গৌরীপুরের মেয়র প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা ,আটক-৪
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ রবিবার রাত ১১:১১, ১৮ অক্টোবর, ২০২০
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্রকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরও দুজনকে কুপিয়ে আহত করে। শনিবার (১৭ অক্টোবর) রাত ১০টা ১০ মিনিটে পৌর শহরের পানমহালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শুভ্র পৌরসভার কালীপুর এলাকার বাসিন্দা। প্রত্যক্ষদর্শী ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে শামীম আহাম্মেদ (৩৭) জানান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ১নং মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পানমহালের আবদুর রহিমের চায়ের দোকানে মাসুদুর রহমান শুভ্রসহ ৪-৫ জন চা খাচ্ছিলেন। এ সময় দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ৮-১০ জন নেমে হঠাৎ তাকে কোপ দেয়। তিনি সরে যাওয়ায় চায়ের দোকানের খুঁটির বাঁশ কেটে গেছে। পরে চিৎকার দিলে দুজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। অন্যরা মাসুদুর রহমান শুভ্রর ওপর আক্রমণ চালায়। শুভ্র বাঁচার জন্য দৌড়ে মসল্লামহালের মিতালি ফার্মেসীর সামনে যেতেই তাকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। শুভ্রর সঙ্গে থাকা আল আমিন ও জাহাঙ্গীরকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানান, আহত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুভ্রর শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ডাঃ অশেষ কুমার রায় জানান, শুভ্রকে গুরুতর অবস্থায় আনা হয় মেডিকেলে পরে তাকে ওয়ার্ডে দেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখের হোসেন সিদ্দিকী ও গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রবিবার (১৮ অক্টোবর) ময়মনসিংহের এসপি আহমারুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাতেই আর্মড পুলিশ, র্যাব মোতায়েন করা হয়। পরে এ হত্যাকান্ডের তদন্ত শুরু করে পিবিআই ও ডিবি পুলিশ।
এদিকে শুভ্র গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করায় দলীয় প্রতিপক্ষের সহায়তায় বিএনপি নেতা রিয়াদের নেতৃত্বে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ নেতাকর্মী ও স্বজনদের। এছারা গত বছর জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রিয়াদের সঙ্গে শুভ্রর ঝামেলা হয়। সেই আক্রোশের জের ধরেও এ হামলা হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
মিতালি ফার্মেসীর মালিক নৃপেন্দ্র বিশ্বাস জানান, শুভ্রকে তাড়া করে দুদিক থেকে তিনজন আসে। শুভ্র দোকানে এসে পড়ে যায়। গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মাসুদুর রহমান শুভ্র মৃত্যুবরণ করেন। অন্য দুজন সেখানেই চিকিৎসাধীন।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় মইলাকান্দা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি’র উপজেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক রিয়াদুজ্জামান রিয়াদকে তারাকান্দা উপজেলার গাছতলা বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং জাহাঙ্গীর, মুজিবুর ও রাসেলকে আটক করা হয় এ উপজেলার কাউরাট বাজার থেকে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এ ঘটনার জেরে শুভ্র’র অনুসারী ও বিক্ষুব্ধ জনতা আটককৃত বিএনপি’র চেয়ারম্যান রিয়াদের উত্তরবাজারস্থ বাসা ও বালুয়াপাড়া তার শ্বশুড়ের বাসায় ভাংচুর করে ও টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয় এবং গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বাসাও ভাংচুর করে, অগ্নিসংযোগ করে ও গাড়ী পুড়িয়ে দেয়। পরে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভায়।
হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে পৌর শহরে কয়েক দফায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রক্রিয়া চলমান।
বিকাল ৪.৩০ মিনিটে নিহতের জানাযার নামাজ শেষে পৌর গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।