গৌরীপুরে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় শালীহর গণহত্যা দিবস
ওবায়দুর রহমান মঙ্গলবার দুপুর ০৩:৪১, ২২ আগস্ট, ২০২৩
১৯৭১ সালের ২১ আগষ্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পাক হানাদারবাহিনী ১৪জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর থেকেই প্রতিবছর ২১ আগষ্ট স্থানীয়ভাবে ‘শালীহর গণহত্যা’ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
সোমবার শালীহর বদ্ধভ‚মিতে দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদ, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে মোমবাতি প্রজ্¦লন, শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের হাতে নতুন কাপড় ও আর্থিক অনুদান প্রদানের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় দিবসটি পালন করা হয়।
সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) আফরোজা আফসানার সভাপতিত্বে ও এসো গৌরীপুর গড়ি’র প্রধান সমন্বয়ক আবু কাউছার চৌধুরী রন্টির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শহীদ পরিবারের সন্তান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট নিলুফার আনজুম পপি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ রহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্যবৃন্দ, এসো গৌরীপুর গড়ি’র নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিল।
আলোচনা সভা শেষে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নতুন কাপড় ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন শহীদ ছাবেদ হোসেন ব্যাপারীর নাতিনী নিলুফার আনজুম পপি।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী একটি বিশেষ ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পড়ে। পরে তৎকালীন বিসকা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সলিম উদ্দিন (অবাঙালি) নেতৃত্বে শালীহর গ্রামে ঢুকে বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তান্ডব চালায়। গুলি করে হত্যা করে ১ জন মুসলমান ও ১৩ জন হিন্দুকে।
পাক বাহিনীর ভয়ে সেদিন হিন্দু পরিবারের সদস্যরা মরদেহ প্রথাগতভাবে সৎকার করতে না পেরে মাটি চাপা দিয়েছিল।
সেদিন পাক বাহিনী গ্রামে ঢুকে প্রথমেই হত্যা করে কৃষক নবর আলীকে। এরপর একে মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদাসুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনী কান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, খৈলান চন্দ্র নম দাস, শত্রুগ্ননম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায়চরণ বিশ্বাসকে। সেদিন পাকবাহিনীর বন্দুকের মুখ থেকে কালেমা পাঠ করে বেঁচে যান নগেন্দ্র চৌকিদার। তবে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায় গ্রামের বাসিন্দা ছাবেদ হোসেন বেপারী ও মধু সূধন ধরকে, যাদের খোঁজ এই ৫২ বছরেও পাওয়া যায়নি।