গৌরীপুরে ভক্তদের কাঁদিয়ে দূর্গা মা’র বিসর্জন
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ সোমবার বিকেল ০৫:৩৮, ২৬ অক্টোবর, ২০২০
সনাতন ধর্মমতে, মানুষের দেহ- আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি এই পাঁচ উপাদান দিয়ে তৈরি তেমনি প্রতিমার ক্ষেত্রেও তাই। মাটির প্রাণহীন মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলে সেটি প্রতিমা হয়। আর পুজা শেষে দেবীকে বিদায়ের পর সেই প্রতিমাটি আবার প্রাণহীন মূর্তিতে পরিণত হয়। আর তাই তাকে আবার পঞ্চতত্তে¡র একটি, সেই জলেই বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা পূজার সর্বশেষ ধাপ হল বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়। সেই জন্যই গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয়, যে নিরাকার ঈশ্বর রয়েছেন, উপসনার জন্য মাটির প্রতিমা তৈরি করে তাকে সাকার রূপ দেওয়া হয়। পূজোর শেষে পুনরায় সেই সাকার রূপকে বিসর্জন দিয়ে নিরাকার ঈশ্বরকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া হয়। সেই কারণেই দুর্গা পূজার সময় যখন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় তখন প্রার্থনা করা হয়, ‘তুমি আবার এসো আমাদের মাঝে’। এই রীতি মেনেই বিজয়া দশমীর পূজার মধ্যদিয়ে (২৬ অক্টোবর) সোমবার শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হাজারো ভক্তকে কাঁদিয়ে মা দূর্গা দেবী এক বছরের জন্য বিদায় নিয়েছেন মর্ত্য থেকে। এবার বিধি নিষেধ থাকায় বিগত বছরের মতো বিজয়ার শোভাযাত্রা হয়নি। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে দশমী বিহিত পূজার লগ্ন শুরু হয়। পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যদিয়ে পূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। পরে স্বামীদের কল্যানে দেবীর চরণে ছোঁয়া সিঁদুর দিয়ে বধুদের সিঁদুর খেলা শেষে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে হাজারো ভক্তদের কাঁদিয়ে ৫৭টি মন্দিরের দূর্গা দেবীর প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। পৌর সভার ১৭টি মন্দিরের দূর্গা প্রতিমা স্থানীয় আরকে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক অনন্ত সাগর দীঘিতে বিসর্জন দেয়া হয়। অন্যান্য ১০টি ইউনিয়নের প্রতিমা নিকটবর্তী বিভিন্ন জলাধারে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্যদিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়, গিয়েছেন গজে চড়ে। এর মধ্যদিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরে গেছেন। এক্ষেত্রে যদিও করোনা মহামারির সংক্রমণ এড়াতে এ বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। বেশকিছু বিধিনিষেধের কারনে মন্ডপে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেয়া হয় পূজামন্ডপ। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। পূজার সময় বেশিরভাগ ভক্ত এবার দেবীর পায়ে অঞ্জলি দিতেও মন্ডপে আসেনি। পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এ জন্যই বিজয়া দশমী। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলি। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার কোলাকুলি করা হয়নি।