা। যে চালক যত বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়ে ইট ভাটায় বেশি মাটি পৌঁছে দিতে পারবে সেই চালককে মালিকরা বেশি পছন্দ করে। পাল্লা দিয়ে
গাড়ি চালানোর কারণে বিকট শব্দে শব্দ দূষর্ণে শিশুদেরকে নিয়ে সড়কে হাটা-চলা করতে মারাতœক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। এই রকম প্রতিযোগীতায় পৃষ্ট
হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও ছোট-খাটো যানবাহন।

অতিরিক্ত মাটি বহন করার কারণে সড়কে চলার পথে ঝাকুনি খেয়ে মাটি পড়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই পাকা সড়কগুলো চলাচলের অনুপযুগী হয়ে পড়ে। এছাড়াও
রাণীনগর উপজেলায় অবাধে চলছে পাওয়ার ট্রেলার দিয়ে তৈরি অবৈধ ট্রলি গাড়ি।

এক্ষেত্রেও মালিক পক্ষ অপ্রাপ্ত ছেলেদের দিয়ে মূল সড়কে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ধরণের গাড়ি গুলো উপজেলার ছ-মিলের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছের গুল ও কাঠ-
খড়ি বহন করে। চালকদের বেপরোয়া চালানোর গতি এত বেশি হয় যে, মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না! এ যেন মগের মল্লুক!

উল্লেখ্য, গত চার বছর ধরে হঠাৎ করে রাণীনগর উপজেলায় ফসলি জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে ভূমি আইন কে বৃদ্ধাঙ্গল দেখিয়ে ও জমির মালিকদের লোভনীয়
অফারের ফাঁদে ফলে এক শ্রেণীর মাটি, ইট ও পুকুর খনন ব্যবসায়ীরা এই পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার বিঘা বিভিন্ন ফসলী জমি পুকুরে পরিণিত করেছে।

রাণীনগর ট্রাক্টর গরুপের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, আমাদের মালিক সমিতির আওতায় প্রায় দেড় শতাধিক
ট্রাক্টার আছে। এছাড়াও বাহির এলাকা থেকে প্রায় ৫০ টির মতো ট্রাক্টার এসে কাজ করছে। নতুন সড়ক আইন কার্যকরী করার লক্ষে ইতি মধ্যে আমরা বৈঠক করেছি।
চালক এবং মালিক পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রকৃত চালক ছাড়া কেউ আর ট্রাক্টার চালাতে পারবেনা। সড়কের শৃঙ্খলা ফিরাতে আমরা যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ জহুরুল হক জানান, ট্রাক্টার গুলো অবাধ চলাচলের কারণে সদরে এক দিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের অন্য দিকে ছোট-খাটো
দুর্ঘটনা লেগেই আছে। শীঘ্রই অবৈধ এই যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।

 




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT